উপসম্পাদকীয়

কোন পথে লিবিয়ার ভবিষ্যত : শান্তি চুক্তি কি স্থায়ী হবে নাকি আবার অন্তহীন যুদ্ধের দিকে গড়াবে দেশের ভবিষ্যৎ

আব্দুস সালাম, টিডিএন বাংলা : জাতিসংঘ সমর্থিত লিবিয়ার সরকারের সঙ্গে বিদ্রোহী খলিফা হাফতারের বাহিনীর দীর্ঘ দিন ধরে গৃহযুদ্ধ চলছে। এই গৃহযুদ্ধে রাশিয়া, ফ্রান্সের মত দেশগুলি বিদ্রোহী হাফতার বাহিনীর পক্ষে অবস্থান নিলে লিবিয়া সরকার কোনঠাসা হয়ে পড়ে। হাফতার বাহিনী একের পর এক শহর দখল করতে শুরু করে। এমনকি তারা রাজধানী দখলের ঘোষণা দিয়ে রাজধানী ত্রিপোল অভিমুখে যাত্রা শুরু করে। এই কঠিন পরিস্তিতিতে লিবিয়া সরকারের পাশে দাঁড়ায় তুরস্ক। স্বাভাবিক ভাবেই এই গৃহযুদ্ধ আন্তর্জাতিক রূপ ধারণ করে।

লিবিয়া সরকারকে সমস্ত রকমের অস্ত্র,প্রযুক্তি ও বৌদ্ধিক সহযোগিতা করতে থাকে তুরস্ক। অন্য দিকে বিদ্রোহী খলিফা হাফতারের বাহিনী কে অস্ত্র,প্রযুক্তি ও বৌদ্ধিক সহযোগিতা করতে থাকে রাশিয়া, ফ্রান্স প্রভৃতি দেশ। তুরস্ক যেহেতু জাতিসংঘ স্বীকৃত লিবিয় সরকারের পক্ষ নিয়েছে তাই স্বাভাবিক ভাবেই তারা বিশ্ব দরবারে তুলনামূলক ভালো অবস্থানে আছে। তুরস্ক সরকার তাদের অবস্থানের পক্ষে বলেছে ,’ তারা সমস্ত রকমের বিশেষত সামরিক অভ্যুত্থানের বিরোধী কারণ এতে জনগণের অধিকার বিনষ্ট হয়। অভ্যুত্থানের পর সাধারণ ভাবে স্বৈরাচারী শাসকরাই ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখে।’ অন্য দিকে হাফতার ও তাদের সমর্থক রাষ্ট্রগুলি লিবিয় সরকারকে স্বৈরাচারী ও বেআইনি আক্ষা দিয়েছে।

দীর্ঘদিন ধরে চলা এই যুদ্ধ কেড়ে নিয়েছে অগণিত লিবিয়াবাসির প্রাণ। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশের সমাজ,অর্থনীতি, রাষ্ট্রীয় কাঠামো। উভয় পক্ষের যুদ্ধে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এতই বেশি যে পরিমাপ করা অসম্ভব।লক্ষ লক্ষ পরিবার ঘরবাড়ি হারিয়ে আজ উদ্বাস্তুতে পরিণত হয়েছে। চাষাবাদ, ব‍্যবসা- বাণিজ্য চরম ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এক কথায় অর্থনৈতিক পরিকাঠামো একেবারে ভেঙে পড়েছে। এক মুঠো খাদ‍্যের অভাবে প্রতিদিন ঝরে পড়ছে অগণিত প্রাণ। অপুষ্টিতে ভুগছে অধিকাংশ লিবিয় শিশু। এই অমানবিক ধ্বংসযজ্ঞ থেকে বাদ পড়েনি হাসপাতাল গুলিও । চিকিৎসা ব‍্যবস্থার দৈন‍্য দশার জন‍্য চিকিৎসার অভাবে প্রতিদিন ঝরে পড়ছে অগণিত প্রাণ। যোগাযোগ ব‍্যবস্থারও বেহাল অবস্থা। বহু মানুষ বাঁচার আশায় প্রিয় জন্মভূমি ছেড়ে পাড়ি দিয়েছে বিদেশে আজানা ভবিষ‍্যতের দিকে।

তবে আশার কথা হচ্ছে তুরস্কের মদতে জাতিসংঘ সমর্থিত লিবিয়া সরকার বিদ্রোহী হাফতার বাহিনীর কাছ থেকে একে একে বহু শহর দখল করে কোনঠাসা করে ফেলায় তারা আপাতত লিবিয় সরকারের সঙ্গে শান্তি চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছে। অভিযোগ তাদের দোষর রাশিয়ান বাহিনী লিবিয়া ছেড়ে গিয়েছে, তবে তার আগে তারা লিবিয়াবাসির জন‍্য পেতে গিয়েছে মরণফাঁদ। বাড়িতে, উঠানে, খেলার মাঠে,খেলনার পুতুলে,এমনকি খালি কোল্ড্রিংসের ক‍্যানের মধ‍্যেও পেতেছে মাইন বোমা। মাইন বোমার ভয়ে ঘরে ফিরতে পারছেনা অনেকেই।

মাইন অপসারণ বিশেষজ্ঞ মুহাম্মাদ জ‍্যালাটেনি বলেন,” তারাই এই ধ্বংসযজ্ঞের জন্য দায়ী যারা গৃহযুদ্ধের সময় রাশিয়ার সমর্থন পেয়েছে। যদি বাইরে থেকে কোনো সমর্থন না পাওয়া যেত তবে এসবের কিছুই ঘটতো না। আমরা লিবিয়ানরা এখন তাদের কারণে পস্তাচ্ছি।” মাইন অপসারণ বিশেষজ্ঞরা দেশকে মাইনের মৃত্যু ফাঁদ থেকে বাঁচাতে সারা দেশ জুড়ে মাইন অপসারণের কাজে নেমে পড়েছে।

লিবিয়ার ঐক্য সরকারের প্রধানমন্ত্রী আব্দুল হামিদ ২০২১ সালের মার্চ মাসে শপথ গ্রহণ করেন। আগের সরকারের সঙ্গে তুরস্কের গভীর সম্পর্ক থাকলেও বর্তমান সরকারের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক খুব একটা সুখকর হবে না। বিভিন্ন বিষয়ে তাদের মধ্যে মতবিরোধ আছে। তাছাড়া বর্তমান সরকার দেশের অভ‍্যন্তরে কোনো রকম বিদেশী শক্তির অবস্থান মেনে নিতে নারাজ। দফায় দফায় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে বর্তমান সরকার ও তুরস্ক সরকারের মধ্যে।

স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠছে লিবিয়ায় কি শান্তি স্থাপিত হবে। নাকি আবার শুরু হবে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। এই সরকার কতদিন স্থায়ী হবে তা নিয়েও অনিশ্চয়তা আছে। বর্তমান সরকারের প্রধান তিনটি চ‍্যালেঞ্জ হল যুদ্ধের পথ বন্ধ করা। যুদ্ধ পরবর্তী ধ্বংসপ্রায় রাষ্ট্রীয় পরিকাঠামো ও যোগাযোগ ব‍্যবস্থার পুনর্গঠন করা এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন।

Related Articles

Back to top button
error: