প্রতি ৩৩ ঘণ্টায় অসহায় হচ্ছে ১০ লাখ মানুষ! অন্যদিকে ৩০ ঘণ্টায় ১০০ কোটির মালিকও হচ্ছেন

টিডিএন বাংলা ডেস্ক: করোনা মহামারীর কারণে চরম অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন বিশ্বের সাধারণ মানুষ। অবস্থা এতটাই করুন যে, প্রতি ৩৩ ঘণ্টায় বিশ্বে চরম ভাবে নিঃস্ব হয়ে একেবারে অসহায় হয়ে পড়ছেন প্রায় ১০ লাখ মানুষ। যারা দুই বেলা দুই মুঠো খাদ্যও জোগাড় করতে পারছেন না। নেই বসবাসের মত সামান্য ঠাই টুকুও। অন্যদিকে সেই একই বিশ্বে বাস করেও প্রতি প্রায় ৩০ ঘণ্টায় ১০০ কোটি টাকার গণ্ডি পার করছেন ১ জন বিলিয়নিয়ার। এই তথ্য উঠে এসেছে অক্সফাম ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থার রিপোর্টে। সুইজারল্যান্ডের দাভোসে ২২ মে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের বার্ষিক সম্মেলন শুরু হয়। সেই সম্মেলন উপলক্ষেই অক্সফাম এ তথ্য প্রকাশ করেছে। এই সম্মেলন ২৬ মে পর্যন্ত সম্মেলন চলবে।

অক্সফাম ইন্টারন্যাশনাল-এর তরফে প্রতি বছরই বিভিন্ন দেশের আর্থসামাজিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে প্রকাশ করা হয় এই রিপোর্টকার্ড। এই বছর তারা যে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে সেই রিপোর্ট অনুযায়ী গোটা পৃথিবীতেই দারিদ্র্যের মাত্রা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর কারণগুলি কী কী? কোন কোন শ্রেণির ক্ষেত্রে সমস্যা বেশি? এই সব প্রশ্নেরও উত্তর আছে সেই রিপোর্টে। এই রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে চলতি বছরে পৃথিবীতে নতুন করে ২৬ কোটি ৩০ লক্ষের বেশি মানুষ চরম দারিদ্রের মধ্যে পড়বে। এর প্রধান কারণ হিসাবে করোনাকালের সংকট, উপার্জনের বৈষম্য, খাবারের মূল্যবৃদ্ধি প্রভৃতিকে উল্লেখ করা হয়েছে। বিশ্বজুড়ে মূল্যস্ফীতি বাড়ছে। এ কারণে বাড়ছে জীবনযাত্রার ব্যয়। এ সংকটের কথা উল্লেখ করে অক্সফাম বিপরীত চিত্রও তুলে ধরেছে। তাদের হিসাব অনুযায়ী কোভিড অতিমারির মধ্যেই পৃথিবীতে নতুন করে ৫৭৩ জন ব্যক্তি বিলিয়নিয়ার বা শত কোটি ডলারের মালিক হয়েছেন। পাশাপাশি লিঙ্গবৈষম্যের কথাও বলা হয়েছে ওই রিপোর্টে। করোনার কারণে পুরুষদের থেকে মহিলারা বেশি পরিমাণে কাজ হারিয়েছেন। এমনই বলা হয়েছে রিপোর্টে। উল্লেখ করা হয়েছে কোভিডের আগের পরিসংখ্যান বলছিল, নারী এবং পুরুষের আয়ের ব্যবধান মিটতে ১০০ বছর মতো লাগবে। সেখানে কোভিডের পরবর্তী সময়ের পরিসংখ্যান বলছে, ১৩৬ বছর লেগে যাবে সেটি মিটতে।

অক্সফামের নির্বাহী পরিচালক গ্যাব্রিয়েলা বুচার এক বিবৃতিতে বলেন, ‘বিলিয়নিয়াররা তাদের ভাগ্যের অবিশ্বাস্য উন্নতি উদযাপন করতে দাভোসে আসছেন। সহজ ভাষায় বলতে গেলে, করোনা মহামারী ও বর্তমানে খাদ্য-জ্বালানির অত্যধিক মূল্যবৃদ্ধি তাদের জন্য আশীর্বাদ হয়েছে। অন্যদিকে, কয়েক দশকে চরম দারিদ্র্য দূরীকরণে যে অগ্রগতি হয়েছে, তার গতি এখন বিপরীতমুখী। বিশ্বের বিপুলসংখ্যক মানুষ অসহনীয় মূল্যবৃদ্ধির মুখে পড়েছে। টিকে থাকার জন্য তাদের লড়তে হচ্ছে।’ সংস্থাটির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, সংকট পুঁজি করে মুনাফা করার প্রবণতা বন্ধের এখনই সময়। মহামারীর সুবাদে যারা বিলিয়নিয়ার হয়েছে, তাদের ওপর সংহতি কর আরোপ করতে হবে। কোটিপতিদের সম্পদের ওপর বার্ষিক ২ শতাংশ ও শতকোটিপতিদের সম্পদের ওপর বার্ষিক ৫ শতাংশ করারোপ করা হলে এক বছরে ২ দশমিক ৫২ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থ সংগ্রহ করা যাবে। আর সেই অর্থ বিশ্বের ২৩০ কোটি মানুষের দারিদ্র্য দূরীকরণ, পর্যাপ্ত টিকা তৈরি ও দরিদ্র দেশগুলোর মানুষের সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা করা সম্ভব।