HighlightNewsআন্তর্জাতিক

বেসামরিক এলাকায় ইসরাইলের ভয়াবহ হামলায় গাজায় প্রায় ৩ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত, ভয়ঙ্কর রিপোর্ট জাতিসংঘের 

টিডিএন বাংলা ডেস্ক: ইসরায়েলের মুহুর্মুহু বিমান ও বোমা হামলায় কেঁপে উঠছে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা। বেসামরিক এলাকায় এই ভয়াবহ হামলার ফলে সব থেকে বেশি নিহত হচ্ছে সাধারণ নিরাপরাধ নারী ও শিশুরা। বোমা হামলায় ভেঙে গুঁড়িয়ে যাচ্ছে একের পর এক বহুতল ভবন। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া লোমহর্ষক ভিডিও গুলো দেখে পুরো গাজাকে যেন মনে হচ্ছে ধ্বংসস্তূপ। যেন জনপদের কোনো চিহ্ন রাখতে নারাজ ইসরাইলি সরকার। জাতিসংঘের দেওয়া একটি তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলের হামলায় গাজায় বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন প্রায় ২ লাখ ৬৪ হাজার মানুষ। জাতিসংঘের মানবিক সহায়তাবিষয়ক সংস্থা ওসিএইচএ গতকাল মঙ্গলবার জানিয়েছে, গাজায় ২ লাখ ৬৩ হাজার ৯৩৪ জন বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। তবে এই সংখ্যাই চূড়ান্ত নয়, সংখ্যাটা আরও বাড়তে পারে বলেও আশঙ্কা করা হয়েছে।

ওই রিপোর্টে আরও জানানো হয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় গাজায় এক হাজারের বেশি বাড়িঘর ধ্বংস হয়েছে। এর মধ্যে অন্তত ৫৬০টি বাড়ি এতটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যে সেখানে আর বসবাস করার উপায় নেই। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে ওসিএইচএ। সংস্থাটির রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, বাস্তুচ্যুত প্রায় ১ লাখ ৭৫ হাজার ৫০০ মানুষ আক্রমণ শুরু হওয়ার পরপরই ঘরবাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে আসে এবং বর্তমানে গাজায় জাতিসংঘ পরিচালিত আশ্রয়শিবিরগুলোতে উঠেছেন। সেখানকার ৮৮টি বিদ্যালয়ে এসব শিবির খোলা হয়েছে। ৭৪ হাজারের মতো মানুষ নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। এছাড়াও অনেকে বিভিন্ন উপাসনালয়ে আশ্রয় নিয়েছেন।

এখানেই থেমে থাকেনি ইসরাইলের জুলুম নির্যাতনের বাহার। পাশাপাশি তারা হামলা থেকে বেঁচে যাওয়া ফিলিস্তিনিদের ধুঁকে ধুঁকে মরার সম্পূর্ণ ব্যবস্থাও করেছে। যুদ্ধ শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তারা ফিলিস্তিনে সমস্ত ধরনের খাদ্য, পানীয় জল, দৈনন্দিন ব্যবহারের সামগ্ৰী, বিদ্যুৎ সব কিছু বন্ধ করে দিয়েছে। কোনো ভাবেই যাতে খাদ্য পানীয় জল না পৌঁছায় তা নিশ্চিত করতে কড়া প্রহড়ার ব্যবস্থা করেছে। অন্যদিকে হামলায় আহত বা অন্যান্য অসুস্থ ব্যক্তিরা যাতে চিকিৎসা না পায় তাই জীবন দায়ী ঔষধের চালানও আঁটকে দিয়েছে ইসরাইল সরকার। অর্থাৎ বলা যায় যুদ্ধ বন্ধ না হলে এবং ইসরাইল সরকারকে এই কঠোর অবরোধ কর্মসূচি বন্ধ করতে বাধ্য করা না হলে গাজা উপত্যকার মানুষদের ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হবে।

উল্লেখ্য যে, ইসরাইলের সঙ্গে ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ সংগঠন হামাসের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের সূত্রপাত হয় গত শনিবার। ফিলিস্তিনের ভূমির উপর থেকে সমস্ত ধরনের অবৈধ বসতি স্থাপন বন্ধ করে তা সরিয়ে নেওয়ার দাবি জানিয়ে এবং ফিলিস্তিনিদের হত্যা করা বন্ধ করার দাবি জানিয়ে ইসরায়েলের ভূখণ্ডে ওই দিন নজিরবিহীন রকেট হামলা চালায় হামাস। মাত্র ২০ মিনিটে ৫ হাজারের মতো রকেট ছুড়ে নিজেদের শক্তির জানান দেয় সংগঠনটি। ভেদ করে ইসরায়েলের নিশ্ছিদ্র সুরক্ষাবলয়। শুধু তা–ই নয়, সীমান্ত পেরিয়ে ইসরায়েলে ঢুকে পড়েন হামাসের যোদ্ধারা। ইসরাইলের ইতিহাসে এই হামলা সব চেয়ে বড় পড়াজয় হিসেবে মনে করা হচ্ছে।

Related Articles

Back to top button
error: