টিডিএন বাংলা ডেস্ক : পাঁচটি বিধানসভা আসনে উপনির্বাচনের একমাস বিরতির পর ফের দুস্থঃ ও গরিব মানুষদের উচ্ছেদ শুরু করল অসমের বিজেপি সরকার। গত ২৩ সেপ্টেম্বর দরং জেলার গরুখুটিতে রক্তাক্ত উচ্ছেদ অভিযান চালানোর পর সোমবার রাজ্যের হোজাই জেলায় লামডিং এলাকার চারটি গ্রামের প্রায় সাড়ে পাঁচ শতাধিক পরিবারের প্রায় দুই হাজার মানুষকে উচ্ছেদ করা হল। উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, এতদিন সন্দেহভাজন বিদেশি তকমা সেঁটে অসমে বসবাসকারী সংখ্যালঘু মুসলিম পরিবারগুলিকে উচ্ছেদ করেছে হিমন্ত বিশ্বশর্মার সরকার। এবার শুরু হল, বনবাসী আদিবাসী মানুষদের উচ্ছেদ অভিযান। বিরোধীদের অভিযোগ, আদিবাসীদের বনাঞ্চলের অধিকার কেড়ে নিচ্ছে বিজেপি সরকার। দেড় মাস আগে গরুখুটিতে সংখ্যালঘু মুসলিমদের জোর করে উচ্ছেদ করতে গিয়ে গরিব কৃষকদের উপর নির্মমভাবে গুলি চালায় হিমস্ত বিশ্বশর্মার পুলিশ। এতে দু’জন গরিব কৃষক নিহত হন। আহত হন ২০ জনের বেশি। পুলিশের গুলিতে নিহত কৃষকের মৃতদেহের উপর তাণ্ডবলীলা চালায় পুলিশের এক ক্যামেরাম্যান। এমন বর্বরোচিত হামলার ঘটনার প্রতিবাদে গর্জে ওঠে গোটা দেশ। এমন বর্বরোচিত পর এবার আদিবাসী নামিয়ে উচ্ছেদ চলছে অসমে। গরুখুঁটিতে যে ১০ হাজার সংখ্যালঘুকে উচ্ছেদ করা হয়েছে তাদের প্রত্যেকের নাম রয়েছে এনআরসিতে। নদীর গ্রাসে চলে যাওয়া জমির দলিল থেকে শুরু করে ভোটারকার্ড-রেশনকার্ডও রয়েছে। মুসলিমদের নিশানা করে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হলেও এবার আদিবাসীদের জমি থেকে উচ্ছেদ করা শুরু করল বিজেপি সরকার। সোমবার লামডিং বনাঞ্চল এলাকার কোমরপানি, লংসিপাই, বেতনলা, পাগলাবস্তি এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছে হোজাই জেলা প্রশাসন। এই উচ্ছেদ অভিযানকে বৈধতা দিতে মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা বলেছেন, এখানে নাকি কয়েকটি পরিবার জমি দখল করে আদা-হলুদের চাষ করে বছরে পঁচিশ কোটি টাকা রোজগার করেছে। প্রায় এক হাজার সশস্ত্র পুলিশ ও আধা-সামরিক বাহিনীর জওয়ান গ্রাম ঘিরে ফেলে বুলডোজার ও হাতি দিয়ে একের পর এক বাড়ি ভেঙে ফেলা হয়। স্থানীয়রা বলছেন, এই এলাকায় মূলত গারো ও চাকমা সম্প্রদায়ের আদিবাসীদের বাস। কিছু মুসলিম পরিবারও রয়েছে। বিগত ৫০ বছর ধরে তাঁরা এখানে বসবাস করছেন। এখন শিশুদের নিয়ে তাঁরা খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। অসম সরকারের অমানবিকতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে ওঠে বিরোধী দল ও বিভিন্ন গণ-সংগঠন। প্রান্তিক শ্রেণির মানুষের উচ্ছেদ করে ধনকুবেরদের হাতে জমি তুলে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে। এই অভিযোগ আরও সত্যি হয়, যখন দেখা যায়— কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ’র ছেলে জয় শাহকে ছয়শো বিঘা জমি দিতে অসম সরকার তৎপর হয়ে উঠেছে। গোটা দেশে সমালোচনার ঝড় উঠলে উচ্ছেদ অভিযান সাময়িক বন্ধ রাখে হিমন্ত বিশ্বশর্মার নেতৃত্বাধীন সরকার। অবশ্য এর পেছনে অন্য একটি কারণও ছিল। গত অক্টোবর মাসের শেষে ছিল ৫ টি কেন্দ্রের উপনির্বাচন। নির্বাচনে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে ভেবে উচ্ছেদ অভিযান সাময়িক বন্ধ রাখে সরকার। নির্বাচনে বিজেপি ও তার শরিকদল সব ক’টি আসনে জয় লাভ করার পর মুখ্যমন্ত্রী হিমস্ত বিশ্বশর্মা ঘোষণা করেন, জনমত যেহেতু বিজেপি জোট সরকারের পক্ষে তাই উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত থাকবে। হিমন্তের ঘোষণায় ছয়দিনের মাথায় ফের উচ্ছেদ অভিযান শুরু হল। মূলত সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকায় অভিযান চালিয়েছে বিজেপি সরকার। মুখ্যমন্ত্রী থেকে শুরু করে বিজেপি ও সংঘের অনুসারিরা প্রচার করেছে, বেআইনি অনুপ্রবেশকারী বিদেশিদের উচ্ছেদ করা হচ্ছে। যদিও যাঁদেরকে উচ্ছেদ করা হয়েছে, তাদের কাউকেই এখনও বিদেশি বলে প্রমাণ করা হয়নি।
সংবাদ সূত্র- পূবের কলম পত্রিকা