টিডিএন বাংলা ডেস্ক: ভারতে জি-২০ সম্মেলন শেষে দেশে ফিরেই সংসদে বিরোধীদের প্রশ্নবানে বিদ্ধ হচ্ছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক। সম্প্রতি শেষ হওয়া জি-২০ সম্মেলনকে নজিরবিহীন সাফল্য হিসাবে প্রচার করতে শুরু করেছে বিজেপি। এদিকে, ওই সম্মেলনে যোগ দিতে এসে দিল্লিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার বিষয়বস্তু নিয়ে দেশের সংসদে কঠোর প্রশ্নের মুখে পড়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক। বিরোধীরা একের পর এক প্রশ্ন ছুড়ে দেন প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে। লেবার পার্টির এমপি ব্যারি শিরম্যান ব্যঙ্গাত্মক সুরে প্রশ্ন করেন, ‘ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে আমাদের প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক দেখে আমরা অনেকেই বেশ আপ্লুত হয়েছিলাম। জানতে চাই, মোদীর সঙ্গে আমাদের প্রধানমন্ত্রী যখন একান্ত বৈঠক করেন তখন তিনি কি তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, কেন ইউক্রেন আক্রমণের জন্য রাশিয়ার নিন্দা করছে না ভারত? দ্বিতীয়ত, জানতে চাই, তিনি কি মোদীকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন ভারতে মুসলিম ও খ্রিস্টানদের উপর নিপীড়ন, মসজিদ ও গির্জা জ্বালিয়ে দেওয়া এবং মানুষ হত্যা বন্ধে তিনি কী পদক্ষেপ করেছেন?’
শুধু শিরম্যানই নন, ব্রিটিশ বিরোধী দলনেতা-সহ বিরোধী দলের একাধিক এমপি সুনাকের দিল্লি সফর এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচ্য নিয়ে তীক্ষ্ণ প্রশ্নবাণে বিদ্ধ করেন ঋষিকে। তার মধ্যে শিরম্যানের প্রশ্নটিই ছিল সবচেয়ে অস্বস্তির। সুনাক প্রশ্ন শোনা মাত্র উঠে দাঁড়ালেও স্পষ্ট জবাব দেননি। তিনি বলেন, মানবাধিকার এবং গণতন্ত্রকে সুরক্ষার বিষয়ে আমাদের কথা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, মণিপুরের ঘটনা নিয়ে আমেরিকার মতো ব্রিটেনের মানবাধিকার সংগঠনগুলিও সরব। এছাড়া মোদীর সময়ে ভারতে সংখ্যালঘু বিশেষ করে মুসলিম ও খ্রিস্টানদের উপর উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের হামলা এবং সরকারের ভূমিকা নিয়েও সরব সে দেশের নাগরিক সমাজ ও মানবাধিকার সংগঠনগুলি। সুনাককে এক বিরোধী সাংসদ প্রশ্ন করেন, ২০১৫ সালে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছিল ভারতকে উন্নয়ন সহায়তা করবে না ব্রিটেন। সেই নীতি কি সরকার মানছে? ঋষি জবাব দেন, অবশ্যই মানা হচ্ছে। ভারতে ব্রিটিশ বিনিয়োগ অব্যাহত আছে। কিন্তু সরকারি তহবিল থেকে উন্নয়ন অনুদান দেওয়া হয় না।
ব্রিটেনের সংসদের এই বিতর্ককে হাতিয়ার করেছে কংগ্রেস। সে দেশের প্রধানমন্ত্রীকে বিরোধীদের প্রশ্নবাণে নাস্তানাবুদ করার বিষয়টি উল্লেখ করে এক্স হ্যান্ডেলে প্রবীণ কংগ্রেস নেতা তথা দেশের প্রাক্তন স্বরাষ্ট্র ও অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম দেশবাসীর উদ্দেশে বলেছেন, ‘সবাইকে বলব, ব্রিটিশ সংসদের এই বিতর্ক সংক্রান্ত রিপোর্টে চোখ বোলাতে। একজন প্রধানমন্ত্রী দেশে ফেরার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সংসদে বিরোধীদের প্রশ্নের মুখে পড়েছেন। বিতর্কে কে হারল আর কে জিতল সেটা বড় কথা নয়। বিরোধীদের শানিত প্রশ্নের তৎক্ষণাৎ জবাব দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। যা ভারতে এখন কল্পনাই করা যায় না। যদিও জওহরলাল নেহরুর সময় ব্রিটিশ পার্লামেন্টের মতোই বিতর্ক হত ভারতের সংসদে।’
আসলে জি-২০ সম্মেলনে আসা বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধানদের মধ্যে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীই সবচেয়ে বেশি মন জয় করতে পেরেছেন ভারতের। লন্ডন থেকে দিল্লির বিমানে ওঠার সময়ই তিনি বলেন, দিল্লিতে জি-২০ সম্মেলন এক সঠিক সিদ্ধান্ত। উপযুক্ত দেশেই সম্মেলন হচ্ছে। ভারতে পা রেখেই তিনি সরব হন ব্রিটেনে খলিস্তানি জঙ্গি তৎপরতা নিয়ে। নিজেই ঘোষণা করেন, ব্রিটেনকে খলিস্তানি জঙ্গি মুক্ত করা হবেই। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তিনি ভারতের পাশে আছেন। লন্ডনে ফিরে জি-২০’র সাফল্য নিয়ে বিবৃতি দেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী।
ঠিক উল্টোটা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। দিল্লিতে কূটনৈতিক সৌজন্য রক্ষা করলেও ভিয়েতনাম গিয়ে ভারত সরকারকে বিপাকে ফেলেছেন। দিল্লিতে বাইডেন ও মোদীর যৌথ সাংবাদিক সম্মেলন হয়নি। আমেরিকার দাবি, ভারত সরকারের আপত্তিতেই রীতি ভাঙতে হয়েছে। অতিথি দেশ না চাইলে আমরিকার কিছু করার থাকে না। যদিও দুই রাষ্ট্রপ্রধানের বৈঠকের পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হওয়াই আমেরিকার রীতি। দিল্লিতে সাংবাদিক বৈঠক না হওয়ায় মার্কিন মিডিয়ায় তুমুল সমালোচনা হয় ভারতের। ফলে ভিয়েতনামের রাজধানী হ্যানয়ে গিয়ে বাই়ডেন মোদীর সঙ্গে তাঁর আলোচনার নির্যাস জানান। বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে আমি মানবাধিকার, গণতন্ত্র, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষার মতো বিষয়গুলি নিয়ে উদ্যোগী হতে বলেছি। বাইডেনের এই সিদ্ধান্তে নয়া দিল্লি অখুশি। যদিও সরকারিভাবে এখনও ভারতের বিদেশ মন্ত্রক এই ব্যাপারে কোনও প্রতিক্রিয়া দেয়নি। সূত্র- দ্য ওয়াল