রাজ্য

তিন বছরের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর মুখ্য উপদেষ্টা হচ্ছেন আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়

টিডিএন বাংলা ডেস্ক: শেষ পর্যন্ত রাজ্যের মুখ্যসচিবের পদ থেকে অবসর নিলেন আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর জায়গায় রাজ্যের নতুন মুখ্য সচিব হচ্ছেন হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদি। পাশাপাশি, রাজ্যের নতুন স্বরাষ্ট্র সচিব হচ্ছেন বিপি গোপালিকা। তবে আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে এখনই ছুটি দিলেন না মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যের মুখ্য সচিব হিসেবে নয়, এবার আগামী তিন বছরের জন্য আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় থাকবেন মুখ্যমন্ত্রীর মুখ্য উপদেষ্টা হিসেবে। এদিন নবান্ন থেকে এমনটাই ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন,”করোনা কালে ওঁকে আমাদের চাই। রাজ্যের, দেশের গরিব, দুর্বল, তফসিলি জাতি, তফসিলি জনজাতি, সংখ্যালঘু মানুষের জন্য কাজ করছেন আলাপন।” পাশাপাশি আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের বদলির নির্দেশ প্রত্যাহার করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদিকে যে চিঠি মুখ্যমন্ত্রী লিখেছিলেন তার কোন জবাব এখনো পর্যন্ত দেওয়া হয়নি বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

এদিন নবান্নে এ প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী এই ঘটনার পেছনে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অভিযোগ তুলে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে নিজের ক্ষোভ উগরে দেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ,”রাজনৈতিক প্রতিহিংসা। বিজেপি হেরেছে। এই জন্য ওঁরা এ সব করছেন। ওঁরা ভোট পরবর্তী হিংসা বলে চিৎকার করছেন। ওরা জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে গিয়েছে। কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল পাঠিয়েছে। আমরা তো কোনও ভোট পরবর্তী হিংসা দেখতে পাইনি। আমরা জনসেবার জন্য, ইয়াস এবং করোনা পরিস্থিতিতে আলাপনের মেয়াদ বৃদ্ধি করেছিলাম। তাতে কেন্দ্র সিলমোহরও দিয়েছিল।”

শুধু তাই নয় কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত ও যুক্তরাষ্ট্র পরিকাঠামোকে ভেঙে দিচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। মমতা বলেন,আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় এর বদলির নির্দেশ সংক্রান্ত ইস্যুতে রাজ্যের সঙ্গে কোনো রকম আলোচনা করেনি কেন্দ্র। তাঁর প্রশ্ন, কেন্দ্র সরকার কিভাবে রাজ্যের সঙ্গে কোনো রকম আলোচনা না করে এবং রাজ্যের সম্মতি ছাড়াই এ ধরনের নির্দেশ দিতে পারে? তিনি বলেন,”এটা কি যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো ভেঙে দেওয়া নয়? আমলারা কি চুক্তিভিত্তিক শ্রমিক? এ ভাবে কি রাজ্য এবং কেন্দ্র লড়াই করবে? আমি সকলের কাছে আবেদন জানাচ্ছি। এটা শুধু আলাপনের লড়াই নয়। এটা আইএএস, আইপিএস, বুদ্ধিজীবী, সাধারণ মানুষ সকলের কাছে আবেদন জানাচ্ছি।”

এদিন মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন,”আলাপন অবসর নিলেন। তাঁর আজই অবসর নেওয়ার কথা ছিল। কেন্দ্রীয় সরকার ৩ মাসের জন্য মেয়াদ বৃদ্ধি করেও রাজনৈতিক প্রতিহিংসা নিয়েছে। কেন্দ্র তাঁকে ডাকার কারণ দেখায়নি। একদিন ওদের পস্তাতে হবে।” তিনি আরো বলেন,”বাংলা হারতে জানে না। প্রধানমন্ত্রী এখনও আমার চিঠির উত্তর দিতে পারেননি। আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় আজ অবসর নিয়েছেন। আমলাতন্ত্রকে বাঁচিয়ে দিয়েছেন। এটা হওয়া উচিত নয়। এই জন্য সংবিধানে লক্ষ্মণরেখা টানা আছে। আলোচনা ছাড়া এটা সম্ভব নয়। সুপ্রিম কোর্টেরও নির্দেশ আছে।”

এদিন কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সমস্ত রাজ্য ও বিরোধী মুখ্যমন্ত্রীদের একজোট হওয়ার আহ্বান জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন,”দেশের সবক’টি রাজ্যের এককাট্টা হয়ে এর বিরুদ্ধে সরব হওয়া উচিত। বিরোধী দলগুলির মুখ্যমন্ত্রীদেরও একজোট হওয়া উচিত। বিজেপি সরকার, কোভিড, অর্থনীতি—সব সামলাতেই ব্যর্থ। বিজেপি স্বৈরাচারীর মতো ব্যবহার করছে। ওরা হিটলার, স্ট্যালিনের মতো ব্যবহার করছে।”

এদিন নবান্নে আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে শোকজ করা হয়েছে কিনা সে ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে মুখ্যমন্ত্রী জানান,”আলাপনকে শো-কজ করা হয়েছে কি না সেই তথ্য আমাদের কাছে নেই। কোনও চিঠি আসেনি। তবে যিনি ইতিমধ্যেই অবসর নিয়েছেন তাঁর ক্ষেত্রে এগুলো আর কার্যকর হয় না।” তিনি আরো বলেন,”বিজেপি-র আমলে আমলারা অসহায়। তাঁদের সম্পর্কে আমার উচ্চধারণা আছে। যা বলা হবে তা তাঁরা করতে বাধ্য নন। অনেক হয়েছে। আমি আমলাদের পাশে রয়েছি। এটা আমলাদের অপমান। ওঁরা খালি ভাষণ দিচ্ছেন। আর আমলারা রেশন সরবরাহ করবেন।”

Related Articles

Back to top button
error: