মোকতার হোসেন মণ্ডল: ঝিরঝিরে বৃষ্টি আর হালকা শীতে জুবুথুবু অবস্থা বাংলার। বুধবার বিকেল থেকেই দমকা ঝোড়ো হাওয়া শুরু হয়, রাতেই অল্প বৃষ্টি। কিন্তু বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রাজ্যের বিভিন্ন জেলা ভিজছে। আর এই অকাল বর্ষণে চাষের ক্ষতি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। বর্ধমানের বড়শুলের রবিউল ইসলাম এই প্রতিবেদককে জানান, ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বহু কাটা ধান এখনো মাঠে, বৃষ্টিতে ভাসছে। কেউ আলু সবে লাগিয়েছে, কারও আলু একটু বড় হয়েছে, শীতকালের এই হটাৎ বৃষ্টিতে হাজার হাজার চাষীর ঘুম ছুটেছে। টানা আলুর দাম পাচ্ছে না, এতো মেহনতের ফসল নষ্ট হলে মাথা ঠিক থাকে? একেবারে তীরে এসে তরী ডোবার মত অবস্থা, ফসল ঘরে ওঠার আগেই এমন বৃষ্টিতে চাষীদের মাথায় হাত পড়েছে। ঋণ করে, বহু কষ্টে ধান চাষ শেষে ঘরে ফসল উঠছে না।
রায়না ১ নম্বর ও ২ নম্বর ব্লকের কাইতি অঞ্চলে সব চেয়ে ক্ষতি হয়েছে। জিনারুল সেখ বলেন, অনেকে কৃষি ঋণ, ব্যাংক থেকে সোনা বন্ধক রেখে লোন নিয়েছে। এখন গোবিন্দ ভোগ ধান তোলার সময় ছিল। বৃষ্টির কারণে আলু বীজ পচে যেতে পারে এই চিন্তায় ঘুম নেই কৃষকদের। জানা গেছে, আবহাওয়ার খবর পেয়ে অনেকে মেশিনে ধান কেটে নিলেও সেই ধান শুকানো যাচ্ছে না, বাড়িতে পড়ে রয়েছে। সেই সঙ্গে রয়েছে শ্রমিক সংকট, মজুরি কম হওয়ায় শ্রমিকরা অন্য রাজ্যে চলে গেছে। তাছাড়া সকল চাষী মেশিন কিনতে পারেনি, আবার শ্রমিক জোগাড় করে ধান কাটলেও ধান মাঠে পড়ে আছে। গলসি ব্লকের ইব্রাহিম সেখ সহ অনেকের ধান কেটে তোলার আগেই বৃষ্টিতে সর্বস্বান্ত অবস্থা।
নদিয়ার করিমপুরের জহির মন্ডল বলেন, সরষে আর মসুরির খুব ক্ষতি হবে। যারা আগে সরষে চাষ করেছেন তাদের বেশি ক্ষতি, বর্ষায় তেমন বর্ষা হয়নি, শীতকালে যে বর্ষা হবে কে জানে! নিম্নচাপের ফলে সবজি চাষেও ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। এই মুহূর্তে বেগুন, ফুলকপি, বাঁধাকপি টমেটোর মত বিভিন্ন সবজির ফলন হচ্ছে। কিন্তু অকাল বর্ষণে এই সমস্ত চাষেও ক্ষতির আশঙ্কা। শীতের বর্ষায় অনেক জায়গায় সব্জি ও সরষে ক্ষেত নষ্ট হওয়ার মুখে৷ চাষীদের অভিযোগ, আলুর বীজের দাম এই বছর অনেকটাই চড়া। তাছাড়া চাষ, সারের দাম, এর মধ্যে নিম্নচাপের বৃষ্টিতে স্বপ্নগুলি ভেঙে চুরমার।
অন্যদিকে বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর মহকুমার কোতুলপুর, জয়পুর, সোনামুখী সহ বিভিন্ন ব্লকে আলু ও ধানে চাষে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। জানা গেছে, চাষিদের পাকা ধানের উপর দিয়ে বইছে জল। কৃষকদের আশঙ্কা, পাকা ধান জলের তলায় থাকার ফলে সেই ধানে অঙ্কুর বেরিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে এবং আলু বীজ পচে নষ্ট হয়ে যাবে। এর ফলে তাদের ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে। আরামবাগের এক ভাগ চাষী বলেন, সদ্য লাগানো বিঘার পর বিঘা আলুর জমি জলের তলে। চাষীদের দাবী, সরকার প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত চাষীদের পাশে দাঁড়াক।
মুর্শিদাবাদে বর্ষাকালে কৃষকরা যে আমন ধান লাগিয়েছেন তা মাঠ থেকে তোলার সময় হয়ে যাওয়ায় গত কয়েকদিন ধরে কৃষকরা মাঠে থাকা ধান কাটতে শুরু করেছিলেন। বেশিরভাগ কৃষক ধান মাঠেই রেখে দিয়েছিলেন। তবে হঠাৎই বুধবার থেকে বৃষ্টি শুরু হওয়ার ফলে বিঘের পর বিঘে জমিতে আমন ধান ভিজে গেছে। শুধু যে ফসল চাষে ক্ষতি এমন নয়, অনেক কৃষক ছাগল, গরু পালন করে। এই শীতের বর্ষায় ঠিকভাবে মাঠে বেরুনো যাচ্ছে না। ফলে পশু পালনের ক্ষেত্রেও সমস্যা। এক কৃষকের মন্তব্য, গরমকালে বর্ষা হলে মাঠে নামা যায়, কিন্তু শীতে নিম্নচাপের ফলে পথে বেরুনোর জো নেই।