HighlightNewsসম্পাদকীয়

মমতার মোহে আচ্ছন্ন বাংলা, কিন্তু দার্জিলিং-এ বাজিমাত হামরো পার্টির

আখের আলী  টিডিএন বাংলা ডেস্কঃ গতকাল বুধবার, ১০৮ টি পুরসভার ফলাফল ঘোষিত হয়েছে। স্বভাবতই ১০৮-এর মধ্যেই তৃণমূল জয়ী হয়েছে ১০২ টিতে। বেলা যত বাড়তে থাকে ততই কানের কাছে ঢং ঢং করে একটা শব্দ বাজতে থাকে। সেই সঙ্গে সমস্ত গণমাধ্যমের পর্দায় ভেসে ওঠে অমুক পৌরসভা তৃণমূল দখল করেছে। কি আশ্চর্যভাবে ভাবে পাল্টে গেছে নির্বাচনের ন্যারেটিভ। গণতান্ত্রিক দেশে নির্বাচনে লড়াই করেই জয় লাভ করলে তাঁকে বিজয়ী হয়েছে বলবো, ‘দখল’ করেছে বলব কেন? ভোট যুদ্ধ বলে ব্যাখ্যা করতে পারি। কিন্তু নির্বাচন একটা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ায় যিনি বা যারা জেতেন তাকে ‘বিজয়ী’ বলা হবে। কিন্তু এখন আর তা হয়না। তাই রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন বা বিরোধীরাও গলা ফাটিয়ে চিৎকার করতে থাকেন, ‘লুট’ করা হয়েছে।

সে যাই হোক, শাসকদল বেশিরভাগ পুরসভা জিতবে। এটা আর নতুন কথা কি। তবে আমার মনে হয় এই ফলাফলের দুটি দিক আছে। একটা ঐতিহাসিক। কিভাবে? বিগত কয়েকটা নির্বাচন খতিয়ে দেখলেই বোঝা যায়। বেশিরভাগ সময় রাজ্যে যারা ক্ষমতায় থাকে, পুরসভা, পঞ্চায়েত নির্বাচনে তারাই জয়লাভ করে। আর দ্বিতীয় দিক হচ্ছে, বাস্তব। যেভাবে ভোট প্রক্রিয়া চলেছে বা তৃণমূলের কর্মীদের অতি সক্রিয়তা দেখা গিয়েছে, বিরোধীরা হারের আগেই হারমেনে নিয়ে ময়দান ছেড়ে পালিয়ে গেছে। উন্নয়ন যেভাবে ময়দানে নেমে এসেছে, তাতে এই ফলাফল তো স্বাভাবিক। অতি বড়ো রাজনৈতিক বিশ্লেষকও অন্য ফালাফল আশা করেননি।

কলকাতা, বিধাননগর, ইত্যাদি পৌরসভা নির্বাচনের ফলাফল প্রসঙ্গে বিজেপিকে বলতে দেখা গিয়েছিল, কলকাতায় আমাদের সংগঠনের তেমন জোর নেই। তাই এইসব পুরসভার ভোটে আমরা অত আশাবাদী ছিলাম না। তর্কের খাতিরে যদি তাই মেনে নেই, তাহলে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক! বিগত বিধানসভা নির্বাচনে যাদের আস্ফালনে সবাই আচম্বিত হয়েছিল। সেই মারকাটারি নেতা দিলীপ ঘোষ, কথায় কথায় পিটিয়ে দেবো বলা অর্জুন সিংহ, তথাকথিত জনদরোদী নেতা শুভেন্দু অধিকারী ও সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, সবাই চিতপটাং। বিধানসভার আগে অনেককে বলতে দেখা গিয়েছিল, লোহাই লোহা কাটে। কিন্তু এই বিজেপির হাল দেখে মনে হচ্ছে, এতো লোহা নয়। অন্য কিছু। কি? আপনারা ভাবুন!

সূর্যাস্ত হল অধিকারী সাম্রাজ্যের!

অনেকে তাই মনে করছেন। কেননা আনিস খানের অস্বাভাবিক মৃত্যুর প্রতিবাদে যেভাবে আইএসএফ, এসএফআই বা অন্যরা প্রতিবাদের সুর চড়িয়েছে, বিরোধী দলনেতা হিসেবে শুভেন্দুকে সেভাবে দেখা যায়নি। কারণ হিসেবে অনেকে কাথির পৌরসভা নির্বাচনকে দায়ী করেছেন। কিন্তু কিছু হলো? তাছাড়াও শিশির আধিকারির মতো নেতা যা বললেন তা কি করা দরকার ছিল? নির্বাচনের আগে বা পরে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। নির্বাচনের আগে বা পরে স্লোগান উঠেছে চোর চোর চোট্টা……।

রামের ভোট কি আবার বামেই! বামেরা এখনো আছে। তাহেরপুর পৌরসভায় তারা জয়ী হয়েছে। কিন্তু বামেদের এই জয় হল কী করে? সেখানে কি ভোট লুট হয়নি? তার কারণ তাদের মার খাবার ও মার দেওয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে। রয়েছে ৩৪ বছরের সুনাম ও বদনাম দুটোই হজম করার ক্ষমতা। মাটি কামড়ে পড়ে থাকা ইত্যাদি। তবে এমন ভাবার দরকার নেই যে বামফ্রন্ট আবার হারানো জমি ফিরে পাবে। বা জনতা তাদের দিকে ফিরে আসবে। এখন আর জনতা আসে না। তাদের কাছে যেতে হয়। তবেই জনতার আশীর্বাদ পাওয়া যায়। যারা যাবে তারা মন্দের ভালো হিসেবে পেলেও পেতে পারে। রামের ভোট বামে হলেও হতে পারে।

অর্জুন দূর্গ ধূলিসাৎ! অনেকেই মনে করতেন অর্জুন সিংহ বিরাট মানের বাহুবলী নেতা। হম্বিতম্বি দেখে তো সবার তাই মনে হয়েছিল। কিন্তু কি আশ্চর্য নিজের এলাকায় তিনি নিজের পুরসভা ধরে রাখতে পারলেন না। নিজের ওয়ার্ডের মানুষ কি তাকে চেনেন না? অথবা তিনি বিশ্বাস অর্জন করতে পারলেন না? ভোটের রেজাল্ট তো তাই বলছে।

পাহাড়ে উদয় ঘটলো নতুন দল হামরো পার্টির

এই নির্বাচনের ফলাফল থেকে এটা নতুন প্রাপ্তি। আমরা যারা রাজনৈতিক চর্চা করি তারা দেখেছি গত কয়েক দশক ধরে পাহাড়ে বিমল গুরুং বা বিনয় তামাং বা অনীত থাপার ছাড়া অন্য কেউ নেই। কিন্তু আশ্চর্যভাবে উদয় হয়েছে এই নতুন রাজনৈতিক দলের। মাত্র ৯২দিন বয়স। ৩২ আসনের মধ্যে ১৮ টি আসনে তারা জয়লাভ করেছে। এখন দেখার তারা নতুন রাজনৈতিক দল হিসেবে কোন ব্যতিক্রমী ন্যারেটিভ তৈরি করতে পারে কিনা।

চর্চায় না থাকলে খরচার খাতায়। কথাটা শুনতে খারাপ লাগলেও আর কিছু করার নেই। কংগ্রেসকে বিগত কয়েক দশক ধরে বাংলার রাজনীতিতে তেমন কোনো আন্দোলন বা কর্মকাণ্ডে দেখা যায়নি। তাই জনতার দরবার এ আউট অব সাইট হয়ে আউট অফ মাইন্ড হয়ে গেছে। প্রচন্ড সবুজ ঝড়ের কাছে আধির চৌধুরীর ব্যক্তিত্বপূর্ণ রাজনীতি ও কাজে আসেনি।

আর একটা দিক ছোট্ট করে বলি ৩১ টা পুরসভা বিরোধী আসন শূন্য হয়েছে। গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় বিরোধী-শূন্য হলে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় থাকে না। সৎ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের ঘাটতি দেখা যায়। জনসাধারণকে সেই বিষয়টা মাথায় রাখতে হবে।

অবশেষে এই নির্বাচনের ফলাফল থেকে বলা যেতে পারে, জেতা আসনের নিরিখে দ্বিতীয় হয়েছে বামফ্রন্ট। কংগ্রেস কোন পুরসভা না জিততে পারলে ও জেতা আসন ও ব্যক্তিগত কারিশমা বজায় রেখে কংগ্রেস-বিজেপির থেকে অনেকাংশে প্রাসঙ্গিকতা ধরে রেখেছে। আর হামরো পার্টির আগমনকে রাজনীতির ময়দানে নতুন সূর্যোদয় হিসেবে দেখা যেতে পারে।

Related Articles

Back to top button
error: