ত্রিপুরায় পুরভোটে নিরঙ্কুশ ক্ষমতা দখল বিজেপির

প্রতীকী ছবি

টিডিএন বাংলা ডেস্ক: ত্রিপুরা পুরভোটের ফল প্রকাশিত হতেই দেখা গেল নিরঙ্কুশ ভাবে ক্ষমতা দখল করেছে বিজেপি। যদিও ভোটের এই ফলাফল নিয়ে কোনও মহলেই বিশেষ কোনও সংশয় ছিল না। তবে বিজেপির এই বিজয়ের মধ্যেও ত্রিপুরার মাটিতে আশার আলো দেখতে শুরু করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। কারণ আগরতলা শহরে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসে তৃণমূল কংগ্রেস।

ত্রিপুরাতে পুর নিগম, পুর পরিষদ ও নগর পঞ্চায়েত মিলে মোট ৩৩৪টি ওয়ার্ড আছে। এর মধ্যে বর্তমানে বিজেপির ঝুলিতে আছে ৩২৯টি আসন। যদিও ১১২টি আসন তারা ইতিপূর্বেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দখল করে ছিল। ত্রিপুরার ১৩টি পুর এলাকায় ভোট হয়েছে এবং সবক’টি পুর এলাকাই দখলে নিয়েছে বিজেপি। আগরতলায় তৃণমূল কংগ্রেস দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসলেও গোটা রাজ্যের নিরিখে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে বামেরা। আগরতলা পুর নিগমে মোট ৫১টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৫১টিই বিজেপির দখলে। এর মধ্যে ২৬টি ওয়ার্ডে তৃণমূল রয়েছে দ্বিতীয় স্থানে, অন্যদিকে বামেরা ২৫টি আসনে দ্বিতীয় স্থানে আছে। শুধু আমবাসা পুর পরিষদের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডেই তৃণমূল প্রার্থী সুমন পাল বিজয়ী হয়েছেন।

২২২টি আসনে ভোট হয়েছে। তার মধ্যে বিজেপির ২১৭টি, সিপিএম এর ৩টি আসন। তৃণমূল এবং তিপ্রা মথা ১টি করে ওয়ার্ড দখলে এসেছে। তিপ্রা মথার প্রদ্যোত কিশোর মানিক্যের দাবি, কোনও জনজাতি সংগঠনের শহুরে এলাকায় জয় এই প্রথম। বামেরা ১৯.৬৫% ভোট পেয়েছে। তৃণমূল পেয়েছে ১৬.৩৯%। আর বিজেপি পেয়েছে ৫৯.০১% ভোট। আর জয়ী বিজেপির প্রাপ্তি ৫৭.৪% ভোট।

এই ফলাফল প্রসঙ্গে তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতার বলেছেন, ‘‘এই ফলে হতাশার তো কিছু নেই-ই, বরং উৎসাহিত হওয়ার কারণ আছে। বিজেপির শেষের শুরু হল। গণতন্ত্রের হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য ত্রিপুরার মানুষ আমাদের ভরসা দিয়েছেন।’’ তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সবে তো শুরু। এ বার আসল খেলা হবে!’ তিনি আরও বলেন, “নামমাত্র উপস্থিতি নিয়ে শুরু করে পুরভোটে ২০%-এর বেশি ভোট পেয়ে প্রধান বিরোধী হিসেবে উঠে আসা যে কোনও দলের পক্ষেই ব্যতিক্রমী। আমরা তিন মাস আগে কাজকর্ম শুরু করেছিলাম এবং অন্য দিকে, ত্রিপুরায় গণতন্ত্রকে জবাই করতে বিজেপি কোনও চেষ্টাই বাদ রাখেনি। এই পরিস্থিতি মাথায় রেখে ত্রিপুরায় তৃণমূলের সব কর্মীকে তাঁদের দৃষ্টান্তমূলক সাহসের জন্য অভিনন্দন’!”

ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব বলেছেন, ‘‘ত্রিপুরেশ্বরী মায়ের পুণ্যভূমির যাঁরা ক্ষতি করতে চেয়েছিলেন, তাঁদের যোগ্য জবাব দিয়েছেন ত্রিপুরাবাসী। ফলাফলে প্রতিফলিত হয়েছে, মানুষ উন্নয়নের পক্ষে। তাই বিজেপিকে ৯৮.৫০% আসনে জয়যুক্ত করে ত্রিপুরাবাসী উপহার দিয়েছেন।’’ তৃণমূলকে কটাক্ষ করে তিনি আরও বলেন, ‘‘ত্রিপুরাকে বদনাম করার চেষ্টায় যাঁরা ছিলেন, তাঁরা দেখুন কৈলাসহর অথবা সোনামুড়ায় সংখ্যালঘু এলাকাতেও মানুষ উন্নয়নের পক্ষে আস্থা প্রদর্শন করেছেন। কিছু দিন ধরে ত্রিপুরাকে বদনাম করার চেষ্টা হয়েছে।’’

ত্রিপুরা তৃণমূলের আহ্বায়ক সুবল ভৌমিক প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। সিপিএম এর রাজ্য সম্পাদক জিতেন্দ্র চৌধুরীর বলেন, ‘‘যে নির্বাচনকে বাতিল করার দাবিতে সুপ্রিম কোর্টে যেতে হয়েছে, সেখান থেকে কে দ্বিতীয় বা তৃতীয়, সেই বিচার অর্থহীন! বিজেপির শাসনে গণতন্ত্র, নির্বাচন ও জনগণের ভোটের অধিকারের উপরে যে আক্রমণ চলছে, তা থেকে ত্রিপুরাকে বার করে আনতে সংগ্রামের ময়দানে আরও সক্রিয় হতে হবে।’’ ত্রিপুরা রাজ্য বামফ্রন্টের বিবৃতিতে বলেছে, “অভূতপূর্ব সন্ত্রাস, নির্বাচন কমিশন এবং পুলিশের সচেতন ব্যর্থতার পাশাপাশি প্রশাসনিক সুযোগের ব্যবহার করে শাসক বিজেপি নগর সংস্থার নির্বাচনকে পুরোপুরিই প্রহসনে পরিণত করেছে।”