HighlightNewsরাজ্য

রাজ্যের ঘোষিত বাজেটের সঙ্গে রূপায়ণে গরমিল আছে দাবি সিএজি’র, বিধানসভায় রিপোর্ট পেশ

টিডিএন বাংলা ডেস্ক : রাজ্য সরকারের ঘোষিত বাজেটের সঙ্গে রূপায়ণে গরমিল আছে, বিধানসভায় পেশ করা একটি রিপোর্টে এমনই বিস্ফোরক দাবি করলো কন্ট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল (সিএজি)। সিএজি, বিগত কয়েক বছরের রিপোর্ট তৈরি করে রাজ্য বিধানসভায় পেশ করেছে। সেখানে দাবি করা হয়েছে, ২০২০-২১ আর্থিক বছরে বাজেটে ঘোষণার সঙ্গে নতুন প্রকল্পের বরাদ্দ এবং তা রূপায়ণের ক্ষেত্রে বিস্তর গরমিল খুঁজে পাওয়া গিয়েছে। যদিও, রাজ্য সরকার এই রিপোর্টের সঙ্গে সহমত পোষণ করেনি। এই রিপোর্টেই ভুল আছে বলে মনে করছেন তারা।

প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকরা জানিয়েছেন, সিএজি যে সময়ের ঘোষিত প্রকল্পগুলির উপরে পর্যবেক্ষণ চালিয়েছে সেই সময়ে কোভিডের কারণে সারা বিশ্ব জুড়ে সমস্ত প্রশাশনিক ক্ষেত্রেই সমস্যা দেখা দিয়ে ছিল। সেই পরিস্থিতিতে সরকারের লক্ষ্যই ছিল, আর্থিক সহযোগিতা দিয়ে ভঙ্গুর ক্ষেত্রগুলিকে চাঙ্গা করা। তারপরেই (২০২১) রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্টিত হয়েছিল। প্রশাসনের দাবি, কোভিড পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ছিল, মানুষের হাতে নগদের জোগান দেওয়া। তাই অর্থনীতি এবং জীবন-জীবিকার স্বার্থে লক্ষ্মীর ভান্ডারের মতো প্রকল্পগুলি চালু করেছিল রাজ্য সরকার।

এই সিএজি রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, তফসিলি জাতিভুক্ত মানুষদের জন্য ‘বন্ধু’ প্রকল্প ঘোষণা করেছিল রাজ্য। বাজেটে এর জন্য ২৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়। কিন্তু প্রস্তাবিত ২৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দের মধ্যে এই প্রকল্পের জন্য ৭৬৭ কোটি অর্থাৎ ৩১% টাকা ধার্য করা হয়েছিল। ওই প্রকল্পে প্রস্তাবিত বরাদ্দের ৪৬% বা ১১৪৭ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। ধার্য হওয়া ৭৬৭ কোটির অতিরিক্ত (১১৪৭-৭৬৭) ৩৮০ কোটি টাকা রাজ্য এসসি, এসটি এবং ওবিসি আর্থিক উন্নয়ন নিগমের বাজেট-ঋণের মাধ্যমে পূরণ করা হয়েছে। এসটিদের ‘জয় জোহর’ প্রকল্পের জন্য বাজেটে ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়। কিন্তু সিএজি-র পর্যবেক্ষণ, প্রস্তাবিত বরাদ্দের সাপেক্ষে কোনও অর্থ প্রদান করা হয়নি। যদিও প্রকল্পে ২০৬ কোটি টাকা খরচ করেছে সরকার।

ক্ষুদ্র-ছোট ও মাঝারি উদ্যোগগুলিকে (এমএসএমই) আর্থিক সহায়তার জন্য ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছিল রাজ্য। কিন্তু ৭০টি আবেদন আসার পরেও ২০২০-২১ আর্থিক বছরে এই প্রকল্পের আওতায় কোনও অর্থ সাহায্যই দেওয়া হয়নি। বিনামূল্যে সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের বাজেটে ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়। কিন্তু বাস্তবে ৩৬৮ কোটি টাকা দেওয়া হয়। এর মধ্যে আবার মাত্র ১৯২ কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে। বেকার যুবক-যুবতীদের ছোট ঋণ ও ভর্তুকিপ্রদানের জন্য কর্মসাথী প্রকল্পের আওতায় বাজেটে ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়। কিন্তু মাত্র ২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়। এরমধ্যে আবার খরচ করা হয়েছে মাত্র ০.২২ কোটি টাকা। এছাড়া বাজেটে চা-সুন্দরী প্রকল্পে ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব থাকলেও প্রকৃত পক্ষে ১৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। অন্যদিকে ১০০টি নতুন এমএসএমই পার্ক তৈরির জন্য ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হলেও বাস্তবে বরাদ্দ হয় ৫৭৩ কোটি টাকা। যদিও এই খাতে খরচ করা হয় ৬৬ কোটি টাকা। গরিব পরিবারে বিনামূল্যে বিদ্যুত্‍ দেওয়ার জন্য ‘হাসির আলো’ প্রকল্পে ২০০ কোটি টাকা বাজেট বরাদ্দের প্রস্তাব থাকলেও খরচ হয়েছে ২৭০ কোটি টাকা।

সিএজি’র এই গরমিলের দাবি প্রসঙ্গে প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘অতিরিক্ত সব খরচের হিসেব বিধানসভায় পাশ করানো হয়েছে। যেখানে যেমন প্রয়োজন, সেখানে তেমন ব্যয় করা হয়েছে। কোথাও কোনও গরমিল নেই। পুরোটাই স্বচ্ছতার সঙ্গে হিসেব রক্ষিত হয়েছে।’

Related Articles

Back to top button
error: