পথেই হচ্ছে রান্না,গাড়িতেই ঘুম, প্রচন্ড কনকনে শীতেও কৃষিআইন বাতিলের দাবিতে অনড় কৃষকরা

নিজস্ব সংবাদদাতা, টিডিএন বাংলা, দিল্লি-হরিয়ানার টিকরি বর্ডার থেকে: দিন যত যাচ্ছে, বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ তত বাড়ছে। ফলে আন্দোলন তত শক্তিশালী হচ্ছে। কৃষকরা বলছেন, সরকার জেদ ধরেছে, আমরাও পথ ছাড়ছি না। অন্নদাতাদের দাবি না মানলে, ধর্ণা চলবে।


সোমবার অনশন করেছে দিল্লি হরিয়ানা সীমান্তের টিকরি বর্ডারের আন্দোলনকারীরা।
মঙ্গলবারও ধর্ণা হয়েছে। টিডিএন বাংলাকে এক কৃষক বললেন, এখানে প্রায় সাতাশ দিন আছি। এই শীতে কেমন কষ্ট হচ্ছে বুঝতে পারছেন। এটা আমাদের বাঁচা মরার লড়াই। আমরা দেশের কৃষকদের স্বার্থে পথে নেমেছি,মরে গেলেও আইন প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চলবে।


দেখা গেল, সারিসারি ট্রাক্টর, টলি গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। তার মধ্যেই ছাউনি দিয়ে ঘর বানানো হয়েছে। বয়স্ক কৃষকরা সেখানে শুয়েই ধর্ণা মঞ্চের বক্তব্য শুনছেন। অনেকে গল্প করে বলছেন, জীবনে এইভাবে পথে নেমে আন্দোলন করতে হবে ভাবিনি। বিজেপি সরকার সব শেষ করে দিল!”

হরিয়ানা দিল্লির এই সীমান্তের পুরো রাস্তা অবরুদ্ধ। হরিয়ানার দিকে হাজার হাজার ট্রাক্টর নিয়ে শ্রমিকরা আছেন। মাঝে মাঝে পুলিশ। দিল্লির দিকে ব্যারিকেডের পর ব্যারিকেড গড়ে তুলেছে পুলিশ। দিল্লির দিক দিয়ে অল্প সংখ্যক মানুষ ধর্ণায় যাচ্ছেন। বেশিরভাগ মানুষ আসছেন হরিয়ানা থেকে। এখানে পথেই হচ্ছে রান্না। ট্রাক্টর থেকে বাঁধা কপি, পালনশাক,আলু, বাদাম দেওয়া হচ্ছে। কোথাও কোথাও দুধ গরম করা হচ্ছে। এক রাঁধুনি জানালেন, আমরা শখ করে এখানে আসিনি। আমাদের জমি আছে,টাকা আছে,ফসল আছে। সরকার আমাদের দাবি মেনে নিলেই উঠে যাবো। শতশত স্বেচ্ছাসেবক হাতেহাত রেখে ধর্ণা মঞ্চ পাহারা দিচ্ছেন। মাঝে মাঝে আছে ভ্রাম্যমাণ টয়লেট ও বাথরুম। কৃষকরা নিজেরাই জলের ব্যবস্থা করেছেন। টিকরিপাড়ার ধর্ণা মঞ্চ থেকে পিছনে যেতেই রাস্তায় জল। সেই পথ দিয়ে প্রতিনিয়ত কৃষিকরা আসা যাওয়া করছেন। কেউ রোজ স্নান করছেন আবার কেউ দুইদিন পরপর স্নান করছেন। তবে সবার মধ্যে দেখা গেল হার না মানার জেদ। অনেকে গাড়িতেই ঘুমাচ্ছে, একটা গ্রুপ যাচ্ছে তো আরেকটা গ্রুপ আসছে। অনেক কৃষক এমন আছেন যিনি সাতাশ দিন ধরে এখানে আছেন।

সন্দীপ সিং এই প্রতিবেদককে জানান, অনেকদিন ঘরে যাইনি। ফোনে কথা বলছি পরিবারের সঙ্গে। কষ্ট হচ্ছে,কিন্তু কৃষকদের স্বার্থে আন্দোলন করতেই হবে।

নিন্দের সিং বলছেন, এ লড়াই শুধু পাঞ্জাব, হরিয়ানার কৃষকদের নয়। এটা সারাদেশের কৃষকদের লড়াই। এই আইন বাতিল না হলে ঘরে ফিরি কিভাবে?

ধর্ণা মঞ্চে মহিলাদেরও দেখা গেল। তবে পুরুষদের তুলনায় উপস্থিতি কম। এক মহিলা জানান, ঘর সামলে এখানে এসেছি। বাড়ির ছেলেরা ধর্ণায় এসেছে, আমি কী আর ঘরে থাকতে পারি?

অনেকের জ্বর হচ্ছে, সর্দি হচ্ছে। এই শীতে খোলা আকাশের নিচে আন্দোলন করা যে কী কঠিন তা কেবল মাঠ ছেড়ে রাজপথে বসে থাকা কৃষকরাই জানেন।

আন্দোলন করছে কৃষকরা। উঠছে বিজেপি বিরোধী স্লোগান। প্রতিদিন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা কর্মীরা এখানে আসছেন। তবে কৃষকরা বলছেন, তাদের লড়াই অরাজনৈতিক। কৃষিআইন বাতিল হলেই তারা চলে যাবেন।