আগুন নিয়ে খেলবেন না; জেপি নাড্ডার কনভয়ের ওপর “হামলা” প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীকে সতর্ক করলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়

টিডিএন বাংলা ডেস্ক: গতকাল বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপিন আড্ডার কনভয়ের ওপর হামলার ঘটনা নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আগুন নিয়ে না খেলার পরামর্শ দিলেন। তিনি বলেন,”আমি সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনের শপথ নিয়েছি।মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীরও সাংবিধানিক দায়বদ্ধতা আছে।ওঁকে সংবিধান মেনে চলতেই হবে।” 

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সতর্কবার্তা দিয়ে রাজ্যপাল আরো বলেন,আমি সতর্ক করা সত্ত্বেও রাজ্যে আইন-শৃঙ্খলার অবনতি হচ্ছে। মানবাধিকার দিবসেই কী হল রাজ্যে!যা ঘটল তা গণতন্ত্রের পক্ষে লজ্জার।”শুধু তাই নয় গতকালের ঘটনা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতিক্রিয়া নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে রাজ্যপাল বলেছেন,”একজন দায়িত্বশীল মুখ্যমন্ত্রী কী করে এমন ভাষা প্রয়োগ করেন।উনি ক্ষমা চাইলে, ওঁরই সম্মান বাড়বে।”

পাশাপাশি ডায়মন্ড হারবারের সাংসদদের আচরণ সংবিধানের পক্ষে অবমাননাকর বলেও মন্তব্য করেন তিনি। রাজ্যপাল বলেন,”ডায়মন্ডহারবারের মতো ঘটনা যেন আর না ঘটে। আমার সাংবিধানিক দায়িত্বকে আমি লঘু করতে পারব না। আমি মুখ্যমন্ত্রীকে সতর্ক করছি।” এর সাথেই সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী বহিরাগতদের সম্পর্কে মন্তব্য প্রসঙ্গে রাজ্যপাল সতর্কবার্তা দিয়ে বলেছেন,”ভারতীয়দেরই বহিরাগত বলছেন!দয়া করে আগুন নিয়ে খেলবেন না। ভারত এক দেশ, সব নাগরিক সমান। আপনি সংবিধান থেকে সরলে আমার দায়িত্ব শুরু হবে।”

এ প্রসঙ্গে রাজ্যের মুখ্যসচিব-ডিজিপিকে সতর্কবার্তা দিয়েছিলেন বলে জানিয়ে রাজ্যপাল বলেন,”মুখ্যসচিব-ডিজিপিকে যোগাযোগ করে বলেছি এমন ঘটনা ঠিক নয়।গতকাল সকাল ৯:০৫-এ মুখ্যসচিব-ডিজিপিকে সাবধান করেছিলাম।রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধানের কথায় সতর্ক হলে এমন ঘটে না।”

এরপর রাজ্যের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে ফের শাসক দল তৃণমূলকে আক্রমণ করে রাজ্যপাল বলেন,”রাজ্যের চারদিকে দুর্নীতি, বিরোধীরা প্রতিবাদের জায়গাই পাচ্ছেন না।বিরোধীদের সমস্ত কার্যকলাপ নৃশংসভাবে দমন করা হচ্ছে।”

প্রসঙ্গত, গতকালের এই ঘটনা নিয়ে রাজ্যপালের কাছে যে রিপোর্ট তলব করেছিল কেন্দ্র তার জবাব ইতিমধ্যেই দিয়ে দিয়েছেন জগদীপ ধনখড়। সাংবাদিক সম্মেলনে সে বিষয়ে জানিয়ে তিনি বলেন,”গতকালের ঘটনা নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকে রিপোর্ট পাঠিয়েছি।এমন ঘটনা আর বরদাস্ত করা হবে না। কয়েকজন আমলা সরকারি চাকুরে না হয়ে, রাজনৈতিক কর্মী হচ্ছেন।২১ জন এমন আমলার নাম তালিকাভুক্ত করেছি। এই গোপন তথ্য মুখ্যমন্ত্রীকে দেব।”শুধু তাই নয় রাজ্যের নিরাপত্তা উপদেষ্টার ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন রাজ্যপাল? অবসর নিয়ে নেওয়ার পরেও তাকে কেন সুবিধা দেওয়া হচ্ছে তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। ধনখড়ের অভিযোগ, এডিজি আইন-শৃঙ্খলা থাকার সময় তিনি মানবাধিকার লঙ্ঘনে অভিযুক্ত ছিলেন।

এর পাশাপাশি একাধিক ইস্যু নিয়ে বারংবার মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিলেও তিনি সাড়া দেননি বলে অভিযোগ করেন রাজ্যপাল জাগদীপ ধনখড়। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন,”রাজ্যে দুর্নীতি-পক্ষপাতমূলক আচরণকে প্রশ্রয় দেওয়া হয়। বেঙ্গল গ্লোবাল বিজনেস সামিটে বিনিয়োগ প্রস্তাব নিয়ে প্রশ্ন আছে।রাজ্য বিনিয়োগ প্রস্তাব বলে যা দেখিয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। কোথায় বিনিয়োগ প্রস্তাব, কতজনের চাকরি? প্রশ্নের জবাব নেই।অথচ ১০ বছরের রিপোর্ট কার্ডে সাফল্যের কথা লেখা হয়।”

শুধু তাই নয়, করোনা মোকাবিলায় দুশো কোটির সরঞ্জাম কেনা প্রসঙ্গে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে তদন্তের রিপোর্ট কোথায়? জানতে চাইলেন রাজ্যপাল। তার অভিযোগ রাজ্যের শাসক দল রাজ্যপালকে জবাব না দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় জবাব দিচ্ছে। রাজ্যপালকে অপরাধী হিসেবে সাজানো হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রকে দেওয়া রিপোর্টে রাজ্যের ভয়াবহ পরিস্থিতির কথা লিখে পাঠানোর বিষয়েও জানান তিনি। জাগদীপ ধনখড় আরো বলেন, রাজ্যপাল কোন রবার স্টাম্প নন। রাজ্যের শাসক দল তাঁর বিরুদ্ধে অপশব্দ প্রয়োগ করা সত্ত্বেও শান্তিপূর্ণ ভোট লক্ষ্যে তিনি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথোপকথনের জন্য প্রস্তুত।