নিজস্ব সংবাদদাতা, টিডিএন বাংলা: কংগ্রেস সাংসদ অধীর রঞ্জন চৌধুরীর সাথে সাক্ষাৎ করলেন ডাক্তার কফিল খান। দিল্লিতে নিজের বাসভবনে ডাক্তার কফিল খানের সাথে এই সাক্ষাতের কথা নিজেই সোশ্যাল মিডিয়ায় জানিয়েছেন অধীর রঞ্জন চৌধুরী।
নিজের ফেসবুক পেজে ডাক্তার কফিল খানের সাথে নিজের ছবি পোস্ট করে এবিষয়ে জানিয়ে অধীর চৌধুরী লিখেছেন,”আজ আমার দিল্লির বাড়িতে ডাঃ কাফিল খান এর সাথে আলাপ ও আলোচনা হল, ডাঃ কাফিল খান যাকে এনএসএ কেসে ফাঁসানো হয়েছিল, বিষয় টি নিয়ে তখন প্রধানমন্ত্রী কেও চিঠি লিখেছিলাম।
তার লাগাতার সত্য সংগ্রামে, কয়েক মাস জেল ও বহু হেনস্থার পর গত 1 লা সেপ্টেম্বর এলাহাবাদ হাই কোর্ট তার বিরুদ্ধে সমস্ত অভিযোগ খারিজ করে তাকে কারামুক্ত করে।”

প্রসঙ্গত, ডঃ কাফিল খানের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে ৪ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি লিখে পাঠান লোকসভায় কংগ্রেসের সংসদীয় নেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরী। ওই চিঠিটি ট্যাগ করে অধীর রঞ্জন চৌধুরী তাঁর অফিশিয়াল টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে একটি টুইট করেন। ওই টুইটে তিনি জানান,সিএএ-এর বিরুদ্ধে যখন তিনি এবং তাঁর মতন আরও অনেকেই প্রতিবাদ করেছেন তখন তাঁদের বিরুদ্ধে এনএসএ অ্যাক্ট অনুযায়ী কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। অথচ ডঃ কাফিল খানের মত একজন পরোপকারী ডাক্তারকে এনএসএ অ্যাক্টের আওতায় আটক করে রেখে দেওয়া হয়েছে।এই পদক্ষেপকে “রামরাজ”-এর আদর্শের পরিপন্থী বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
ডঃ কাফিল খানের মুক্তির দাবিতে টুইট করে অধীর রঞ্জন চৌধুরী লেখেন,”মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শ্রী @নরেন্দ্র মোদিজি, আমি আমার দলের পক্ষ থেকে #সিএএ-এর তীব্র বিরোধিতা করেছি, লক্ষাধিক মানুষ করেছেন, তবে কোনও #এনএসএ আমার এবং অন্যদের ওপর আরোপ করা হয়নি, তাহলে সেই একই কারণে কেন ডঃ কাফিল খানকে আটক করে রাখা হয়েছে! রামরাজ অন্যায়, বৈষম্য এবং প্রতিশোধের বিরোধী।”
ওই চিঠিতে নরেন্দ্র মোদির উদ্দেশ্যে অধীর রঞ্জন চৌধুরী আরও লেখেন, ডঃ কাফিল খানের মুক্তির বিষয়ে আন্তর্জাতিক ফোরাম ‘ইউনাইটেড নেশনে’র পক্ষ থেকেও আবেদন করা হয়েছে। তা সত্ত্বেও এখনো পর্যন্ত ছাড়া পাননি ডঃ কাফিল খানের মত একজন ভাল চিকিৎসক। শুধু তাই নয়, ভারতে বাক স্বাধীনতার অধিকার থাকা সত্ত্বেও কেন ডঃ কাফিল খানকে এভাবে আটক করে রাখা হয়েছে সে বিষয়েও বিস্ময় প্রকাশ করেন তিনি। “রামরাজ”-এর কথা স্মরণ করিয়ে প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদির উদ্দেশ্যে অধীর রঞ্জন চৌধুরী লেখেন যে, “রামরাজ” কখনোই অন্যায়, বৈষম্য এবং প্রতিশোধ এর সমার্থক নয়।
২০১৯ সালের ১৩ই ডিসেম্বর আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সভায় নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরোধিতা করে উস্কানিমূলক মন্তব্য করার অভিযোগে ডক্টর কাফিল খানের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়। ওই এফআইআরের ভিত্তিতে এই ঘটনার ৪২ দিনের মাথায় উত্তরপ্রদেশ পুলিশের স্পেশাল টাস্কফোর্স তাঁকে গ্রেফতার করে। যদিও ডঃ কাফিল খান-এর এই জেলযাত্রা প্রথমবার নয়, এর আগেও ২০১৭ সালে উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুরে বিআরডি হাসপাতালে ৬০ জনেরও বেশি শিশু মৃত্যুর জেরে গ্রেফতার করা হয়েছিল তাঁকে। সে সময় ওই হাসপাতালের শিশু বিভাগের দায়িত্বে থাকা কাফিল খানের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে যে, তিনি অন্যান্য হাসপাতাল থেকে অক্সিজেন সিলিন্ডার সংগ্রহ করেন। পরে আরো অভিযোগ ওঠে যে বিআরডি হাসপাতাল থেকে অক্সিজেন সিলিন্ডার চুরি করে নিজের ব্যক্তিগত ব্যবসা চালাচ্ছিলেন কাফিল খান। আর সেই কারণেই হাসপাতালে অক্সিজেন সিলিন্ডারের ঘাটতি তৈরি হয়। যার জেরে মৃত্যু হয় ওই শিশুদের। যদিও পরে এই ঘটনায় ডঃ কাফিল খান কে ক্লিনচিট দেয় উত্তরপ্রদেশ সরকার। এরপর আলিগড় মুসলিম ইউনিভার্সিটি মঞ্চে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরোধিতা করে আপত্তিজনক মন্তব্য করার জন্য গ্রেফতার হন ডঃ কাফিল খান। এই ঘটনার পর তাঁর আইনজীবীর আর্জি শুনে গত ফেব্রুয়ারি মাসে তাঁকে জেল থেকে মুক্ত করার নির্দেশ দেয় আদালত। কিন্তু, উত্তরপ্রদেশ সরকার ডক্টর কাফিল খানকে ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট অনুযায়ী দোষী ঘোষণা করে। ঘটনাচক্রে এই মামলায় যেদিন তিনি জামিন পান তার কয়েক ঘণ্টা পরেই তাঁকে জাতীয় সুরক্ষা আইনের অধীনে ফের আটক করা হয়।
এরপর দীর্ঘ সাত মাস কারাবাসের পর চলতি মাসের প্রথম তারিখে মুক্তি পান ডাক্তার কাফিল খান।এলাহাবাদ হাইকোর্ট ডক্টর কাফিল খানের মা, নুজহাত পারভিনের দায়ের করা আবেদনের শুনানির সময় কাফিল খানের বিরুদ্ধে থাকা এনএসএর অভিযোগ খারিজ করে দেয়। শুধু তাই নয়, ডক্টর কাফিল খানকে শীঘ্র মুক্তি দেওয়ার জন্য সরকারকে নির্দেশ দেয় এলাহাবাদ হাই কোর্ট। তবে, শর্তসাপেক্ষ জামিনে মুক্তি দেওয়া হয় ডাক্তার কাফিল খানকে।
রায়দানের সময় এলাহাবাদ হাইকোর্ট জানায় এনএসএ বা জাতীয় সুরক্ষা আইনের আওতায় ডাক্তার কাফিল খানকে জেলে বন্দি করে রাখা বেআইনি। শুধু তাই নয়, এলাহাবাদ হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী ডক্টর কাফিল খানের বক্তৃতা, যার জন্য তাঁর বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক বক্তব্যের অভিযোগ করা হয় এবং পরে এনএসএর ধারায় গ্রেফতার করা হয় সেই বক্তব্য মোটেও উস্কানিমূলক ছিল না বরং দেশের মানুষের উদ্দ্যেশ্যে সাম্য এবং ঐক্যের আহ্বান ছিল।