রেবাউল মন্ডল, টিডিএন বাংলা: ২৭ জুন প্রকাশিত বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএ এলএলবি’র ঈদের দিন (রবিবার) পরীক্ষার রুটিন দেখে অবাক হলাম। এতদিন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ঈদের আগের ও পরের দিন পরীক্ষার রুটিন দেখে এসেছি। এখন দেখছি ঈদের দিনেও! সংখ্যালঘু মুসলিম বছরে দুটি বাৎসরিক পরব। ঈদ ঈদুল ফিতর এবং ঈদ-উল-আযহা মুসলমান সমাজের সর্বশ্রেষ্ঠ উৎসব। রাজ্যে মুসলমান সম্প্রদায়ের বাস প্রায় ৩০ শতাংশ। দুর্ভাগ্য ঈদ আজও মুসলমান সম্প্রদায়ের ঊর্ধে উঠে বাঙালির উৎসব হতে পারল না। দুই ঈদে তিনটি করে ছুটির দাবিও বহুদিনের। তা নিয়ে ডেপুটেশন লেখালেখিও কম হয়নি।
তর্কের খাতিরে যদি ধরেই নিই ঈদ সার্বজনীন হতে না পারার জন্য মুসলমানরাই দায়ী, যদি আরও ধরি উৎসব হিসেবে ঈদ সার্বজনীন হওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু তাই বলে ঈদের দিন পরীক্ষা! তাও আবার রবিবার! ঈদের আগের দিন ও পরের দিন পরীক্ষা! উল্লেখ্য, এবছর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ও ৯, ১১ ও ১২ জুলাই পরীক্ষা রেখেছিল। পরে সংশোধনী রুটিনে ১, ২ ও ৩ জুলাই করেছে।
ঈদ যেহেতু চাঁদ দেখার উপর নির্ভর করে হয় তাই অনেক ক্ষেত্রেই এ নিয়ে একটা অনিশ্চয়তা থাকে। নির্ধারিত দিনের আগের বা পরের দিন ঈদ হয়েছে এমন বহুবার হয়েছে। অথচ ঈদের আগের দিন বা পরের দিন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় গুলির পরীক্ষা রাখার এই প্রবণতা সেই ছাত্র জীবন থেকেই দেখে আসছি।
তারপর সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিবাদের ঝড় উঠে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বিভিন্ন সংখ্যালঘু সংগঠনের পক্ষ থেকে ডেপুটেশন সহ সাধারণ মানুষের ফোন, মেল যায়। তারপর তারা ‘অনিচ্ছাকৃত ভুল’ বিবৃতি দিয়ে রুটিন সংশোধন করেন। বরাবর এটাই হয়ে আসছে। এবারও তার অন্যথা হবে না।
সংখ্যালঘু পড়ুয়াদের ‘টাইট’ দিতে গিয়ে ঈদের দিনকেই বেছে নেওয়ার টার্গেট মনে হচ্ছে। ক্যালেন্ডারে ঈদের দিন খুঁজতে গিয়ে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মনে হচ্ছে ভুলেই গেছে এবারের ঈদ রবিবার পড়েছে। রবিবারেও এক্সাম! কি অদ্ভুত এবং হাস্যকর! কলকাতায় পড়া উত্তরবঙ্গের ছাত্রটা কীভাবে ঈদের পরের দিন এসে পরীক্ষা দেবে? ভেবে দেখেছেন কখনো? বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এমন দায়িত্বজ্ঞানহীনতায় সংখ্যালঘু সমাজ যথেষ্টই উদ্বিগ্ন।
কিন্তু প্রশ্ন হল এভাবে আর কতদিন? আর কত দশক পেরুলে তবেই কর্তৃপক্ষের ‘অনিচ্ছাকৃত ভুল’ থেকে মুক্তি পেয়ে অন্তত বছরের তিনটি দিন পরিবারের সঙ্গে সানন্দে ঈদ কাটাতে পারবে রাজ্যের সংখ্যালঘু পড়ুয়ারা? এই দায়িত্বজ্ঞানহীন প্রবণতা বন্ধ করতে অবিলম্বে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীর হস্তক্ষেপের দাবি জানাচ্ছি।