HighlightNewsরাজ্য

জুয়া আর লটারির ফাঁদে ধ্বংস হচ্ছে পরিবার ও সমাজ, বাড়ছে দুর্নীতি-দুর্বৃত্ত, এর বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামল ওয়েলফেয়ার পার্টি

আব্দুস সালাম, টিডিএন বাংলা: গ্রাম থেকে শহর সর্বোত্র ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠছে অগণিত লটারির দোকান আর জুয়ার আড্ডাখানা। এরই বিরুদ্ধে বড়োসড়ো আন্দোলনে নামল ওয়েলফেয়ার পার্টি অব ইন্ডিয়ার পশ্চিমবঙ্গ শাখা। “চাই সুদ মুক্ত অর্থনীতি, মদ মুক্ত দেশ, জুয়া মুক্ত জনজীবন, ঘুষ মুক্ত পরিবেশ” শিরোনামে শুরু হওয়া এই আন্দোলনের কারণ হিসাবে দলটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মূলত ‘ক্রমশ্য সমাজকে গ্ৰাস করতে থাকা এই অভিশপ্ত জুয়া-লটারির বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের সচেতন করতে এবং এর বিরুদ্ধে সরকারকে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে এই আন্দোলন।’ বর্তমান আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে এই আন্দোলন কতটা যুক্তিসঙ্গত বা সাধারণ মানুষ জুয়া-লটারি খেলাকে কিভাবে দেখছেন বা যারা খেলেন তাদের মতামত কি এই বিষয়ে জানতে চেষ্টা করে টিডিএন বাংলা।

“চাই সুদ মুক্ত অর্থনীতি, মদ মুক্ত দেশ, জুয়া মুক্ত জনজীবন, ঘুষ মুক্ত পরিবেশ”- এই ক্যাম্পেনের লক্ষ্য উদ্দেশ্য কি এমন প্রশ্নের উত্তরে ওয়েলফেয়ার পার্টির রাজ্য সাধারণ সম্পাদক সারওয়ার হাসান বলেন, “বর্তমান সমাজের সবচেয়ে বড়ো সমস্যা হচ্ছে সুদ ভিত্তিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা। এর ফলে সাধারণ জনতা দরিদ্র থেকে দরিদ্রতর হচ্ছে আর ধনীরা আরও ধনী হচ্ছে। আর একটি বড়ো সমস্যা হচ্ছে সরকার স্বীকৃত জুয়া-লটারি-মদের রমরমা ব্যবসা। ঘুষও বর্তমান সমাজের আর একটি কঠিন ব্যধিতে পরিণত হয়েছে। এর ফলে ছাত্র-যুবরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। আমরা এই সমস্ত সমস্যাগুলির স্থায়ী সমাধানের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি। কারণ আমরা মনে করি এই সমস্যা রাজনৈতিক ভাবে উদ্যোগ নিলেই দ্রুত সমাধান সম্ভব।”

এই প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করা হলে জুয়া-লটারি খেলে সর্বশান্ত হওয়া নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজারহাট এলাকার বাসিন্দা এক ব্যক্তি বলেন, “তাড়াতাড়ি বড়োলোক হওয়ার নেশায় আমি নিয়মিত লটারি কাটতাম। দুই একবার টাকাও পেয়েছি, কিন্তু আরও বেশি টাকার নেশায় আমি বেশি বেশি লটারি কাটা শুরু করেছিলাম। এখন আমি সমস্ত কিছু ক্ষুইয়ে পথের ভিখারি।” বারাসাত এলাকার অপর এক ব্যক্তি বলেন, “জুয়া খেলে খেলে আমি আজ সব কিছু হারিয়েছি। জুয়ার টাকা জোগাড় করতে ন্যায়-অন্যায় ভুলে আমি যে কোনো পথ অবলম্বন করেছি। এই জুয়া আমার অনেক বন্ধুর সংসার ভেঙেছে। এখন আমি খুশি দেরিতে হলেও নিজের ভুল বুঝতে পেরে সর্বনাশা পথ ছেড়ে ফিরে এসেছি।”

এই নিয়ে খোঁজ খবর নিতে গিয়ে অবাক হলাম যে জুয়া-লটারি খেলেন এমন প্রায় প্রত্যেকেই স্বীকার করেন তারা যা করছেন সেটা ঠিক নয়। এই ধরনের জুয়া-লটারি খেলা লোকদের সমাজের মানুষ যে ভালো বলেন না সেটাও তারা খুব ভালো করেই জানেন। যে কারণে অধিকাংশই তাদের এই অসামাজিক কাজের খবর গোপন রাখার চেষ্টা করেন। তবে এই সামাজিক ব্যাধি মারাত্মক ভাবে ছড়িয়ে পড়ার জন্য যে শুধু তারাই দায়ী এমনটাও মনে করেন না সমাজকর্মীরা। এর জন্য কর্মসংস্থান না থাকা, যখন তখন কর্মী ছাঁটাই, একদিকে প্রতি নিয়ত আকাশ ছোঁয়া মূল্য বৃদ্ধি ও অপরদিকে সংসারের খরচ ক্রমশ্য বৃদ্ধি পাওয়া ইত্যাদি এই সমস্ত কারণেই এই সামাজিক ব্যাধি দ্রুত হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে মনে করছেন তারা।

জুয়া-লটারির ক্ষতিকারক দিকগুলি জানার পরেও কেন এই ফাঁদে পা দিয়েছেন এমন প্রশ্নের উত্তরে নাম না প্রকাশের শর্তে এক ব্যক্তি টিডিএন বাংলাকে বলেন, “আমি অনেক খোঁজাখুঁজি করেও কোনো ভালো কাজ পাইনি। সংসারের খরচ চালানও দিন দিন প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ছিল। অল্প খরচে তারাতারি বেশি টাকা আয়ের জন্য আমি এই পথ বেছে নিয়েছি।” তবে তিনি জানিয়েছেন জুয়া ও লটারি তাকে আরও পথে বসিয়েছে। অন্যদিকে ভাঙড়ের বাসিন্দা একজন লটারি বিক্রেতা সাবির আলি বলেন, “আমি পঙ্গু খাটাখাটনি করতে হবে এমন কোনো কাজ করার মতো ক্ষমতা আমার নেই। সেই কারণেই বাধ্য হয়ে আমি লটারির দোকান চালাচ্ছি। তবে আমি জানি এটা মোটেও ভালো পেশা নয়। আমি সুযোগ পেলে এই কাজ ছেড়ে ভালো কোনো কাজ করবো।”

এই জুয়া আর লটারির ফাঁদে বিশেষ করে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে যুব সমাজ। তারা অল্প সময়ের মধ্যেই না খেটে ধনী হওয়ার আশায় বিলিয়ে দিচ্ছে নিজের এবং পরিবারের সব সঞ্চিত সম্পদ। এই প্রসঙ্গে সাধারণ সচেতন মানুষ কি ভাবছেন তাও আমরা জানার চেষ্টা করেছি। চাঁদপুর অঞ্চলের সাহালোম গোলদার নামে এক ব্যক্তি বলেন, “জুয়া লটারী খেলা ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেও অবৈধ। আবার সমাজে এর ক্ষতিকারক প্রভাবও অনেক বেশি।  বেশিরভাগ যুবসমাজ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এর দ্বারা। অসংখ্য যুবককেই দেখি এরা দিনের সিংহভাগ রোজগার এই খাতে ব্যয় করে। ফলে অধিকাংশ পরিবার আজ রসাতলে যাচ্ছে।” অপর এক ব্যক্তি বলেন, “অনেক সময় দেখা যায় জুয়ার টাকা না পেয়ে নিজের বাবা, মা, দাদা বা স্ত্রীকে খুন পর্যন্ত করেন কেউ কেউ। এই নেশা মানুষকে তথা সমাজকে ধ্বংস করছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত অধিকাংশ ক্ষেত্রে আমাদের দেশের রাজনৈতিক ব্যক্তিরাই এই সমস্ত ব্যবসাগুলো পরিচালনা করেন।”

Related Articles

Back to top button
error: