খুশী নয় কৃষকরা আলোচনা ছাড়াই কৃষি বিল প্রত্যাহার সংসদে

মুহাম্মদ নুরুদ্দিন,লেখক

মুহাম্মাদ নূরুদ্দীন:  একেই বলে ভাঙবে তবু মচকাবে না। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আক্ষরিক অর্থে সেটাই করে দেখালেন। চরম অনিচ্ছা সত্ত্বেও বলা যায় কৃষি বিল প্রত্যাহার করতে বাধ্য হলেন তিনি। নির্বাচন বড় বালাই। উত্তর প্রদেশসহ বেশ কয়েকটি রাজ্যের নির্বাচন আসন্ন। পশ্চিমবঙ্গে আশানুরূপ সাফল্য না মেলার পর থেকে ভারতীয় জনতা পার্টির শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে আত্মসমীক্ষা শুরু হয়েছে। কৃষকদের আন্দোলনকে গুরুত্ব না দেওয়া, গায়ের জোরে কৃষি বিল এনে তা আইনে পরিণত করা, দেশজুড়ে অসন্তোসের অন্যতম কারণ বলে তাদের মনে হয়েছে। তাই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি স্বতপ্রণোদিত হয়েই ঘোষণা করেছিলেন তাঁর সরকারের আনা তিনটি কৃষি আইন বাতিল করা হবে। কিন্তু মোদির এই আশ্বাসেও চিড়ে ভেজেনি। কৃষকরা তাদের দাবিতে এখনো অনড়। তাদের বক্তব্য প্রধান মন্ত্রীর কথার উপর আস্থা রাখা যায় না। যতক্ষণ না সংসদে বিল প্রত্যাহার হচ্ছে ততক্ষণ তারা বিশ্বাস করেন না। একজন প্রধানমন্ত্রীর জন্য এটা কতটা অমর্যাদাকর তা সহজেই অনুমেয়। কিন্তু এতেও বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখায়নি প্রধানমন্ত্রী ও তার দপ্তর। কথা রাখতে শীতকালীন অধিবেশনের প্রথম দিনেই তিনি বিল প্রত্যাহারের কথা বললেন এবং কোনো আলোচনা ছাড়াই এই সংসদের নিয়ে আসা বিল আবার সংসদ বাতিল করে দিল। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে সরকারের মানসিকতা নিয়ে। সরকার চাপে পড়ে নতি স্বীকার করলেও কোনভাবেই গণতান্ত্রিক রীতিনীতি আলাপ-আলোচনার ধার ধরার প্রয়োজন মনে করেন না প্রধানমন্ত্রী। তিনি আবারও বলেছেন এবার থেকে সব বিষয়ে আলোচনা করা হবে এবং সকল প্রশ্নের জবাব দেয়া হবে। তিনি এও জানান নাগরিক সমাজ সরকারের আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণকে পছন্দ করেন তাই সরকার এ বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করবে।

কিন্তু কৃষি বিল প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়ার সময় তিনি যে ভাষা প্রয়োগ করেন তা নিয়েও আপত্তি আছে কৃষক নেতাদের। তিনি বলেছিলেন তাদের তপস্যাতে কোন ভুল ছিল। তারা সব কৃষককে বোঝাতে পারেন নি। এই কথার মধ্য দিয়ে যে প্রকারান্তরে কৃষি আইনের পক্ষে সওয়াল করা হলো এবং কৃষকরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে যে ভুল করছে সেই বার্তা দেয়া হলো। অথচ কৃষকদের দাবি ছিল সরকার তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসুন। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হোক। কিন্তু মোদি সরকার সে রাস্তায় পা মাড়ায়নি। এদিকে সংসদের কৃষি বিল প্রত্যাহার বিষয়ে আলোচনার দাবী নিয়ে বিরোধী সাংসদদেরকে গান্ধী মূর্তির পাদদেশে বিক্ষোভ করতে দেখা যায়। প্রশ্ন হল, কৃষি আইন প্রত্যাহার হবে কিন্তু কৃষক সমাজের সহানুভূতি কি পাবে মোদি সরকার? কেননা, দীর্ঘ প্রায় এক বছর ধরে চলা আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের কথা একবারও মুখে আনেননি প্রধানমন্ত্রী। তাদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা দেখানোর প্রয়োজন মনে করেননি তিনি। সমস্ত প্রক্রিয়ার মধ্যে একটি গাজোয়ারি মনোভাব এখনো বিরাজ করছে সরকারের। গণতান্ত্রিক দেশের জন্য এটা কোনভাবেই কাম্য হতে পারে না। সরকার ও জনগণ, প্রচার মাধ্যম ও আদালত সবটাই গণতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ। কোথাও গায়ের জোরে কিছু করার মানসিকতা দেখানো হলে তার ফল ভালো হয় না। জনগণের ভালো চাইতে গেলেও জনগণকে সাথে নিয়ে অগ্রসর হতে হয়। কোন কিছু জোর করে চাপিয়ে দিতে গেলেই তাতে হীতে বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। আসলে এ দেশে চলছে কয়েকজন পুঁজিপতি ব্যবসায়ীকে পাইয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া। কৃষি আইন সংশোধন, নতুন তিনটি কৃষি আইন নিয়ে আসা এবং কোনকিছুকেই তোয়াক্কা না করে তাকে চাপিয়ে দেওয়ার মানসিকতার মধ্যে রয়েছে এই পুঁজিপতিদের চাপ। জাতীয় সম্পদ একের পর এক বিক্রি করে তাদের হাতে তুলে দিচ্ছে সরকার। আর তারা রাতারাতি বিশ্বের সেরা ধনীতে পরিণত হয়ে যাচ্ছে। এভাবে নিঃস্ব হচ্ছে ভারত আর পোয়াবারো হচ্ছে আদানি আম্বানিদের। যতদিন না সরকার তার এই মানসিকতা ত্যাগ করবে ততদিন তাদের কাছ থেকে কিছু ভালো আশা করা যায় না। হয়তো জনগণ আজ সে বিষয়টা বুঝতে শুরু করেছে। যত তাড়াতাড়ি মানুষ এই চালাকি ধরতে পারবে ততই দেশের জন্য কল্যাণ।