HighlightNewsআন্তর্জাতিক

যে সমস্ত কারণে গোটা পশ্চিমা বিশ্বের নজর ছিল এরদোয়ানের জয় পরাজয়ের দিকে

টিডিএন বাংলা ডেস্ক: তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান বর্তমান বিশ্বে অন্যতম প্রভাবশালী রাষ্ট্রপ্রধান। বিশ্ব রাজনীতিতে ভূমিকার পাশাপাশি প্রভাব বিস্তার করে চলছেন। বিশেষ করে পশ্চিমা বিশ্বে তুরস্ককে মাথা তুলে দাঁড় করিয়েছেন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায়। এরদোয়ান ২০০৩ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। এরপর প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে তুরস্কের জনগণ তাকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করে। এবার টানা তৃতীয় মেয়াদে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন তিনি। আগামী পাঁচ বছর আন্তর্জাতিক অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান নিয়ে চলা তুরস্কের নেতৃত্ব দেবেন।

ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে তুরস্কের বৈশ্বিক কৌশলগত তাৎপর্য ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশ্ব নেতাদের শীর্ষ তালিকায় থাকা ব্যক্তিরা এরদোয়ানকে নির্বাচনে বিজয়ের জন্য অভিনন্দন জানান। এ তালিকায় প্রথমেই ছিলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তিনি তার তুর্কি বন্ধুকে অভিনন্দন জানাতে ভোটের আনুষ্ঠানিক ফলাফলের জন্যও অপেক্ষা করেননি।

রাশিয়া তুর্কির যেসব নীতিকে বিশেষভাবে পছন্দ করে তা হলো, ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার আগ্রাসনের পর ক্রেমলিনকে বহিষ্কার করতে এরদোয়ানের অস্বীকৃতি। যদিও ন্যাটোতে থাকা তুরস্কের মিত্ররা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে এবং রাশিয়ার ওপর তাদের নির্ভরতা কমিয়েছে। কিন্তু তুরস্কের সাথে ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে রাশিয়ার বাণিজ্য উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। রোববার এরদোয়ানের বিজয়ে পুতিনের অভিনন্দনে উত্তপ্ত হয়ে ওঠেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ।

বিবিসির প্রতিবেদন বলছে, ক্রেমলিনের সঙ্গে এরদোয়ানের ঘনিষ্ঠতা এবং প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার প্রথম দুই মেয়াদে বাকস্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক রীতিনীতি খর্ব করার ব্যাপারে পশ্চিমাদের যথেষ্ট ক্ষোভ রয়েছে। তাদের অপছন্দ সত্ত্বেও তুরস্ক পশ্চিমের একটি গুরুত্বপূর্ণ মিত্র। বর্তমানে তুরস্ক ন্যাটো সামরিক জোটের একটি গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। তারা ন্যাটোর সঙ্গে সব মিশনেও অংশ নেয়। অপরদিকে, এরদোয়ান রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখচেন। আবার ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তাও সরবরাহ করেন।

ইউক্রেন যুদ্ধে এরদোয়ানের গুরুত্বপূর্ণ একটি ভূমিকা হলো, তিনি একটি চুক্তির মধ্যস্থতা করেছেন, যে চুক্তির মাধ্যমে রাশিয়া ইউক্রেনের শস্য সরবরাহের ওপর অবরোধ তুলে নেয়। এর ফলে এসব শস্যের ওপর নির্ভরশীল বিশ্বের কিছু অংশ প্রবাহিত হতে পারে। দীর্ঘ দ্বিধা-দ্বন্দ্বের পরও এরদোয়ান রাশিয়ার প্রতিবেশী ফিনল্যান্ডকে ন্যাটোতে যোগদানের আনুষ্ঠানিক অনুমোদন দেন। একসময় তুরস্কের ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগদানের পক্ষে ছিলেন এরদোয়ান। বর্তমানে তিনি তুরস্ককে আবার ‘মহান করে তোলার’ কথা বলছেন। তার মতে, এর জন্য আরও স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি থাকা প্রয়োজন। বছরের পর বছর ধরে তিনি সব মিত্রদের সঙ্গে অত্যন্ত ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন।

এদিকে, সুইডেনকে ন্যাটোর সদস্যপদ দিতে এরদোয়ানকে রাজি করাতে হোয়াইট হাউজ অধৈর্যতার কথা গোপন করেনি। গুরুত্বপূর্ণ বাল্টিক সাগরে প্রভাব বিস্তার করতে ন্যাটো জোটে সুইডেনকে প্রয়োজন। পশ্চিমারা আশা করছে, তুরস্কের আর্থিক স্থিতিশীলতা এবং বিদেশি বিনিয়োগ আরও বাড়াতে এরদোয়ানকে দিকে মনোনিবেশ করতে হবে সুইডেনের ন্যাটোর অন্তর্ভুক্তির দিকে। তুরস্ক এবং হাঙ্গেরি একমাত্র ন্যাটো দেশ, যারা এখনও ন্যাটোতে স্টকহোমের সদস্যপদ আটকে রেখেছে।

অপরদিকে, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ ইউরোপীয় ইউনিয়নে অভিবাসন নিয়ে উদ্বিগ্ন। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের কাছ থেকে অভিবাসন বিষয়ে বার্তার আশা করছেন। ২০১৫ সালের অভিবাসন সংকটের সময় ১০ লাখেরও বেশি শরণার্থী ও আশ্রয়প্রার্থী- বিশেষ করে সিরিয়া থেকে মানব পাচারকারীদের নৌকায় ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিভিন্ন দেশে যাত্রা করে। পরে ব্রাসেলস তুরস্কের সঙ্গে একটি চুক্তি করে।

কিন্তু সিরীয় শরণার্থীদের ক্রমবর্ধমান সংখ্যা বৃদ্ধি তুর্কিদের কাছে এরদোয়ানের জনপ্রিয়তা কমিয়েছে। চলতি মাসে তুরস্কের পার্লামেন্ট নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রতিটি রাজনৈতিক দল ‘অভিবাসী ইস্যু’ সমাধানে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের আরেক সদস্য গ্রিস এজিয়ান সাগরের বেশ কয়েকটি দ্বীপ নিয়ে এরদোয়ানের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়েছে। ব্রাসেলসও প্রতিরক্ষামূলক অবস্থানে রয়েছে। অন্যদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য সাইপ্রাস প্রায় ৫০ বছর আগে তুর্কি আগ্রাসনের পর কয়েক দশক ধরে অচলাবস্থায় রয়েছে।

বিবিসির ইউরোপ বিষয়ক এডিটর কাতিয়া অ্যাডলার বলছেন, পশ্চিমারা তুরস্কের কৌশলগত গুরুত্বকে ইউরোপ এবং মধ্যপ্রাচ্যের মধ্যে ‘সেতুবন্ধন’ হিসাবে বর্ণনা করতো। কিন্তু ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন তুরস্কের অবস্থানকে বদলে দিয়েছে। এরদোয়ান ক্ষমতায় আসার তৃতীয় দশকে তার কাছ থেকে পররাষ্ট্রনীতিতে বড় ধরনের চমক আশা করেন খুব কম মানুষই। তবে কৌশলগত মিত্ররা খুব নিবিড়ভাবে আঙ্কারাকে পর্যবেক্ষণ করছে। কেননা তুরস্ক কী করছে তা পশ্চিমা বিশ্বের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সূত্র – দৈনিক ইত্তেফাক

Related Articles

Back to top button
error: