জাতি বিদ্বেষমূলক মন্তব্যের জেরে গ্রেফতার প্রাক্তন ক্রিকেটার যুবরাজ সিং, পেলেন অন্তর্বর্তীকালীন জামিন

টিডিএন বাংলা ডেস্ক : কিছুদিন আগে রোহিত শর্মার সঙ্গে ইনস্টাগ্রাম লাইভে এসে ভারতীয় দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় যুজবেন্দ্র চাহালের বিরুদ্ধে জাতি বিদ্বেষ মূলক মন্তব্য করেন যুবি। অভিযোগ, অন্যান্য ক্রিকেটারকে নিয়ে মশকরা করতে গিয়ে দলিতদের অসম্মান করে বসেন যুবি।

তিনি সেই লাইভ চ্যাটে লিখেছিলেন, ‘‘ইয়ে b****i লোগ কো কাম নেহি হ্যায়, ইয়ে যুজি অউর ইসকো (কুলদীপ)৷ যুজি কো দেখ ক্যায়া ভিডিও ডালা হ্যায় আপনি ফ্যামিলি কে সাথ৷’’

যা নিয়ে তৈরি হয় প্রচুর ক্ষোভ। এর পরেই তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। সেই কারণেই তাকে রবিবার গ্রেফতার করা হয়েছে।জাতিবিদ্বেষমূলক মন্তব্যের জন্য হরিয়ানায় হিসারের পুলিশ আধিকারিকরা রবিবার তাঁকে গ্রেপ্তার করেন। স্বাভাবিকভাবেই তার গ্রেফতারিতে হইচই পড়ে গিয়েছে ক্রিকেটমহলে।

গ্রেফতারির কিছুক্ষণ পর অন্তর্বর্তীকালীন জামিনে মুক্ত হয়ে গিয়েছেন প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেটার। হিসারের হাঁসির পুলিশ সুপার নীতিকা গেহলট জানিয়েছেন, পঞ্জাব এবং হরিয়ানা হাইকোর্টের নির্দেশ মতো তদন্তকারী অফিসার ডেপুটি পুলিশ সুপারের বিনোদ শংকরের কাছে আসেন যুবরাজ। তদন্তে যোগ দেন। হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে তাঁকে জামিনে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। হাঁসির পুলিশ সুপার বলেছেন, ‘গ্রেফতারির পর অন্তর্বর্তীকালীন জামিনে ছাড়া পেয়েছেন উনি। ইতিমধ্যে আমরা তাঁর ফোন নিয়েছি।’ ডেপুটি পুলিশ সুপার ‘কাগজ-কলমে’ গ্রেফতারির উপর জোর দিয়েছেন।

কয়েকদিন আগেই এই সংক্রান্ত মামলায় হাই কোর্ট থেকে আগাম জামিন নিয়েছিলেন যুবরাজ সিং। এদিন তাই তদন্তে সাহায্য করতেই হিসারে এসেছিলেন প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেটার। সঙ্গে ছিলেন তাঁর নিরাপত্তারক্ষী এবং উকিল। এরপরই আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁকে গ্রেপ্তার করেন পুলিশ আধিকারিকরা। এরপরই কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা হয় যুবরাজকে। তারপর আগাম জামিনের কাগজের ভিত্তিতে তাঁকে ছেড়েও দেওয়া হয়েছে।

হাঁসির এক আইনজীবী রজত কালসান তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। তিনি দাবি করেন, যুবরাজের মন্তব্যে দলিত সম্প্রদায়ের মানুষের ভাবাবেগে আঘাত লেগেছে। প্রচুর মানুষ সেই ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখেছেন। ওই আইনীজীবীর অভিযোগের ভিত্তিতে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৫৩এ ধারা, ১৫৩বি এবং তফসিলি জাতি ও উপজাতি আইনের (প্রতিরোধ এবং নৃশংসতা) ৩ (১) (ইউ) ধারায় মামলা রুজু করা হয়।

পরে অবশ্য নিজের ভুল বুঝতে পেরে ক্ষমাও চেয়ে নিয়েছিলেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় জানিয়েছিলেন, “আমি কখনওই জাত-পাত, বর্ণ কিংবা লিঙ্গের ভেদাভেদে বিশ্বাসী নই। আমি প্রতিটি মানুষকে সমানভাবেই দেখি ও তাঁদের হিতে কাজ করার চেষ্টা করি। নিঃস্বার্থে একে অপরের পাশে দাঁড়ানোই জীবন।” যদিও যুবির নিঃশর্ত ক্ষমার পরও গোটা বিষয়টি নিয়ে রাগ পুশে রেখেছিলেন হরিয়ানার বাসিন্দাদের একাংশ। তারই প্রমাণ মিলল এবার। সেই ঘটনার প্রায় আট মাস পর দায়ের হয় এফআইআর।

সেই এফআইআর খারিজের আর্জি জানিয়ে চলতি বছরের গোড়ার দিকে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন যুবরাজ। তারইমধ্যে সেই মন্তব্যের জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষমা চেয়েছিলেন তিনি। বলেছিলেন, ‘আমি বুঝতে পারছি যে আমার বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলার সময় আমায় ভুল বুঝেছেন। যা অযাচিত ছিল। তবে দায়িত্ববান ভারতীয় হিসেবে আমি বলতে চাই যে যদি অনিচ্ছাকৃতভাবে কারও ভাবাবেগে আঘাত দিতে থাকি, তাহলে আমি ক্ষমা চাইছি।’