আজ রাশিয়ায় যুক্ত হচ্ছে ইউক্রেনের চার অঞ্চল
টিডিএন বাংলা ডেস্ক: ইউক্রেনের খেরসন, জাপোরিঝঝিয়া, দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চল আজ শুক্রবার আনুষ্ঠানিকভাবে রুশ ফেডারেশনের সঙ্গে যুক্ত হতে যাচ্ছে। এমন সময়ে এই চারটি অঞ্চল রাশিয়ার অন্তর্ভুক্ত হতে যাচ্ছে, যখন এসব এলাকা উদ্ধারে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ইউক্রেন। একই সঙ্গে পশ্চিমা বিশ্ব এই পদক্ষেপের সমালোচনা করে রাশিয়ার ওপর আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দিয়েছে।
এই চার অঞ্চল নিজেদের অংশ ঘোষণার লক্ষ্যে রাশিয়ার মস্কোর ক্রেমলিন হলে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। বেলা তিনটায় এই অনুষ্ঠান শুরু হবে। অনুষ্ঠানে পুতিন বক্তৃতা করবেন, পাশাপাশি নথিপত্রে স্বাক্ষর করবেন। এ ছাড়া ক্রেমলিন ওয়াল থেকে একটু দূরে রেড স্কয়ারে একটি কনসার্টেরও আয়োজন করা হয়েছে। এ বিষয়ে পুতিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, গণভোটের পর এই চার অঞ্চলের শাসকের আহ্বানে সাড়া দিতে তাদের রুশ ফেডারেশনের সঙ্গে যুক্ত করা হচ্ছে। এ–সংক্রান্ত নথিতে স্বাক্ষরের পর পুতিন গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দেবেন।
তবে রেড স্কয়ারে যে কনসার্টের আয়োজন করা হয়েছে, সেখানে পুতিন যাবেন কি না, তা নিশ্চিত নয়। তবে ২০১৪ সালে ক্রিমিয়ার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর ঠিক একই রকম একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। সেই সময় অবশ্য রেড স্কয়ারে গিয়েছিলেন তিনি। আজ মস্কো শহরে যখন উৎসবের আমেজ থাকবে, তখন ইউক্রেনের কিয়েভে থাকবে চাপা উত্তেজনা। রাশিয়ার এই দখলের পর কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে, তা নিয়ে বৈঠক ডেকেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। দেশটির নিরাপত্তা বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তা ও রাজনীতিবিদেরা বৈঠকে থাকবেন।
এই বৈঠকের আগেই গতকাল বৃহস্পতিবার জেলেনস্কি বলেছেন, রাশিয়ার তথাকথিত গণভোটের কোনো মূল্য নেই। এতে বাস্তবতার কোনো পরিবর্তন হবে না। ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতা ফিরিয়ে আনা হবে। রুশ পদক্ষেপের কঠোর জবাব দেওয়া হবে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইতিমধ্যে ঘোষণা দিয়েছে, তারা রাশিয়ার ওপর আরও নিষেধজ্ঞা আরোপ করবে। তবে ইইউর পক্ষ থেকে যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে, সেটি নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে। হাঙ্গেরি বলেছে, এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় জ্বালানি থাকলে তারা তাতে সমর্থন দেবে না।
রাশিয়ার মিত্র হিসেবে পরিচিত সার্বিয়া, কাজাখস্তানও বলছে, রাশিয়ার এই পদক্ষেপের স্বীকৃতি তারা দেবে না। আর ইউক্রেন ও রাশিয়াকে আলোচনার টেবিলে বসানো তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানও পুতিনের এই পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়েছেন। ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে এর আগে রাশিয়ার বিরুদ্ধে সাত দফা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ইইউ। এবার নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলে আটবারের মতো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে।
ইউক্রেনের ভূমি রাশিয়ার দখলে যাওয়ার ঘটনা এবারই প্রথম নয়। এর আগে ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া দখল করে গণভোট দিয়ে সেই এলাকা রুশ ফেডারেশনের সঙ্গে যুক্ত করা হয়। এবার খেরসন, জাপোরিঝঝিয়া, দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চল রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে যাচ্ছে। রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন আজ যে ঘোষণা দেবেন, তাতে ১৫ শতাংশ ভূখণ্ড ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাবে। এসব এলাকা হাতছাড়া হলে ইউক্রেনের কৃষি উৎপাদন ১৩ থেকে ১৬ শতাংশ কমে যাবে।
যুক্তরাজ্যের গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান–এর খবরে বলা হয়েছে, এই ভূখণ্ডের আয়তন ৯০ হাজার বর্গকিলোমিটার, যা কিনা হাঙ্গেরি কিংবা পর্তুগালের মতো দেশের ভূখণ্ডের সমান। এ প্রসঙ্গে ইকোনমিস্ট–এর সাংবাদিক শশাঙ্ক জোশি বলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর কোনো দেশ ইউরোপের কোনো দেশের এত বড় ভূখণ্ড জোর করে দখল করতে পারেনি। এরপরও দোনেৎস্কে সামরিক অভিযান চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন পুতিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ। তিনি বলেন, এখনো দোনেৎস্কের ৪০ শতাংশ এলাকা ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এসব এলাকার নিয়ন্ত্রণ না পাওয়া পর্যন্ত রুশ বাহিনী লড়াই চালিয়ে যাবে।
তবে রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে যাওয়া এলাকা ফেরত পেতে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ইউক্রেন। খারকিভের বেশ কিছু এলাকার নিয়ন্ত্রণ ইতিমধ্যে ফিরে পেয়েছে ইউক্রেনের বাহিনী। এ ছাড়া লিমান শহর আস্তে আস্তে ঘিরে ফেলছে ইউক্রেনের বাহিনী। সামরিক বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, এই এলাকাও ইউক্রেনের কাছে ফেরত আসবে। এ পরিস্থিতিতে আরও অস্ত্র দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ফলে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ আরও তীব্র হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। সূত্র- প্রথম আলো