HighlightNewsআন্তর্জাতিক

ফুরিয়েছে পেট্রল, ওষুধ ও নিত্যপণ্য, নেই আমদানি করার মত ডলার, চরম সংকটে শ্রীলঙ্কা

টিডিএন বাংলা ডেস্ক: সোমবার নব-নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহ জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিতে গিয়ে দেশবাসীকে সতর্ক করে বলেন যে, ‘আগামী কয়েক মাস আমাদের জীবনের সবচেয়ে কঠিন মাস হবে। সত্যকে আড়াল করার এবং জনসাধারণের কাছে মিথ্যা বলার কোনো ইচ্ছা আমার নেই।’ এদিন বিক্রমাসিংহ জাতির উদ্দেশ্যে বলেন, “আমাদের কিছু ত্যাগ স্বীকার করতে এবং এই সময়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য নিজেদের প্রস্তুত করতে হবে।”

তিনি আরও জানিয়েছেন, শ্রীলঙ্কার পেট্রল ফুরিয়ে গেছে এবং কয়েক দিন চলার মতো ওষুধ ও প্রয়োজনীয় নিত্যপণ্য আমদানির অর্থায়নের জন্য ডলারও নেই। এখনই আমদানির জন্য জরুরিভিত্তিতে ৭৫ মিলিয়ন ডলার দরকার। ৭০ বছরেরও বেশি সময়ের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অর্থনৈতিক সংকটের সম্মুখীন দ্বীপ-দেশটি সোমবার পেট্রোলের শেষ দিনে নেমে এসেছে। সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের মে মাসের বেতন দেয়ার মতো টাকাও হাতে নেই বলে তিনি জানান। বিক্রমাসিংহে সতর্ক করে দিয়েছেন যে দেশের বাসিন্দাদের দিনে ১৫ ঘন্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিভ্রাট সহ্য করতে হবে। এই পরিস্থিতিতে কোন পথে সমস্যার সমাধান হবে তার রাস্তাও জানা নেই তার। তিনি দেশের অর্থ স্থিতিশীল করার প্রচেষ্টার অংশ হিসাবে শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইনস বিক্রির প্রস্তাবও করেছিলেন।

এদিনে কলম্বোর রাস্তায় ভয়ানক পরিস্থিতি দেখা গিয়েছে। যেখানে অটোরিকশা চালকরা জ্বালানীর জন্য নিষ্ফল অপেক্ষায় সাপের মত সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছেন। মোহাম্মদ আলী নামে এক ব্যক্তি একটি সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, “আমি ছয় ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলাম শুধু পেট্রোল পেতে।” আরেকজন চালক মোহাম্মদ নওশাদ বলেন, ‘আমরা সকাল ৭-৮টা থেকে এখানে রয়েছি এবং তাদের জ্বালানি থাকবে কি না তা এখনো পরিষ্কার নয়। “কবে আসবে, কেউ জানে না। আমাদের এখানে অপেক্ষা করে কোনো লাভ হবে কিনা তাও আমরা জানি না।”

২ কোটি ২০ লাখ জনসংখ্যার দেশটি ব্রিটেনের কাছ স্বাধীনতার পর থেকে বর্তমানে সবচেয়ে খারাপ অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে রয়েছে। কোভিড-১৯ মহামারী, বিদ্যুতের ক্রমবর্ধমান দাম এবং পপুলিস্ট ট্যাক্স কমানোর কারণে দ্বীপের দেশটির অর্থনীতি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার দীর্ঘস্থায়ী ঘাটতি এবং ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতির কারণে ওষুধ, জ্বালানি এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসের তীব্র ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে কয়েক মাস থেকে দেশটিতে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ চলছে। এরমধ্যে গত ৯ মের বিক্ষোভ চরম সহিংসতায় রুপ নেয়। সেদিনের বিক্ষোভে ক্ষমতাসীন এক এমপিসহ ৯ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে তিন শতাধিক। বাধ্য হয়ে পদত্যাগ করেছেন মাহিন্দা রাজাপাকসে। এরপরে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে রনিলকে নিয়োগ দেন প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসে। যদিও বিক্ষোভকারীরা নতুন সরকার মেনে নেয়নি। তারা প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজপাকসের পদত্যাগ দাবি করে আসছে। তারা দেশের সঙ্কটের জন্য রাজাপাকসে পরিবারের অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করছে।

Related Articles

Back to top button
error: