HighlightNewsদেশ

দিদি হিসেবে আপনাকে বেছে নিয়েছিলেন সকলে কিন্তু আপনি শুধু একজন ভাইপোর পিসি হয়েই রয়ে গেলেন; ব্রিগেড থেকে কটাক্ষ মোদির

টিডিএন বাংলা ডেস্ক: ব্রিগেডের ময়দান থেকে ফের একবার শাসক দল তৃণমূলকে আক্রমণ করলেন নরেন্দ্র মোদী। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কিসের ‘পিসি-ভাইপো’বাদ নিয়ে কটাক্ষ করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন,”১০ বছর পর মানুষ জবাব চাইছেন। দিদি হিসেবে আপনাকে বেছে নিয়েছিলেন সকলে, কিন্তু আপনি নিজেকে শুধু ভাইপোর পিসি হিসেবেই সীমাবদ্ধ করে রেখেছেন।কংগ্রেসের পরিবারতন্ত্রের পথেই আপনি কেন হাঁটলেন?”শুধু তাই নয় মুখ্যমন্ত্রীর নন্দীগ্রাম বিধানসভা থেকে প্রার্থী হওয়ার প্রসঙ্গ নিয়েও এদিন কটাক্ষ করতে ছাড়েননি নরেন্দ্র মোদি।

যে নন্দীগ্রাম শুভেন্দু অধিকারীর গড় হিসেবে পরিচিত। দলবদল এরপর যে নন্দীগ্রাম থেকে বারবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আজ লক্ষ্য ঘটিহারানি হুঁশিয়ারি দিচ্ছিলেন শুভেন্দু অধিকারী সেই নন্দীগ্রাম নিয়ে এবার কটাক্ষের সুর শোনা গেল নরেন্দ্র মোদির গলায়। তিনি বলেন,”আপনি শুধু বাংলার নন, গোটা দেশের মেয়ে। কিছু দিন আগে স্কুটি সামলেছেন। সবাই ভয় পাচ্ছিলেন, আপনি আঘাত না পান। ভাগ্যিস পড়ে যাননি। নইলে যে রাজ্যে স্কুটি তৈরি হয়েছে, সেই রাজ্যকেই শত্রুতা বাধিয়ে বসতেন। তাই ভাল হয়েছে পড়ে যাননি। কিন্তু ভবানীপুর যেতে যেতে নন্দীগ্রামের দিকে ঘুরে গিয়েছে আপনার স্কুটি। আমি চাই না কেউ আঘাত পান। কিন্তু স্কুটি যখন নন্দীগ্রামেই গিয়ে পড়েছে, তখন আমরা আর কী করব?”

তবে শুধুমাত্র নন্দীগ্রাম বা,’পিসি-ভাইপো’বাদ নয়, এদিন নরেন্দ্র মোদি তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তথা শাসকদল তৃণমূলের বিরুদ্ধে কাটমানি, সিন্ডিকেট, তোলাবাজি, তুষ্টিকরণ, হিংসা, আতঙ্ক ইত্যাদি একাধিক ইস্যুতে আক্রমণ শানিয়েছেন। এদিনের উপস্থিত সমর্থকদের উপচে পড়া ভিড়কে লক্ষ্য করে মোদি বলেন,”গোটা বাংলা এক স্বরে বলছে, আর নয় অন্যায়। তৃণমূল সরকারের আয়ু কমে আসছে। আজ গোটা দেশ শুনুক, দুর্নীতি আর নয়, তোলাবাজি আর নয়, কাটমানি আর নয়, সিন্ডিকেট আর নয়, বেকারত্ব আর নয়, হিংসা আর নয়, আতঙ্ক আর নয়, তুষ্টিকরণ আর নয়, অন্যায় আর নয়। এত জোরে বলুন যাতে আপনাদের রাগ, ক্ষোভ দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে।”

এদিন তাঁকে মুখ্যমন্ত্রীর বিভিন্ন সময় বিভিন্ন আখ্যা দিয়ে সম্বোধন করা প্রসঙ্গে এ মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন,”কখনও আমাকে রাবণ, কখনও দৈত্য, কখনও গুন্ডা বলছেন দিদি। এত রাগ কেন দিদি? আপনার দল এবং আপনার সরকারের ছড়ানো পাঁকেই আজ বাংলায় পদ্ম ফুটছে। গণতন্ত্রের নামে বাংলায় লুঠতন্ত্রকে প্রশ্রয় দিয়েছেন, জাত-ধর্মের নামে বিভেদের রাজনীতি করেছেন, তাই আজ বাংলায় পদ্ম ফুটছে। দিদিকে অনেক দিন ধরে চিনি। বামপন্থীদের বিরুদ্ধে লড়া দিদি এমন ছিলেন না। কিন্তু আঝ দিদির রিমোট কন্ট্রোল অন্যের হাতে।”মোদির অভিযোগ,”দিদি নিজে কাজ করছেন না, কাউকে করতেও দিচ্ছেন না।”

ব্রিগেডের জনসমাবেশ থেকে শুধু মাত্র শাসক দল তৃণমূলকেই নয়, সংযুক্ত মোর্চাকেও কটাক্ষ করেন প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদি। তিনি বলেন,”স্বাধীনতার লড়াইকে ভিত্তি করে কংগ্রেস ক্ষমতায় এসেছিল। তার পর কিছু দিন কাজ হয়েছিল। তার পর থেকেই রাজনীতির খেলা শুরু হয়। বামপন্থীরা অত্যাচার চালাতে শুরু করে। বামপন্থীরা একসময় বলতেন কংগ্রেসের কালো হাত ভেঙে দাওয়, গুঁড়িয়ে দাও। এই স্লোগানবাজির দৌলতেই ক্ষমতা দখল করে। প্রায় তিন দশক ক্ষমতায় ছিল। আমি জানতে চাই, আজ সেই কালো হাতের কী হল। কালো হাত ফরসা হয়ে গেল কী ভাবে। যে হাতকে বামপন্থীরা কালো ভাবতেন, আজ তা সাদা হল কী ভাবে। যে হাত গুঁড়িয়ে দিতে চাইতেন, আজ সেই হাত ধরেই এগোচ্ছেন। বামেদের বিরুদ্ধে পরিবর্তনের স্লোগান তুলেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মা-মাটি-মানুষের জন্য কাজ করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। সেই প্রতিশ্রুতি রেখেছেন কি?”

বিজেপির বাংলায় সরকার গড়লে কি কি উন্নয়ন করতে পারে সে সম্পর্কেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি বলেন,”আমরা শুধুমাত্র ক্ষমতাবদল চাই না, বাংলায় উন্নয়নকেন্দ্রিক সরকার গড়তে চাই। পাঁচটা বছর নষ্ট হয়ে গিয়েছে। আর সময় নষ্ট করা যাবে না। আসল পরিবর্তন আনতে হবে। বাংলার মানুষকে মনে রাখতে হবে, কী ভাবে বার বার তাঁদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়েছে।” শুধু তাই নয়,ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ারিং যাতে বাংলায় পড়া যায় সেই বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে আশ্বাস দিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন,”জাতীয় শিক্ষা নীতি বাংলায় প্রণয়ণ করা হবে। বাংলা ভাষায় ইঞ্জিনিয়ারিং, ডাক্তারি পড়ানো হবে। প্রান্তিক পড়ুয়ারা ইংরেজি না জানলেও ইঞ্জিনিয়ারিং, ডাক্তারি পড়তে পারবেন।”

তিনি আরো বলেন,”আমরা শুধুমাত্র ক্ষমতাবদল চাই না, বাংলায় উন্নয়নকেন্দ্রিক সরকার গড়তে চাই। ৫টা বছর নষ্ট হয়ে গিয়েছে। আ সময় নষ্ট করা যাবে না। আসল পরিবর্তন আনতে হবে। বাংলার মানুষকে মনে রাখতে হবে, কী ভাবে বার বার তাঁদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়েছে।”

এ প্রসঙ্গে ফের একবার তৃণমূলের বিরুদ্ধে কাটমানি, সিন্ডিকেট তোলাবাজি ইত্যাদি একাধিক অভিযোগ হেনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন,”রাজ্য সরকারের কমিশনবাজির জেরে বিমানবন্দর সংলগ্ন এলাকার উন্নয়ন আটকে রয়েছে। কলকাতার স্মার্টসিটি প্রকল্প আনবে বিজেপি। নতুন উড়ালপুল গড়া হবে। ঝুপড়িবাসীদের পাকা বাড়ি করে দেওয়া হবে। ঠেলাওয়ালাদের স্বনিধি যোজনার আওতায় আনা হবে। কলকাতার সঙ্গেই বাংলার অন্য শহরেও আত্মনির্ভরতার লক্ষ্য নিয়ে এগোব আমরা। যাতে পড়াশোনা, রোজগার এবং প্রবীণদের জন্য ওষুধের বন্দোবস্ত করা যায়। বাংলায় নতুন শিল্প আসবে। বাংলায় আসল পরিবর্তন আনতে হলে গ্রাম পঞ্চায়েত, নগর নিগম এবং নগর পালিকাদের পারদর্শিতা ততটাই জরুরি। বাংলায় যে ভাবে গণতন্ত্রকে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, বিজেপি তার পুনর্নির্মাণ করবে।”

বাংলাকে পুনর্নির্মাণের তথা বাংলার সংস্কৃতি রক্ষা এবং নতুন শিল্পক্ষেত্র সৃষ্টি করার প্রতিশ্রুতিও দেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি বলেন,”বাংলার পুনর্নির্মাণ, সংস্কৃতির রক্ষা, শিল্প তৈরির প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি।বাংলার মানুষের উন্নতির জন্য ২৪ ঘণ্টা কাজ করব।প্রতি মুহূর্তে আপনাদের জন্য বাঁচব, আপনাদের সেবা করব। প্রতি মুহূর্তে কাজের মধ্যে দিয়ে আপনাদের মন জিতব।”

বিজেপির শাসনকালে আগামী পাঁচ বছরের বাংলার যে উন্নয়ন হবে তা পরবর্তী ২৫ বছরের ভিতর করবে বলেও আশ্বাস দেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি বলেন,”আগামী ৫ বছরে বাংলায় যে বিকাশ ঘটবে, তাতে পরবর্তী ২৫ বছরের ভিত তৈরি হবে। বাংলার উনন্য়নের কথা ভেবে ভোট দিন। ২০৪৭ সালে স্বাধীনতার ১০০তম পূর্তিতে বাংলা আবার ফের দেশের মধ্যে শীর্ষস্থান দখল করবে। মাছ হোক বা ভাত, বন্দর হোক বা বাণিজ্য, বাংলার মাটিতে সবকিছু রয়েছে। সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এগোতে হবে। আমাদের এনডিএ সরকার সেই লক্ষ্য নিয়েই এগোবে। কলকাতা সিটি অব জয়। কলকাতার কাছে সমৃদ্ধশালী অতীত এবং সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎ রয়েছে। কলকাতার সংস্কৃতিকে সুরক্ষিত রেখে তাকে ভবিষ্যতের শহর বানানোর সামনে কোনও প্রতিবন্ধকতা নেই।”

বাংলার মানুষকে ছিনিয়ে নেওয়া সবকিছু ফিরিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে মোদী বলেন,”ব্রিটিশ শাসকরা বাংলায় দমনপীড়ন চালিয়েছিল। বাংলার মানুষের কাছ থেকে আর কেউ অধিকার ছিনিয়ে নিতে পারবে না। বাংলার মানুষকে কথা দিচ্ছি, যআ কিছু ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে, সব ফেরত দেব। স্বাধীনতার ৭৫তম বর্ষে নতুন সঙ্কল্প নিয়ে এগোবে বাংলা।”

Related Articles

Back to top button
error: