HighlightNewsদেশ

“বিদ্বেষের রাজনীতির কেন্দ্র হয়ে উঠেছে রাজ্য”; উত্তরপ্রদেশের লাভ জিহাদ আইন প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথকে চিঠি পাঠালেন ১০৪ জন প্রাক্তন আইএএস অফিসার

টিডিএন বাংলা ডেস্ক: উত্তরপ্রদেশের লাভ জিহাদ আইন প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথকে কড়া ভাষায় চিঠি লিখে পাঠালেন একশোরও বেশি প্রাক্তন আইএএস অফিসারেরা। তাঁদের ওই চিঠিতে তাঁরা লিখেছেন এই আইনের মাধ্যমে উত্তর প্রদেশ “বিদ্বেষ, বিভাজন এবং ধর্মীয় গোঁড়ামির রাজনীতির কেন্দ্র হয়ে উঠেছে।” শুধু তাই নয়, ওই চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রীর সহ রাজ্যের সমস্ত রাজনৈতিক নেতাদের সংবিধানের যে বিধানগুলি তিনি এবং অন্যান্য সংসদ সদস্যরা “বহাল রাখার শপথ নিয়েছিলেন” সেগুলি সম্পর্কে নিজেদের পুনরায় একবার “শিক্ষিত” করার অনুরোধ করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের উদ্দেশ্যে লেখা ওই খোলা চিঠিতে প্রাক্তন জাতীয় উপদেষ্টা শিবশঙ্কর মেনন,প্রাক্তন পররাষ্ট্র সচিব নিরুপমা দাও এবং প্রধানমন্ত্রী প্রাক্তন উপদেষ্টা টি কে এ নোয়া সহ মোট ১০৪ জন প্রাক্তন আইএএস অফিসারের স্বাক্ষর রয়েছে।

সম্প্রতি, উত্তর প্রদেশে “বেআইনিভাবে ধর্মান্তকরণের” বিরুদ্ধে আইন পাস হয়েছে। আইনে বলা হয়েছে, কোন ব্যক্তি যদি জোর করে বা প্রতারণামূলক ভাবে ধর্মীয় রূপান্তর করায় , বিশেষত বৈবাহিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে তাহলে ওই ব্যক্তির সর্বোচ্চ ১০ বছরের শাস্তি হতে পারে। এই বেআইনি ধর্মান্তকরণের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রাক্তন আইএএস অফিসারেরা লিখেছেন এই আইন ব্যক্তির “ব্যক্তিগত পছন্দের স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ করছে” এবং উত্তরপ্রদেশকে “স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থার” ভূমিকায় উন্নীত করেছে।

উল্লেখ্য, উত্তরপ্রদেশে এই আইন পাস হওয়ার পর থেকে এই নতুন আইনের আওতায় উত্তরপ্রদেশ পুলিশের দায়ের করা একাধিক মামলার পরিপ্রেক্ষিতে প্রাক্তন আইএএস অফিসারেরা লিখেছেন,”এটা বেদনাদায়ক হলেও খুব স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে গত কয়েক বছরে যে উত্তর প্রদেশ গঙ্গা যমুনার তীরে সভ্যতার কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত ছিল তা বর্তমানে বিদ্বেষ, ঘৃণা বিভাজন এবং ধর্মীয় গোঁড়ামির রাজনীতির কেন্দ্র হয়ে উঠেছে।” শুধু তাই নয় ওই চিঠিতে বলা হয়েছে,” ভারতের মুক্ত নাগরিক হিসেবে যারা স্বাধীন ভাবে জীবন যাপন করতে চাইছেন সেই সমস্ত অল্প বয়সী ভারতীয়দের বিরুদ্ধে আপনার প্রশাসন এক সংঘবদ্ধতা নির্যাতন করে চলেছে।”

লাভ জিহাদ আইন প্রসঙ্গে সাম্প্রতিককালে একটি ইন্টারফেথ বিবাহ মামলায় এলাহাবাদ হাইকোর্টের রায়ের উল্লেখ করে প্রাক্তন আইএএস অফিসারেরা আরো বলেছেন, বহু আদালতে দ্ব্যর্থহীনভাবে রায় দেওয়া হয়েছে যে কোন ব্যক্তির নিজের জীবনসঙ্গী বেছে নেওয়া সংবিধানের আওতাধীন একটি মৌলিক অধিকার।

প্রসঙ্গত, গত সপ্তাহে, এলাহাবাদ হাইকোর্ট একজন হিন্দু মহিলাকে বিয়ে করার জন্য একজন মুসলিম পুরুষের বিরুদ্ধে নথিভুক্ত একটি এফআইআর বাতিল করে দেয় এবং ওই হিন্দু মহিলার নিজস্ব শর্তের ওপর ভিত্তি করে নিজের জীবন বেছে নেওয়ার সম্পূর্ণ অধিকার রয়েছে বলে রায় দেয় আদালত।

এই আইন আনার আগে, উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ এলাহাবাদ হাইকোর্টের একটি মামলার পরিপ্রেক্ষিতে রায়ের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেছিলেন, লাভ জ্বিহাদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হবে। কোন হিন্দু মহিলাকে যদি বিবাহের আড়ালে মুসলিম ধর্মে রূপান্তর করার প্রচেষ্টা করা হয় এবং যারা নিজেদের পরিচয় গোপন করে উত্তর প্রদেশের মহিলাদের সম্মানের সাথে খেলার প্রচেষ্টা করবেন তাদের “রাম নাম সত্য” যাত্রা শুরু হবে। মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্যটি স্মরণ করে প্রাক্তন আইএএস অফিসার এরা বলেছেন ধর্মীয় রূপান্তর বিরোধী আইন মূলত মুসলিম মহিলা ও পুরুষদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হচ্ছে যারা “নিজেদের পছন্দ বেছে নেওয়ার সাহস দেখাচ্ছেন।”

 

Related Articles

Back to top button
error: