টিডিএন বাংলা ডেস্ক : কথায় বলে, ভোট বড় বালাই। নতুন বছর পড়লেই রয়েছে পাঞ্জাব এবং উত্তরপ্রদেশের মত রাজ্যে বিধানসভা ভোট। সম্ভবত সেই কারণেই বিতর্কিত ৩ কৃষি আইন প্রত্যাহার করে নিল মোদি সরকার।
পশ্চিমবঙ্গে সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম জমি অধিগ্রহণ আন্দোলন রাজ্যে বাম শাসনের বিদায় ঘন্টা বাজিয়েছিল। কৃষকদের দাবিকে কানে না তুলে, শিল্প বান্ধব পথে হাঁটতে চেয়েছিল তৎকালীন বাম সরকার। ফল হিসেবে ২০১১ তে পতন হয় বাম সরকারের। কেন্দ্রীয় সরকারও কি সেই বিপদ ঘন্টা শুনতে পেলো? তার জন্যই কি উত্তরপ্রদেশ, পাঞ্জাব বিধানসভা নির্বাচনের আগে বড় চমক দিল সরকার? রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, কৃষি সংস্কারের নীতিতে অনড় থাকতে গিয়ে ভোটব্যাঙ্ক খোয়াতে রাজি নয় বিজেপি। নয়াকৃষি আইন মোদির শিল্পপতি বন্ধুদের লাভের রাস্তা প্রশস্ত করবে। এই আশঙ্কা বিশ্বাসযোগ্যভাবে তুলে ধরতে পেরেছিল কৃষকরা। শিল্প বান্ধব ভাবমূর্তি ভোটের জন্য খুব একটা লাভজনক হবে না। সেটা বুঝতে পেরেছিলেন মোদি। তারপরেই এই সিদ্ধান্ত।
রাজনৈতিক মহলের মতে, বিজেপির হিন্দুত্ব মতাদর্শর জন্য দলিত এবং পিছিয়ে পড়া শ্রেণীর মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। কিন্তু সেই ক্ষোভের জন্য কখনও হিন্দুত্ব নীতি থেকে সরে নি বিজেপি। যার কারণ হিন্দু ভোট ব্যাঙ্ক। কৃষি আইন নিয়ে এমনিতেই ক্ষুব্ধ জাট এবং শিখ সম্প্রদায়। বহুদিনের জোটসঙ্গী শিরোমনি অকালি দল জোট ছেড়েছে শুধুমাত্র কৃষি আইনের কারণে। উত্তর প্রদেশ ও পাঞ্জাবের আসন্ন ভোটে জাট ও শিখরা বিজেপির ভোট ব্যাঙ্ক। তা হাত ছাড়া করতে চায় না বিজেপি। বিশেষজ্ঞরা এটাও মনে করছেন, পাঞ্জাবের ভোটে এর বেশ কিছুটা প্রভাব পড়তে পারে। অকালি দলের নেতা সুখবীর সিং বাদল নতুন করে হাত ধরবে না। আর যদি ধরে, কৃষক ভোটের বড় অংশ তাদের দিকে টানতে পারবে বিজেপি। অন্যদিকে কংগ্রেস ছেড়ে আসা বিক্ষুব্ধ অমরিন্দর সিং মূলত কৃষি আইনের জন্য বিজেপির বিরুদ্ধে ছিল। তার মত জননেতা এখন বিজেপির দিকে হাত বাড়ালে, তাতে লাভ পদ্ম শিবিরের। অন্যদিকে অন্তর্দ্বন্দ্বে জেরবার কংগ্রেস কৃষি আইন প্রত্যাহারের কৃতিত্ব দাবি করে পাঞ্জাবের ক্ষমতা ধরে রাখবার চেষ্টা করতে পারে। সে ক্ষেত্রে আম আদমি পার্টিও তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী হবে।
উত্তরপ্রদেশে বিক্ষোভ মূলত পশ্চিমাঞ্চলে সীমাবদ্ধ। লখিমপুর খেরিতে বিজেপি নেতার ছেলের গাড়িতে চাষিদের চাপা দেওয়ার প্রতিবাদ ছড়িয়েছে রাজ্যজুড়ে। তাছাড়া আখ চাষের দাম না পাওয়া, গোমাংস নিষিদ্ধ হওয়া ইত্যাদি একাধিক বিষয় নিয়ে অসন্তুষ্ট কৃষকরা। পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে ৭০ টা আসনের জাট ভোট এতদিন বিজেপির দখলে ছিল। সেই ভোট ধরে রাখা সম্ভব কিনা, তা নিয়ে পদ্ম শিবিরে সন্দেহ দেখা যায়। তবে কৃষকদের অন্যান্য সমস্যা না মেটালে ভোটবাক্সে কতটা ইতিবাচক ফল পাওয়া যাবে তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।