টিডিএন বাংলা ডেস্ক: কংগ্রেস থেকে পদত্যাগের পর এবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রশংসায় পঞ্চমুখ হলেন গুলাম নবী আজাদ। সম্প্রতি একটি সংবাদ মাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আজাদ বলেন, “আমি তাঁকে খুব কঠোর মানুষ মনে করতাম, কিন্তু তার মধ্যে মানবতা আছে। ভাবতাম তাঁর স্ত্রী নেই, ছেলেমেয়ে নেই তাই তাঁর হয়ত কোনো কিছুতে কোনো ফারাক পড়েনা, কিন্তু তা নয়।”
একইসঙ্গে, কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটিকেও আক্রমণ করে আজাদ বলেন, এই প্রতিষ্ঠানের কোনো মানে নেই। ‘চৌকিদার চোর হ্যায়’ স্লোগান ছিল শুধুমাত্র রাহুল গান্ধীর ছিল। তাঁকে দলের কোনো বরিষ্ঠ নেতা সমর্থন করেননি।
গোলাম নবী আজাদ ওই সংবাদ সংস্থাকে বলেন, “পদত্যাগের চিঠি লেখার আগে ও পরে আমি ৬ দিন ঘুমাইনি। আমি আমার রক্ত দিয়ে এই দলকে প্রতিপালন করেছি। সেখানে কোথা থেকে কথা থেকে এমন কিছু লোকজন এসেছে, যারা কোনো কাজের নয়। কোথাকার ইট, কোন জায়গার বাধা… তারা আমাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করছে। যারা তাদের বাড়ির ঠিকানা জানে না তারা আমাদের প্রশ্ন করে।
আজাদ আরো বলেন, আজও সোনিয়া গান্ধীর প্রতি আমার সেই শ্রদ্ধা আছে, যেমনটা ৩০ বছর আগে ছিল। রাহুল গান্ধীর প্রতিও একই শ্রদ্ধা আছে। কারণ, তিনি ইন্দিরা গান্ধীর পরিবার। রাজীব-সোনিয়ার পুত্র। ব্যক্তিগতভাবে আমি তাঁর দীর্ঘায়ু কামনা করছি। আমরা তাঁকে একজন সফল নেতা করার চেষ্টা করেছি, কিন্তু তিনি রাজি হননি।
আজাদ আরো বলেন, তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হচ্ছে যে তিনি প্রধানমন্ত্রী মোদীর সাথে ঘনিষ্ঠতার কারণে কংগ্রেস থেকে পদত্যাগ করেছেন। এপ্রসঙ্গে তিনি বলেন, “মোদি একটি অজুহাত মাত্র। জি ২৩ একটি চিঠি লিখে হাইকমান্ডকে পরামর্শ দেওয়ার পর থেকে কংগ্রেস নেতৃত্ব আমাকে নিয়ে সমস্যায় পড়েছে। তাঁরা কখনই চাননি কেউ তাঁদের চিঠি লিখুক, প্রশ্ন করুক। তারপর থেকে কংগ্রেসের বহু সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে, কিন্তু কোনও পরামর্শই কখনও বিবেচনা করা হয়নি।
তিনি আরো বলেন, “আমাকে বলা হচ্ছে যে আমি মোদীর সাথে দেখা করেছি, কিন্তু আমি আপনাদের বলি, মোদি এবং বিজেপির সঙ্গে তারা যুক্ত রয়েছে যারা তাদের স্বপ্ন পূরণ করেছে। এমনকী, নরেন্দ্র মোদি নিজেও এই কথা বলেছিলেন যে রাহুল গান্ধী তাঁর বিরুদ্ধে বক্তৃতা করেন এবং তারপর সংসদে জড়িয়ে ধরে বলেন যে আমাদের হৃদয় পরিষ্কার। তাহলে, আপনিই বলুন যে এরা মোদীজির সাথে যুক্ত না আমি।”
আজাদকে উদ্ধৃত করে এনডিটিভি জানিয়েছে, “১৯৯৮ থেকে ২০০৪ সালের মধ্যে সোনিয়া গান্ধী সিনিয়র নেতাদের সাথে পরামর্শ করতে থাকেন। তিনি তাঁদের পরামর্শ অনুসরণ করেছিলেন এবং তাঁদের জিজ্ঞাসা না করে কোন সিদ্ধান্ত নিতেন না। তিনি আমাকে ৮টি রাজ্যের দায়িত্ব দিয়েছিলেন, যার মধ্যে আমি সাতটি রাজ্যে জিতেছি। তিনি আমার কাজে হস্তক্ষেপ করেননি। কিন্তু রাহুল গান্ধী যখন আসেন, ২০০৪-এর পরে, সোনিয়া গান্ধী সিনিয়র নেতাদের পরিবর্তে রাহুল গান্ধীর কথা মানতে শুরু করেন। মতামত দেওয়ার মতো কোনো অভিজ্ঞতা বা শিল্প রাহুলের নেই, তবুও সোনিয়া গান্ধী চেয়েছিলেন সব নেতা রাহুলের কথা মতো কাজ করুক।*
আজাদ আরো বলেন,”‘চৌকিদার চোর হ্যায়’ স্লোগান কংগ্রেসে ফাটল ধরিয়েছে। আজাদ বলেন, ২০১৯ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জন্য ‘চৌকিদার চোর হ্যায়’ স্লোগান উত্থাপন করার সময় সিনিয়র কংগ্রেস নেতাদের এবং রাহুল গান্ধীর মধ্যে ফাটল পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল। কোনো সিনিয়র নেতাই এই স্লোগান সমর্থন করেননি। দলের সভায় রাহুল বলেছিলেন, যারা স্লোগান পছন্দ করেন তারা যেন হাত বাড়ায়। তখন অনেক বড় নেতারাই এই স্লোগান নিয়ে মতবিরোধ জানিয়েছিলেন। ওই বৈঠকে মনমোহন সিং, এ কে অ্যান্টনি ও পি চিদাম্বরমও ছিলেন।
আজাদ আরো বলেন, “আমরা ইন্দিরা গান্ধীর নেতৃত্বে আমাদের রাজনৈতিক পড়াশোনা করেছি। আমি যখন জুনিয়র নেতা ছিলাম, তখন তিনি এমএল ফোতেদার এবং আমাকে বলতেন অটল বিহারী বাজপেয়ীর সঙ্গে দেখা করতে। আমাদের শেখানো হয়েছিল যে আমাদের বড়দের সম্মান করা উচিত এবং বিরোধী দলের নেতাদের একই সম্মান দেওয়া উচিত যেমন আমরা আমাদের দলের নেতাদের দিয়ে থাকি, কিন্তু রাহুলের নীতি কেবল মোদীকে আক্রমণ করা। ওরা চারদিক থেকে মোদীকে আক্রমণ করছে।