কর্তব্যে অবিচল থাকার মাসুল দিলেন গুরুগ্রামের ইমাম, হামলা দেখেও মসজিদ ছেড়ে যাননি, তাতেই হারালেন প্রাণ

টিডিএন বাংলা ডেস্ক: হরিয়ানার নুহ (মেওয়াত)-তে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের ব্রজ মণ্ডল যাত্রা আটকানোর অভিযোগে সোমবার রাত থেকেই হিংসার আগুন জ্বলছে হরিয়ানায়। সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই গুরুগ্রামের সেক্টর ৫৭-এর অঞ্জুমান জামা মসজিদে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিল বিক্ষুব্ধ জনতা। মসজিদ লক্ষ্য করে গুলিও চালানো হয়। সেই হামলাতেই প্রাণ হারান মসজিদের ইমাম ১৯ বছরের হাফিজ সাদের। বিহারের বাসিন্দা হাফিজ সাদের হামলার কথা জানতে পেরেও নিজের কর্তব্যে অবিচল ছিলেন। মসজিদ ছেড়ে কোলে যাননি। এহেন হাফিজের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর থেকেই ন্যায়বিচারের দাবিতে চোখের জল ফেলছেন উত্তর বিহারের সীতামারহি জেলার মানিয়াডিহ গ্রামের বাসিন্দারা।

হাফিজের মামা জানিয়েছেন, দাদা শাদাবের সঙ্গে ট্রেনে করে গ্রামে ফেরার কথা ছিল হাফিজের। তিনি বলেন, ‘শাদাব আমাদের ফোন করে জানায় যে ভাই কিছুতেই সকালের আগে কাজ ছেড়ে মসজিদ থেকে বেরোতে রাজি হচ্ছে না’। হাফিজের মামা আরও বলেন, মসজিদের প্রধান ইমাম ঘটনার সময় শহরে উপস্থিত ছিলেন না। বৃহস্পতিবার ফেরার কথা ছিল তাঁর। কিন্তু তাঁর ফেরা না পর্যন্ত মসজিদ ছেড়ে না যাওয়া নিজের কর্তব্য বলে মনে করেছিলেন হাফিজ।

জানা গিয়েছে, হাফিজের দাদা গুরুগ্রামে থাকেন। ছাত্রছাত্রীদের পড়িয়ে তিনি জীবিকা নির্বাহ করেন। চোখের সামনে সাম্প্রদায়িক হানাহানি দেখে তিনি ভাইকে নিয়ে নিরাপদ জায়গায় চলে যেতে চেয়েছিলেন। তবে, হাফিজ প্রাণের চেয়েও কর্তব্যকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন। সেই কর্তব্যের মাসুল তাঁকে তাঁর প্রাণ দিয়ে চোকাতে হল।
সূত্রের খবর, গুলি চালানোর আগে তাঁকে তলোয়ার দিয়ে আক্রমণ করা হয়েছিল। যদিও সেই খবর মানতে পারছেন না হাফিজের বাবা মুশতাক। তিনি জানিয়েছেন, ১৯ বছরের হাফিজ ছিলেন অত্যন্ত শান্ত স্বভাবের। ছেলের বিরুদ্ধে বড় কোনও চক্রান্ত করা হয়েছিল বলে মনে করছেন তিনি। তাঁর দাবি, ‘আমার ছেলের কী দোষ ছিল? কেন মসজিদের নায়েব ইমামের উপর এভাবে হামলা করা হয়েছে, কেন অন্যদের ওপর হামলা করা হয়েছে? আমি বিচার চাই। সরকারের কাছে আর কিছুই চাই না’।

সীতামারহির পুলিশ সুপার মনোজ তিওয়ারি জানিয়েছেন, ‘গ্রামটি নানপুর থানার অধীন। আমি এসএইচওকে নির্দেশ দিয়েছি যে, অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার সময় পরিবারটির যা সাহায্যের প্রয়োজন, তা যেন করা হয়।’