HighlightNewsআন্তর্জাতিক

ইসরাইলের বর্বরতার বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের পাশে দাঁড়াতে আহ্বান কাবা শরীফের ইমাম, মিসরের আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয় ও ইরানের নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ীর

টিডিএন বাংলা ডেস্ক: যুদ্ধের নামে ফিলিস্তিনের সাধারণ নাগরিক নারী, শিশুদের হত্যা ও ইসরাইলের বর্বরতার বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের পাশে দাঁড়াতে, তাদের জন্য দোয়া করতে আহ্বান করেছেন মুসলিমদের পবিত্র কাবা শরীফের ইমাম পবিত্র মসজিদুল হারামের পরিচালনা পর্ষদের প্রধান ও খতিব শায়খ ড. আব্দুর রহমান আল-সুদাইস। বিশ্বের মুসলিমদের ঐতিহাসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মিসরের আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে শাইখুল আজহার ডক্টর আহমদ আত তায়্যিব স্পষ্ট ভাষায় ফিলিস্তিনের সাধারণ জনতা ও ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ যোদ্ধাদের পক্ষে সমর্থন ব্যক্ত করেছেন। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, “আজ যারা ফিলিস্তিনের পাশে দাঁড়াবে না, ইতিহাস তাদের ক্ষমা করবে না।”

অন্যদিকে প্রথম থেকেই মুসলিম বিশ্বের অন্যতম দেশ ইরান স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের জন্য ফিলিস্তিনীদের প্রতিরোধ সংগঠনগুলিকে সমর্থন দিয়ে আসছে। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী বলেন, “আল-আকসা তুফান অভিযান ফিলিস্তিনিদের একটি সাহসী এবং নিঃস্বার্থ পদক্ষেপ। এর মাধ্যমে তারা বছরের পর বছর ধরে চলা অপরাধের জবাব দিয়েছে, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে এই অপরাধের তীব্রতা বেড়েছে। দখলদার ইসরাইলের বর্তমান সরকার এর জন্য দায়ী।”

ইসরাইলের বর্বর হামলার সমালোচনা করে কাবা শরীফের ইমাম শায়খ আল-সুদাইস বলেন, ‘পবিত্র মসজিদুল আকসার সুউচ্চ অবস্থান অম্লান থাকবে। ফিলিস্তিনিদের অধিকার হরণে ইসরাইলের বর্বর আচরণ পুরোপুরি অগ্রহণযোগ্য। কোনো ধর্ম বা রাষ্ট্রীয় নীতিমালা এর সমর্থন করে না। তারা শত্রুতামূলক আচরণের মাধ্যমে পবিত্রতা ও মর্যাদা বিনষ্ট করছে এবং ফিলিস্তিনিদের অধিকার হরণ করছে। আমরা মহান আল্লাহর কাছে পবিত্র মসজিদুল আকসা, ফিলিস্তিন জাতি ও মুসলিমদের পবিত্র স্থানগুলোর সুরক্ষার জন্য বিনীতভাবে প্রার্থনা করি এবং সারা বিশ্বে শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠায় দোয়া করি।’ তিনি আরও বলেন, “মুসলিমদের অন্তরে পবিত্র মসজিদুল আকসার বিশেষ অবস্থান রয়েছে। তাই ফিলিস্তিন ইস্যুতে সৌদি আরবের সমর্থন ও প্রচেষ্টা ধর্মীয় মনোভাব অনুকরণের বহিঃপ্রকাশ এবং মুসলিম জাতির কর্তব্য পালনের অংশ।” তিনি জেরুসালেমকে রাজধানী করে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনে সৌদি আরবের দৃঢ় অবস্থানের কথা জানিয়েছেন।

মিসর সরকার পরোক্ষে ইসরাইলের পক্ষে কাজ করলেও মিসরের আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয় বরাবরের মতো ফিলিস্তিনীদের পক্ষে সংহতি প্রকাশ করছে। তারা জানিয়েছে, সর্বোচ্চ ত্যাগ ও সীমাহীন ক্ষয়ক্ষতি সত্ত্বেও ফিলিস্তিনের পবিত্র ভূমিকে জায়নবাদের থাবা থেকে মুক্ত করতে যারা সশস্ত্র লড়াই ও সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে, আল আজহার তাদের প্রতি আন্তরিক মোবারকবাদ জানায়। ইসরাইলের ষড়যন্ত্র সম্পর্কে ফিলিস্তিনিদের সতর্ক করে দিয়ে তারা আহব্বান করেছে, যেকোনো মূল্যে নিজেদের আপন ভূমিতে টিকে থাকতে হবে। এই ভূমি একবার হাতছাড়া হয়ে গেলে আর কোনোদিন ফিরে পাওয়া যাবে না এবং ফিলিস্তিন ইস্যুরও চিরতরে অবসান ঘটবে।

আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে শাইখুল আজহার ডক্টর আহমদ আত তায়্যিব বলেন, “জায়নবাদী দখলদারদের সমর্থনে পশ্চিমাদের সামরিক ও মানবিক সহায়তার বিপরীতে ফিলিস্তিনবাসীর জন্য আল আজহার আরব ও মুসলিম দেশগুলোর সম্মিলিত পদক্ষেপ কামনা করে। একই সাথে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় দখলদারদের দ্বারা সংঘটিত নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের ওপর যাবতীয় নৃশংসতা ও যুদ্ধাপরাধের ব্যাপারে আন্তর্জাতিক তদন্তের আহ্বান করে।”

আরব ও মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর প্রতি আল আজহার আহ্বান জানিছে যে, “ফিলিস্তিনের প্রতি আমাদের ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় ভূমিকার দায়বদ্ধতা সম্পর্কে সজাগ থাকা এবং অতিদ্রুত মানবিক সহায়তা প্রেরণ করা উচিত। আল আজহার সুস্পষ্ট ভাষায় ব্যক্ত করছে যে, মুসলিম দেশগুলোর পক্ষ থেকে সরকারিভাবে নিপীড়িত ফিলিস্তিনবাসীর প্রতি সমর্থন জানানো ও সাহায্য করা আবশ্যকীয় ধর্মীয় দায়িত্ব এবং মানবতার প্রতি সহমর্মিতার বহিঃপ্রকাশ। আজ যারা ফিলিস্তিনের পাশে দাঁড়াবে না, ইতিহাস তাদের ক্ষমা করবে না।”

আল আজহার তীব্র নিন্দা করে জানাচ্ছে যে, দখলদার জায়োনিস্ট বাহিনী কর্তৃক বেসামরিক নাগরিক, নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের হত্যা, হাসপাতাল, বাজার, অ্যাম্বুলেন্স এবং বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের আশ্রয় নেয়া মসজিদ ও মাদরাসায় বিমান হামলা, আন্তর্জাতিকভাবে নিষিদ্ধ বোমা ও ভারী অস্ত্রশস্ত্রের ব্যবহার, পানি এবং বিদ্যুৎ লাইন বিচ্ছিন্ন এবং খাদ্য, চিকিৎসাসহ জরুরি মানবিক সহায়তার পথ বন্ধ করে নিষ্ঠুরভাবে গাজাকে অবরুদ্ধ করে রাখা- সবকিছুই পরিষ্কার গণহত্যা এবং যুদ্ধাপরাধ। অবৈধ রাষ্ট্র ইসরায়েলের দ্বারা সংঘটিত এসব দখলদারিত্ব, সন্ত্রাস, যুদ্ধাপরাধ, মানবাধিকার লঙ্ঘন ইহুদিবাদ ও এর সমর্থকদের কলঙ্ক হিসেবে ইতিহাসে লেখা থাকবে। ইহুদিবাদী ইসরায়েলের প্রতি অমানবিক পশ্চিমা সমর্থন ও নির্লজ্জ পক্ষপাতিত্ব এবং ফিলিস্তিনবাসীর বিরুদ্ধে পশ্চিমা মিডিয়ার লাগাতার মিথ্যা প্রচার, প্রোপাগান্ডা ও ইসরাইলি পক্ষপাতদুষ্টতা সবকিছুই পশ্চিমাদের চটকদার মানবাধিকার শ্লোগান, স্বাধীনতা ও স্বাধিকারের বাণীর মুখোশ খুলে দিয়েছে। এসব দ্বারা বাস্তবতার বিকৃতি ঘটানো, দ্বিচারিতা প্রদর্শন, বৈশ্বিক মনোবৃত্তি ও মতামতকে মিথ্যার পক্ষে ঘুরিয়ে দেয়ার চেষ্টা এবং ফিলিস্তিনের নির্যাতিত মানুষদের বিরুদ্ধে ইহুদিবাদী সন্ত্রাসের প্রতি খোলামেলা সমর্থন ব্যক্ত করা হচ্ছে এবং একই সাথে ফিলিস্তিনে নিষ্ঠুর ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর পক্ষে উস্কানি দেয়ার শামিল।

এদিকে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী বলেছেন, “নিষ্ঠুরতা এবং অপরাধ যখন সীমা অতিক্রম করে, যখন পাশবিকতা চরমে পৌঁছায়, তখন এমন তুফান অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়ে।” তিনি আরও বলেন, “পশ্চিমারা বিশেষ করে আমেরিকা ও ব্রিটেন এই ভুয়া ইহুদিবাদী ও রক্তপিপাসু সরকারকে যতটা সমর্থন করেছে, আর কোনো সরকারকে ততটা সমর্থন করেনি। এই দখলদার ইসরাইলি সরকার ফিলিস্তিনি নারী, পুরুষ, শিশু এবং বয়োবৃদ্ধ কাউকেই রেহাই দেয়নি। বসতি স্থাপনকারীদেরকে কুকুরের মতো ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছে। এমন নিপীড়নের বিরুদ্ধে একটি জাতির প্রতিক্রিয়া কেমন হওয়া উচিত? এটা স্পষ্ট যে, এর বিরুদ্ধে ঝড় উঠাবে তারা।”

Related Articles

Back to top button
error: