HighlightNewsআন্তর্জাতিক

পাকিস্তানে নিষিদ্ধ হতে চলেছে ইমরানের দল পিটিআই! চলছে জল্পনা

টিডিএন বাংলা ডেস্ক: পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল পিটিআইকে নিষিদ্ধ করার কথা বিবেচনা করছে সরকার। দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাষ্ট্রের ভিত্তির ওপর আক্রমণের জন্য পিটিআইকে অভিযুক্ত করে বলেছেন, এটা সহ্য করা যাবে না। পিটিআই থেকে একের পর এক নেতা পদত্যাগ করছেন। পদত্যাগের ঘোষণায় সবাই কেবল পিটিআই নয়, ভাল জীবনের জন্য রাজনীতি থেকেও অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন। ইমরান খান এই পদত্যাগকে জোরপূর্বক তালাক করানো হচ্ছে বলে দাবি করেছেন। গতকাল ইমরান খান সরকারের সঙ্গে আলোচনার জন্য একটি কমিটি গঠন করার কথাও বলেছেন। এদিকে পিটিআই নেতা শাহ মেহমুদ কোরেশি মুক্তির পর আবার গ্রেফতার হয়েছেন। তবে তিনি চাপের মুখেও দলত্যাগ করবেন না বলে জানিয়েছেন।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন

নিষিদ্ধ হচ্ছে পিটিআই! : পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ বলেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করার কথা বিবেচনা করছে সরকার। চলতি মাসের শুরুর দিকে খানের গ্রেপ্তারের ফলে পাকিস্তান জুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়। সরকারি ভবন ও সামরিক কম্পাউন্ডে ভাঙচুর করা হয়। এই ঘটনার পর পিটিআইয়ের হাজার হাজার সমর্থক ও দলের বেশ ক’জন সিনিয়র নেতাকে আটক করা হয়েছে।

সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিরক্ষা স্থাপনায় হামলার উদ্দেশ্য ভারতের হতে পারে তবে পাকিস্তানের নয়। পিটিআইকে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি, তবে আমরা অবশ্যই পিটিআইয়ের উপর নিষেধাজ্ঞা পর্যালোচনা করছি’। খাজা আসিফ বলেন, ৯ মে’র ঘটনা হঠাৎ করে ঘটেনি, বরং পরিকল্পিতভাবে সেনাবাহিনীর কোর কমান্ডার, সদর দপ্তর, গুজরানওয়ালা সেনানিবাস এবং মিয়ানওয়ালিতে বিমান ঘাঁটিসহ অন্যান্য স্থানে হামলা চালানো হয়েছে। তিনি বলেন, ‘ইমরান খান সেনাবাহিনীকে তার প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখেন। তার পুরো রাজনীতিই (একসময়) বসে থাকতো সেনাবাহিনীর কোলে এবং আজ হঠাত্ করেই তিনি এর বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন’। খাজা আসিফ বলেন, ‘আমি যেটা বলছি সেটা পিটিআই ত্যাগকারীরাও সবাই বলছেন… তারা বলেছে যে সবকিছু পরিকল্পনা করেই হয়েছে’। এদিকে গতকাল পিটিআই নেতা কোরেশি, জামশেদ ইকবাল চিমা এবং মুসাররাত চিমা মুক্তি পেলেও আদালতের বাইরে থেকে আবার গ্রেফতার করা হয়।

কী বলছে পিটিআই?
পিটিআইয়ের মুখপাত্র ব্যারিস্টার আলী জাফর বলছেন, পিটিআইয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলেও সুপ্রিম কোর্ট এধরনের পদক্ষেপকে এক দিনের মধ্যে বাতিল এবং অকার্যকর ঘোষণা করতে পারে। কারণ পাকিস্তানে কোন রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করা যায় না। সুপ্রিম কোর্টের বাইরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় জাফর ১৯৬০-এর দশকে জামায়াত-ই-ইসলামির ওপর নিষেধাজ্ঞার কথা উল্লেখ করেন। পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি অ্যালভিন রবার্ট কর্নেলিয়াস যেটিকে বাতিল করে রায় দিয়েছিলেন। তিনি জানান, ‘জামাত-ই-ইসলামিকে নিষিদ্ধ করার চেষ্টা অনেক আগেই হয়েছিল। ঐ আদালত বলেছিল যে আপনি একটি রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করতে পারেন না এবং সবার রাজনৈতিক দল গঠনের অধিকার রয়েছে। তিনি আরো জানান, ‘নাশকতা যা হয়েছে, সেটি ছিল ব্যক্তিগত কাজ (তার জন্য) কোন রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করা যায় না।’ তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘যদি এমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়, তবে আমার বিশ্বাস যে এই একই আদালত একদিনের মধ্যে তা বাতিল ঘোষণা করবে।’

পিটিআইতে পদত্যাগের হিড়িক, বাধ্য করার অভিযোগ
ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) থেকে পদত্যাগের হিড়িক পড়েছে। সর্বশেষ এই তালিকায় যুক্ত হয়েছেন দলটির নেতা ফাওয়াদ চৌধুরী। ইমরান ঘনিষ্ঠ এবং সাবেক তথ্যমন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরী রাজনীতি ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। মঙ্গলবার পদত্যাগ করেন দলটির অন্যতম প্রভাবশালী নেত্রী শিরিন মাজহারি। দলের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতির পদত্যাগের ঘোষণা চাপে থাকা ইমরান খানের জন্য বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে। মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, এখন থেকে তিনি পিটিআই কিংবা অন্য কোনো দলের সঙ্গে সম্পৃক্ততা রাখবেন না। সক্রিয় রাজনীতি ছেড়ে দেওয়ার কারণ হিসেবে মাজহারি নিজের স্বাস্থ্যগত সমস্যা এবং তার একাধিকবার অপহরণ ও মুক্তির সময়টিতে মেয়ে ইমান জয়নব মাজহারি-হাজিরকে যে নির্মম অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছিল, তা উল্লেখ করেন। সামপ্রতিক দিনগুলোতে কয়েকবার গ্রেপ্তার হয়েছিলেন পিটিআইয়ের এই শীর্ষস্থানীয় নেতা। পিটিআই ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন দলটির নেতা ও পাঞ্জাব প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য মিঞা জলিলও। এছাড়া পিটিআই ছেড়েছেন দলটি থেকে নির্বাচিত জাতীয় পরিষদের সদস্য আফতাব হোসাইন সিদ্দিকী, পিটিআই পশ্চিম পাঞ্জাবের সভাপতি ফায়জুল্লাহ কামোকা, পিটিআই থেকে নির্বাচিত পাঞ্জাব প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য আবদুল রাজ্জাক খান নিয়াজীসহ অনেকে।

পিটিআই নেতাদের গণহারে দল ত্যাগকে ‘জোরপূর্বক তালাক’ বলে আখ্যায়িত করেছেন দলটির চেয়ারম্যান ইমরান খান। মঙ্গলবার এক টুইট বার্তায় তিনি এ কথা বলেন। ইমরান খান বলছেন, নেতাদের ওপর চাপ দিয়ে তাদের দল ত্যাগে বাধ্য করা হচ্ছে। ইমরান বলেন, আমরা এতদিন পাকিস্তানে জোরপূর্বক বিয়ের কথা শুনেছি। কিন্তু এখন পিটিআই এমন এক পরিস্থিতির মুখোমুখি যাকে বলা যেতে পারে ‘জোরপূর্বক তালাক’। ইমরান খান বলেন, ‘আমি ভাবছি দেশের সব মানবাধিকার সংস্থা কোথায় হারিয়ে গেছে’! সমপ্রতি যখন তার দলের নেতারা দল ছাড়া শুরু করেন তখন তিনি বলেছিলেন যে, যারা চাপের মুখে পিটিআই ছাড়লেন তাদের জন্য আমি সহানুভূতি প্রকাশ করছি। আমার সহানুভূতি তাদের সকলের প্রতি যারা চাপের মুখে দল ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছে। আমি সকল সিনিয়র সদস্যদের প্রশংসা ও অভিনন্দন জানাই যারা পার্টি ছাড়ার চরম চাপ প্রতিরোধ করছেন। সূত্র- বিবিসি, ডন, দৈনিক ইত্তেফাক

Related Articles

Back to top button
error: