টিডিএন বাংলা ডেস্ক: কর্ণাটকে কংগ্রেসে ঐতিহাসিক জয়ের পরে বিজেপির পরাজয়ের কারণ নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে রাজনৈতিক মহলে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পরাজয়ের ফলে বিজেপির মিশন সাউথের ভিতে ফাটল ধরল। দেশের রাজনীতিতে দক্ষিণের ৫টি রাজ্যে কর্নাটক, তামিলনাড়ু, কেরালা, অন্ধ্র এবং তেলেঙ্গানার অংশীদারিত্ব প্রায় ২২-২৪%। দক্ষিণ ভারতে রয়েছে প্রায় ৯০০টি বিধানসভা আসন এবং ১৩০টি লোকসভা আসন।
বর্তমানে দক্ষিণভারতে বিজেপির মোট ২৯ জন সাংসদ রয়েছেন। দলীয় সূত্রে খবর, আগামী লোকসভা নির্বাচনে ৬০টি জয়লাভের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে বিজেপি। তবে, রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পথে বিজেপির জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ দক্ষিণে কোনও শক্তিশালী স্থানীয় নেতার অনুপস্থিতি। কর্ণাটকে ইয়েদুরাপ্পাই একমাত্র শক্তিশালী নেতা কিন্তু, তিনিও সক্রিয় রাজনীতি থেকে অবসর নিয়েছেন।
অন্যদিকে, কেরালা, তামিলনাড়ু, অন্ধ্র, পুদুচেরিতে প্রতিষ্ঠিত বা শক্তিশালী নেতা না থাকায় আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির অসুবিধা বাড়ছে। হিন্দুত্ব এবং মোদী ফ্যাক্টরের হাত ধরে বিজেপি গুজরাট, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখন্ড এবং উত্তর-পূর্বে উপকৃত হলেও বাংলা, ঝাড়খন্ড, ওড়িশা, বিহার, পাঞ্জাব, দিল্লি, কেরালা, তামিলনাড়ু, তেলেঙ্গানা, অন্ধ্র এবং হিমাচলের ক্ষেত্রে কোনো লাভ হয়নি। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, এর প্রধান কারণ হল যে রাজ্যগুলি জিতেছে সেখানে স্থানীয় নেতৃত্ব শক্তিশালী ছিল।
মূল ভোট ব্যাঙ্কের আস্থা হারানো বিজেপির জন্য একটি বড়সর ধাক্কা। এর পিছনে কারণ কী ছিল তা বিশ্লেষণ করার জন্য রাজনৈতিক মহলে ৬টি প্রশ্ন উঠছে।
১) দক্ষিণের রাজ্যগুলিতে বিজেপি-কংগ্রেস এখন কোথায় দাঁড়িয়ে আছে?
মোট লোকসভা আসনের মধ্যে, ভারতের ৫টি রাজ্য কর্নাটক, তামিলনাড়ু, কেরালা, অন্ধ্র এবং তেলেঙ্গানা প্রায় ২৪%। ১৩০টি লোকসভা আসনের মধ্যে বিজেপির ২৯টি এবং কংগ্রেসের ২৭টি। বাকিটা আঞ্চলিক দলগুলির দখলে। ভোট ভাগের নিরিখে, দক্ষিণে বিজেপির প্রতি রাজ্য গড় ১৮.৬৪% এবং কংগ্রেসের ২২.৭২%।
২) কর্ণাটকের লোকসভা আসনের ফলাফলের প্রভাব কী?
নির্বাচন কমিশনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, কর্ণাটকের ফলাফল যদি লোকসভা আসনের ভিত্তিতে গণনা করা হয়, তবে বিজেপি সেখানে ১৮টি লোকসভা আসন হারাতে পারে। যদিও লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনে বিভিন্ন ইস্যুতে ভোট হয়, কিন্তু বিজেপি যে বিপুল ব্যবধানে অনেক আসনে হেরেছে তা দলের উদ্বেগ বাড়াতে পারে।
৩) বিজেপির কৌশল ব্যর্থ হওয়ার মূল কারণ কী ছিল?
বিজেপি সবসময়ই তার মূল ভোট ব্যাঙ্কে অগাধ বিশ্বাস রাখে। কিন্তু, কর্ণাটকে বিজেপির মূল ভোট ব্যাঙ্ক (লিঙ্গায়ত) ভেঙে পড়েছে। কিত্তুর কর্ণাটকে (মুম্বাই-কর্নাটক) যেখানে লিঙ্গায়তরা ভাল সংখ্যায় রয়েছেন, সেখানে বিজেপি বড় ধাক্কা খেয়েছে এবং বেশ কয়েকটি আসন হারিয়েছে।
সূত্রের খবর অনুযায়ী, কর্ণাটকে পরাজয়ের কারণের দ্রুত বিশ্লেষণে এই সত্যটি প্রকাশিত হয়েছে যে এখনও পর্যন্ত বিজেপি ত্রিদেশীয় প্রতিদ্বন্দ্বিতায় লাভবান হচ্ছে, কিন্তু কর্ণাটকে এই ধারাটি ভেঙে গেছে। কারণ দক্ষিণের রাজ্যগুলি, কর্ণাটক এবং কেরালায় কংগ্রেস বেশ শক্ত অবস্থানে রয়েছে।
৪) জাত সমীকরণ অনুশীলনের ফলাফল কি ছিল?
কেন্দ্র ও কর্ণাটক সরকার দলিত, ওবিসি, উপজাতি সম্প্রদায়ের কল্যাণে নিজেদেরকে নিবেদিত বলে দাবি করছে, কিন্তু এর খুব একটা সুফল কর্ণাটকে পায়নি বিজেপি। কর্ণাটক নির্বাচনে মন্ডলদের (ভোক্কালিগাস এবং লিঙ্গায়ত) ২-২% সংরক্ষণ দেওয়ার বিষয়টি কাজ করেনি। এছাড়াও কমন্ডলের (বজরংবলী) ইস্যুটিও মানুষের মনে ক্লিক করেনি।
৫) এই ফলাফল কংগ্রেসের জন্য কতটা লাভদায়ক হতে পারে?
কংগ্রেসের নতুন সভাপতি মল্লিকার্জুন খার্গের নেতৃত্বে সিলমোহর দেওয়ায় দলে বিরাট স্বস্তি এসেছে। এর প্রভাবে, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান ও ছত্তিশগড়ের আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে দল আরও আত্মবিশ্বাস নিয়ে আবির্ভূত হবে।
অন্যদিকে, এই নির্বাচনী ফলাফলের পর মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থানে নেতৃত্ব নিয়ে বিভ্রান্তি দূর না করলে দলের ক্ষতি হতে পারে। বিপরীতে, এই দু’টি রাজ্য ছাড়া, ছত্তিশগড়েও নেতৃত্ব নিয়ে কংগ্রেসের বিভ্রান্তি নেই, যা দলের ক্ষেত্রে লাভজনক হতে পারে।
কর্ণাটকে জয়ের পরে, দলের সভাপতি মল্লিকার্জুন খার্গে এবং অন্যান্য নেতারা একে অপরের সাথে হাত তুলে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন।
৬) সংখ্যালঘুদের জন্য করা পরিকল্পনায় কোথায় ভুল হয়েছে?
স্নেহ মিলন এবং অন্যান্য কর্মসূচির মাধ্যমে বিজেপি সংখ্যালঘুদের (মুসলিম) মধ্যে প্রবেশের চেষ্টা করছিল। গত বছর হায়দরাবাদের জাতীয় কার্যনির্বাহী সভায়ও দল তাদের প্রস্তাব পাস করেছিল। তা সত্ত্বেও, কর্ণাটক নির্বাচনের ফলাফল প্রমাণ করে যে বিজেপি সংখ্যালঘুদের জন্য কেবল অস্পৃশ্যই থেকে গেছে তা নয়, সংখ্যালঘুরা ঐক্যবদ্ধভাবে বিজেপির বিরুদ্ধে ভোট দিচ্ছে।