নিজস্ব সংবাদ, টিডিএন বাংলা: ঐক্য ও সংহতির এই দেশে একটি অশুভ শক্তির উস্কানিতে ক্রমশ্যই বৃদ্ধি পাচ্ছে ইসলামোফোবিয়া। অর্থাৎ বাড়ছে ইসলাম ও মুসলিমদের সম্পর্কে ভীতি ছড়িয়ে দেওয়ার সুপরিকল্পিত প্রচেষ্টা। এমনকি আজ আমরা যে ইতিহাস পড়ছি সেই ইতিহাস চর্চায়ও চলছে মুসলমানদের বিরুদ্ধে গভীর চক্রান্ত। ইচ্ছাকৃত ভাবেই ইসলাম ও মুসলিমদের বিভিন্ন ইতিহাস, ব্যক্তি ও ঘটনা নিয়ে মিথ্যা ছড়ানো এবং বিকৃত করার ভয়াবহ প্রচেষ্টা করা হচ্ছে। ‘আলিয়া সংস্কৃতি সংসদের’ একটি অনুষ্টান থেকে এমনই ভয়াবহ একটি বিষয়কে সামনে এনে অবিলম্বে এই ধ্বংসাত্মক পরিকল্পনার বিরুদ্ধে সমস্ত মানুষকে একত্রীত হয়ে তা বন্ধের আহ্বান জানালেন বিশিষ্ট জনেরা।
গত রবিবার বিকালে আলিয়া সংস্কৃতি সংসদের আয়োজনে অনুষ্টিত হয় এক মহৎই সেমিনার। এদিন সেই মঞ্চ থেকেই সমাজ সচেতনতা ও ইতিহাস-ঐতিহ্য নিয়ে নিজেদের মত ব্যক্ত করেন সেই অনুষ্টানে উপস্থিত বিশিষ্ট অতিথিরা। পাশাপাশি এ দিন সমাজ সচেতনতা ইতিহাস ও ঐতিহ্য এবং বিজ্ঞানের উপর অসামান্য অবদানের জন্য সংবর্ধনা দেওয়া হয় বিশিষ্ট সমাজকর্মী, সাংবাদিক ও লেখক নাসীর আহমদ, বিশিষ্ট ইতিহাস-চিন্তক বিশ্বেন্দু নন্দ এবং বিজ্ঞান গবেষক অধ্যাপক মেহেদী কালামকে। পাশাপাশি এদিন ওই সব বিশিষ্ট অতিথিদের হাত দিয়েই বেশ কয়েকটি বইয়ের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। এদিনের সেই গুরুত্বপূর্ণ সেমিনারে বিশিষ্টদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আয়োজক সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক আমজাদ হোসেন, রাজ্য সংখ্যালঘু কমিশনের চেয়ারম্যান ও দৈনিক পুবের কলম-এর সম্পাদক আহমদ হাসান ইমরান, সমাজসেবী মুহাম্মদ খলিল প্রমুখ৷
এদিনের সেই মঞ্চে দাঁড়িয়ে বক্তব্য দিতে গিয়ে আহমদ হাসান ইমরান মনে করিয়ে দেন সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ইতিহাস চর্চায় ‘আলিয়া সংস্কৃতি সংসদ’-এর অবদানের কথা। এদিন তিনি বলেন, ১৯৪৭-এ দেশভাগের সময় এদেশের সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চায় যে শূন্যতা তৈরি হয়েছিল, সেই শূন্যতা পূরণে নাসীর আহমদ সাহেব বড় ভূমিকা পালন করেছিলেন বলে উল্লেখ করেন ইমরান। এর পরপরই তিনি বলেন, চারিদিকে ইসলামফোবিয়া বা ইসলাম ভীতি ছড়ানো হচ্ছে। কিন্তু একটি সুন্দর সমাজ গড়তে ও এই ফোবিয়া দূর করতে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। এই বিষয়ে সাধারণ মানুষ খুব একটা জানেনা তাই এই নিয়ে মানুষকে আরও সচেতন করতে হবে বলেও তিনি মনে করিয়ে দেন।
অন্যদিকে সংবর্ধনা গ্রহণের পর সংক্ষিপ্ত ভাষণে নাসীর আহমদ পবিত্র কুরআনের একটি আয়াতের সংক্ষিপ্ত অংশ তুলে ধরে উল্লেখ করেন, সম্মান প্রদান করা এবং সম্মান তুলে নেওয়ার একমাত্র মালিক আল্লাহতায়ালা। তাই সবাইকে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের কথা মাথায় রেখে কাজ করতে হবে। তাঁর কথায়, সমাজ, সংস্কৃতি ও দেশের জন্যে কাজ করে যেতে হবে। এর মাধ্যমেও আল্লহর সন্তুষ্টি অর্জনসম্ভব। এছাড়াও ড. মেহেদী কালাম তাঁর গবেষণার বিষয় সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরেন। অন্য এক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বর্তমানে হরিয়ানার নুহ্ বা মনিপুরে যা ঘটছে সে সম্পর্কে সাবাইকে সচেতন হতে হবে। পিছিয়েপড়া মুসলিমদের এগিয়ে নিয়ে যেতে সমাজের মধ্য থেকেই উদ্যোগের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন মেহেদী কালাম।
বিশিষ্ট ইতিহাস-চিন্তক বিশ্বেন্দু নন্দ অভিযোগ করেন, দেশের ইতিহাস চর্চার মধ্যে সাম্প্রদায়িকতার বিষ ঢোকানো হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে প্রতিষ্ঠানিক ইতিহাস চর্চা হয় তা একটি নির্দিষ্ট প্রকোষ্ঠের মধ্যে মানুষকে ঢুকিয়ে দেয়। এই চর্চার জগত অত্যন্ত ছোট এবং যারা এই ইতিহাস রচনা করেছেন সবাই ইসলাম-ফোবিয়া বা মুসলমানদের বিরুদ্ধে চক্রান্তমূলক কাজ করে গিয়েছেন।’ এ প্রসঙ্গে তিনি ঐতিহাসিক যদুনাথ সরকারের নাম উল্লেখ করে বলেন, ‘ঔরঙ্গজেব থেকে শুরু করে মোদি জামানা পর্যন্ত মানুষের মননকে সঠিক ইতিহাস থেকে দূরে সরিয়ে রাখা হয়েছে। আমাদের মতো সাধারণ মানুষের কথা বা ইতিহাস কেউ লিখবে না তাই আমাদেরকেই উদ্যোগী হতে হবে। ইসলামোফোবিয়া রুখতে আরও বেশি বেশি করে প্রাতিষ্ঠানিক পরিসরের বাইরে ইতিহাস নিয়ে চর্চা দরকার। সবাইকে এই কাজে এগিয়ে আসতে হবে।’
এদিনের অনুষ্ঠানে বড় ভূমিকা পালন করেন অধ্যাপক রেজাউল করিম অধ্যাপক সাইফুল্লাহ, হাফিজুর রহমান, শামসুল আলম প্রমুখ। অন্যদিকে স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন তথ্যচিত্র নির্মাতা মুজিবর রহমান, কবি হাসনাইন, সুরাইয়া পারভিন প্রমুখ। দর্শকাসনে বহু বিশিষ্ট মানুষ ছিলেন। তাঁদের মধ্যে অন্যতম প্রাক্তন আমলা আরফান আলী বিশ্বাস, লেখক সোনা বন্দ্যোপাধ্যায়, অধ্যাপক আফসার আলী, তৌহিদ হোসেন, জানে আলম, তায়েদুল হক, আইনজীবী মাসুদ করিম প্রমুখ।