“বুলডোজার দিয়ে বাড়ি ভাঙা বেআইনি”, যোগী সরকারের পদক্ষেপের সমালোচনায় সরব প্রাক্তন বিচারপতি

টিডিএন বাংলা ডেস্ক: “বুলডোজার দিয়ে বাড়ি ভেঙে ফেলা সম্পূর্ণ বেআইনি”। উত্তরপ্রদেশের যোগী সরকারের “বুলডোজার” পদক্ষেপের এককথায় সমালোচনা এমনটাই জানালেন এলাহাবাদ হাই কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি গোবিন্দ মাথুর। রবিবার উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজ অঞ্চলে মহম্মদ জাভেদ নামে এক ব্যক্তির বাড়ি বুলডোজার দিয়ে ভেঙে ফেলা হয়। তার আগে বাড়ি ছেড়ে দেওয়ার জন্য জাভেদকে নোটিশ পাঠানো হয়েছিল। যদিও অভিযোগ সেই নোটিশ পুরনো তারিখের ছিল। শুধু তাই নয়, জাভেদের পরিবারের তরফ থেকেও জানানো হয়েছে ওই বাড়ি জাভেদের নামে ছিল না। ছিল তাঁর স্ত্রী পারভিন ফাতেমার নামে। বিবাহের সময় তাঁর স্ত্রী ওই বাড়ি নিজের বাবার কাছ থেকে উপহার স্বরূপ পেয়েছিলেন।

অন্যদিকে, প্রয়াগরাজ ডেভেলপমেন্ট অথরিটি বলছে, বাড়িটি কার নামে তা বিবেচ্য নয়। এটি একটি অবৈধ নির্মাণ ছিল তাই এটি ভেঙে ফেলা হয়েছে। এদিকে জাভেদের বড় মেয়ে আফরিন ফাতিমা তাঁর টুইটার অ্যাকাউন্টে দেশের পরিবর্তে ইংরেজিতে লিঞ্চিস্তান লিখে এই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

প্রসঙ্গত, নবীকে নিয়ে বিজেপি নেত্রী নূপুর শর্মার বিতর্কিত মন্তব্যের পর থেকেই বিক্ষোভের আগুন জ্বলে উঠেছে গোটা দেশের বিভিন্ন জায়গায়। দেশের বিভিন্ন স্থানে গত কয়েকদিন ধরে বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হয়েছে। অভিযোগ, প্রয়াগরাজের বাসিন্দা মহম্মদ জাভেদ আহমদ ছিলেন এই প্রতিবাদ মিছিলের অন্যতম মুখ। এরপরই সরকারের পক্ষ থেকে জাভেদের বাড়ি ভেঙে ফেলার নোটিস পাঠায় প্রয়াগরাজ ডেভেলপমেন্ট অথরিটি। বাড়িটি অবৈধভাবে নির্মিত বলে উল্লেখ করা হয় নোটিসে। রবিবার শেষমেশ বুলডোজার দিয়ে বাড়িটি ভেঙে দেওয়া হয়।

এপ্রসঙ্গে এলাহাবাদ হাই কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি গোবিন্দ মাথুর বলেছেন, ভারতে বেআইনিভাবে নির্মিত বাড়ির সংখ্যা প্রায় কোটির উপরে। পুলিশ হেফাজতে থাকা এক ব্যক্তির বাড়ি এভাবে ভেঙে ফেলা সম্পূর্ণ অনৈতিক। প্রাক্তন বিচারপতি মাথুরের মন্তব্য, রাজ্য সরকার তাহলে আইনের শাসন মানছে কিনা, তা নিয়েই প্রশ্ন উঠে যায়।
জাভেদ মোহাম্মদের ১৯ বছরের মেয়ে সুমাইয়া ফাতিমা বাড়ি ভাঙার পর বলেন, আমার বাবা সব সময় প্রশাসনকে সহযোগিতা করেছেন। যে বাড়িতে ভাঙচুর করা হয়েছে, সেখানে পুলিশ অফিসাররা প্রায়ই চা খেতে এসেছেন। কিন্তু এখন তারাও তাদের রঙ পাল্টেছেন। সুমাইয়া জানান, যে বাড়িতে বুলডোজার চালানো হয়েছে সেটি আম্মি পারভীন ফাতেমার নামে, আব্বুর নামে নয়।

জাভেদের বড় মেয়ে জেএনইউ স্কলার আফরিন ফাতিমা তার টুইটার অ্যাকাউন্টে দেশের পরিবর্তে ইংরেজিতে লিঞ্চিস্তান লিখেছেন। আফরিন জানান, তার বাবা ও পরিবারের সদস্যদের পুলিশ বিনা ওয়ারেন্টে তুলে নিয়ে গেছে। একইসঙ্গে তাঁর পিতার বিরুদ্ধে পুলিশের তরফ থেকে করা সমস্ত অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে অস্বীকার করেছেন তিনি। এলাহাবাদ হাইকোর্টের আইনজীবীরা জাভেদের বাড়িতে বুলডোজার চালানোর বিরুদ্ধে আদালতে একটি পিটিশন দাখিল করেছেন। আবেদনে বলা হয়েছে, বাড়িটি জাভেদের স্ত্রী পারভীন ফাতেমার নামে, তাঁকে তাঁর বাবা এই বাড়িটি দিয়েছিলেন। যেখানে জাভেদের নামে নোটিশ জারি করেছিল প্রশাসন। আইনজীবীরা আদালতের কাছে বাড়িটি পুনর্নির্মাণ করে পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

সমাজ কর্মী সীমা আজাদ প্রয়াগরাজ ডেভেলপমেন্ট অথরিটি অর্থাৎ পিডিএ-এর জারি করা নোটিশ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় 39/C/2A/1 করেলি ঠিকানায় জল বিভাগের রসিদ এবং হাউস ট্যাক্স নোটিশ শেয়ার করেছেন৷ তাঁর দাবি, এটা যদি বেআইনি হতো, তাহলে এতদিন পর্যন্ত বাড়ির কর কিসের ভিত্তিতে নেওয়া হচ্ছিল? পাশাপাশি ব্যাক ডেটে নোটিশ জারি করার বিষয়েও অভিযোগ করেছেন তিনি।

এই ঘটনা প্রসঙ্গে তানজিম উলেমা-ই-ইসলামের জাতীয় সাধারণ সম্পাদক মাওলানা শাহাবুদ্দিন রাজভি বলেন, “প্রতিশোধের কারণে জাভেদের বাড়ি ভেঙে ফেলা হয়েছে। ১৫ বছর ধরে একই জায়গায় ওই নির্মাণ ছিল, তখন পিডিএ, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কোথায় ছিলেন? একই পথে হাজার বার যাতায়াত করেছেন আধিকারিকরা, কর্মচারীরা, তাঁরা কেউ খেয়াল করেননি?” মাওলানা শাহাবুদ্দিন আরও বলেন, “ইসলামে স্ত্রীর সম্পত্তিতে স্বামীর কোনো অধিকার নেই। স্ত্রীর সন্তানদের অধিকার আছে। যে মামলায় জাভেদকে আসামি করা হয়েছে তার সঙ্গে স্ত্রীর কোনো সম্পর্ক নেই। এই ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হলে আদালত কী সিদ্ধান্ত নেবে?