টিডিএন বাংলা ডেস্ক : শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মদি ঘোষণা করেন যে, সরকার বিতর্কিত তিনটি কৃষি আইনই প্রত্যাহার করে নেবে। কিন্তু নরেন্দ্র মদি ঘোষণার পরেও এখনি আন্দোলন বন্ধ করতে রাজি নয় কৃষকরা। সংসদে আইন বাতিলের পরেই তারা সিদ্ধান্ত নিবেন পরবর্তি পদক্ষেপের বিষয়ে। এ প্রসঙ্গে তৃণমূল নেতৃত্ব জানিয়েছেন, আইন প্রত্যাহারই যথেষ্ট নয়, বিভিন্ন স্থানে কৃষক হত্যায় জড়িতদের কঠিন শাস্তি দিতে হবে। পাশাপাশি তারা দাবি জানিয়েছেন, কৃষক আন্দোলনে কয়েকশো মৃত্যুর ঘটনায় প্রধামন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়া উচিত। কারণ তাদের মতে, আইন প্রত্যাহার করে নিলেই সব শেষ হবেনা। আন্দোলন করতে গিয়ে প্রায় ৭০০ জনের মৃত্যু হয়েছে সেটা কি ভুলে জাওয়া সম্ভব? এর জন্য যেহেতু কেন্দ্রীয় সরকার দায়ী তাই দেশবাসীর কাছে প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমতা চাইতে হবে বলে দাবি করেছে তৃণমূল।
প্রধানমন্ত্রীর আইন প্রত্যাহারের ঘোষণার পরই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় টুইট করে বলেন, ‘বিজেপির নির্মমতার বিরুদ্ধে লড়াই করে কৃষকরা বিজয়ী হয়েছেন।’ তারপর তিনি কবিতার আকারে লেখেন, “ঔদ্ধত্য-অহঙ্কার ভগ্ন/ রৌদ্র-বৃষ্টি- ঝড়ঝঞ্ঝা/ কত রাত গেছে পেরিয়ে/ অস্ত্রের ঝঙ্কার কেড়ে নিল প্রাণ/ মৃতদেহ লাশকাঁটা জড়িয়ে।” এ প্রসঙ্গে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এটাই গণতন্ত্রে ভিন্নমতের প্রকৃত শক্তি।” অন্যদিকে সুখেন্দুশেখর এ দিন বলেন, ‘‘উত্তরপ্রদেশ-সহ পাঁচটি রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে পরাজয় নিশ্চিত বুঝে এই কৌশল নিয়েছে বিজেপি। তাই সংসদে আইন বাতিলের সঙ্গে কেন্দ্র আরও কী পদক্ষেপ করে তা দেখতে হবে।’’ বিভিন্ন সূত্রের দাবি, সংসদে আইন প্রত্যাহার করা হলেও সংসদের আসন্ন অধিবেশনে আন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ সহ একাধিক দাবিতে সরব হবে তৃণমূল। সেই বিষয়ে দলের রণকৌশল কি হবে তা ঠিক করছেন সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, ডেরেক ও’ব্রায়েনরা।
প্রথম থেকেই বিতর্কিত কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে শুরু হওয়া কৃষক আন্দোলনের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে ছিলেন মমতা। তৃণমূলের নেতা-সাংসদদের পাঠিয়ে কৃষকদের আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে ছিলেন তিনি। তাঁর সিঙ্গুর ও নন্দীগ্রামের অতীতকে কৃষি আইন বিরোধিতার এই আন্দোলনের সঙ্গে এক বন্ধনীতে জুড়তে চেয়েছে তৃণমূলও। সেই কারণেই দিল্লির আন্দোলনরত কৃষক সংগঠনের নেতারা রাজ্যের সদ্যসমাপ্ত নির্বাচনে তৃণমূলের পক্ষেই প্রচার করে ছিলেন। ফলে কেন্দ্রের এ দিনের সিদ্ধান্তে দলের ভূমিকা নির্দিষ্ট করে দিতে তৎপরতা শুরু করেছে তৃণমূল। আগামী সপ্তাহে মুখ্যমন্ত্রীর দিল্লি সফরে কেন্দ্রের এই প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তকে কাজে লাগানোর কথা ভাবছেন দলীয় নেতৃত্ব। রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, এই তিনটি আইনের প্রতিবাদে গত বছর কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা থেকে অকালি নেতা হরসিমরত কৌর বাদলের পদত্যাগের পরে বিজেপি বেশ চাপে পড়ে যায়। জটিলতা বাড়িয়ে স্পষ্ট হয়, পঞ্জাবের অপেক্ষাকৃত ধনী কৃষকদের কাছে যদি এটা প্রতিবাদের বিষয় হয়, তা হলে দরিদ্রতর কৃষকদের কাছে তা মরা-বাঁচার প্রশ্ন হয়ে উঠতে চলেছে। দেরি না-করে তখনই বিষয়টির সঙ্গে নিজেকে জুড়ে নেন মমতা। সেই সূত্রেই সংসদে বিজেপি- বিরোধিতায় সামনে চলে আসে তৃণমূল।