টিডিএন বাংলা ডেস্কঃ তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি পদে নিযুক্ত হলেন সদ্য কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়া গোয়ার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী লুইজিনহো ফালেইরো। লুইজিনহো ফালেইরো দীর্ঘদিন ধরে কংগ্রেসের সঙ্গে যুক্ত। দু’বার গোয়ার মুখ্যমন্ত্রীও হন তিনি। তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পরপরই জাতীয় স্তরে নতুন পদ পেলেন গোয়ার এই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী লুইজিনহো ফ্যালেইরো। তাঁকে দলের জাতীয় সহ-সভাপতি হিসেবে নিয়োগ করল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল। নতুন পদ পেয়ে তৃণমূল সুপ্রিমোকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি। তাঁকে নিয়োগপত্র পাঠিয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
শুক্রবার এ কথা ঘোষণা করেন দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। টুইট করে জানান লুইজিনহোর নতুন দায়িত্বের কথা। তাঁকে এই পদে মনোনীত করেছেন খোদ দলের সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
https://twitter.com/AITCofficial/status/1451438550621114369?t=_IVfEDJC6hQyGNp6JV55sA&s=19
গত ২৯ সেপ্টেম্বর কলকাতায় এসে নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করেন গোয়ার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী লুইজিনহো ফ্যালেইরো। সঙ্গে ছিলেন আরও ৬ জন প্রাক্তন বিধায়ক। যদিও আগে থেকে তাঁর তৃণমূলে যোগদানের জল্পনা উঠেছিল।
সেইমতো তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে কলকাতায় তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন গোয়ার এই বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ। তাঁর হাত ধরেই তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন গোয়ার আরও একাধিক কংগ্রেস কর্মী। গোয়ায় জোড়াফুলের সংগঠন যে আরও বিস্তৃত হতে চলেছে তা আগেই স্পষ্ট করেছিলেন দলের সেকেন্ড ইন কমান্ড অভিষেক। আর এবার স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই গোয়াতে পা রাখছেন। নবান্ন সূত্রে খবর আগামী ২৮ জানুয়ারি উত্তরবঙ্গ সফর শেষে গোয়া যাবেন তিনি। তার আগেই লুইজিনহো ফালেইরোকে এই গুরুদায়িত্ব যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।
তৃণমূলের দলীয় পতাকা হাতে তুলে দলে যোগদানের পর লুইজিনহো সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মমতার লড়াইয়ের প্রশংসা করে বলেন, ”মমতা অত্যন্ত লড়াকু নেত্রী, প্রকৃত স্ট্রিট ফাইটার। দেশের রাজনীতিতে এই মুহূর্তে তাঁর মতো নেত্রী চাই। আমি প্রায় ৪০ বছর ধরে কংগ্রেস করছি। কিন্তু সেই দল ছেড়ে তৃণমূলে এসেছি। জানি, এই যাত্রা আমার পক্ষে সহজ হবে না। তবু মমতার সঙ্গে হাতে হাত রেখে লড়াই করব।”
উল্লেখ্য, গোয়ার দু’বারের মুখ্যমন্ত্রী এবং সাতবারের কংগ্রেস সাংসদ-এর সঙ্গে দলবদলের প্রস্তাব নিয়ে প্রথম যোগাযোগ করেছিলেন আইপ্যাক কর্ণধার পিকে। সংবাদমাধ্যমে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে ফালেইরো বলেছিলেন, ‘স্ট্র্যাটেজিস্ট প্রশান্ত কিশোর আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। তবে সরাসরি আমাকে এসে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার কথা বলেননি। বরং আমার সামনে একটা গোয়ার বর্তমান পরিস্থিতির অ্যানালিসিস পেশ করেন। পিকে বলেন, গোয়ার মানুষ বিজেপি-র উপর ক্ষুব্ধ। খনিজ উত্তোলন বন্ধ। অর্থনীতি ভেঙে পড়ার জোগাড়। এমন পরিস্থিতিতে দিদিই হচ্ছে একমাত্র শক্তি। কেন্দ্রীয় সংস্থা দিয়ে অপমান করে, আক্রমণ করে, মাত্রাতিরিক্ত প্রেশার দিয়েও যাকে নোয়াতে পারেনি বিজেপি। দেশে দিদির মতো একজন লিডার দরকার।’
পুরনো দলত্যাগ প্রসঙ্গে ফালেইরো বলেন, ‘৪০ বছর কাজ করার পর কংগ্রেস ছাড়ার সিদ্ধান্তটা আমার কাছে খুব একটা সহজ ছিল না। কিন্তু গোয়ার স্বার্থে, দেশের স্বার্থে আমি সিদ্ধান্তটা নিয়েই ফেলি।’ তৃণমূলের পাখির চোখ গোয়া নির্বাচন। সাগরপাড়ে সুপরিকল্পিতভাবে নিজেদের ঘুঁটি সাজাচ্ছে জোড়াফুল শিবির। পশ্চিমবঙ্গের বাইরে কংগ্রেস ভাঙিয়ে নিজেদের দর বাড়াতে চাইছে তৃণমূল। এই আবহে ত্রিপুরা, অসমের পাশাপাশি গোয়াতে নজর তৃণমূলের। জাতীয় রাজনীতিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আধিপত্য বিস্তারে এই রাজ্যগুলিতে ভালো ফল করতে মুখিয়ে ঘাসুফুল শিবির। আর সেই ফর্মুলাতেই এদিন ফালেইরোকে দলের সর্বভারতীয় সভাপতি করে তৃণমূল বোঝাতে চাইল যে তাঁরা গোয়াকে কতটা গুরুত্ব দিতে চাইছেন।