টিডিএন বাংলা ডেস্ক: ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে গিয়ে প্রাণ হারানো দক্ষিণ ভারতের মহীশূরের রাজা টিপু সুলতানের জন্ম জয়ন্তী উদযাপন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে কর্ণাটকের নব নির্বাচিত সরকার। একসময় টিপু সুলতান সম্বন্ধে কর্নাটকের স্কুলে ইতিহাসের পাঠ্য বইগুলোতে যা যা লেখা আছে, সেই সব তথ্য সরিয়ে দেওয়ার কথা ভেবেছিল কর্ণাটকের বিজেপি সরকার। শুধু তাই নয়, ২০১৯ সালে টিপু সুলতানের জয়ন্তী উদযাপন বাতিলও করে কর্ণাটকের তৎকালীন সরকারকে। তবে, কর্ণাটকে এখন পরিবর্তনের হাওয়া। বিজেপির সরকারকে পরাস্ত করে বর্তমানে কর্নাটকে ক্ষমতাসীন কংগ্রেসের সরকার।
কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া তাঁর আগের মেয়াদে অর্থাৎ, ২০১৫ সালের ১০ নভেম্বর পূর্ববর্তী মহীশূর রাজ্যের শাসকের জন্মবার্ষিকী উদযাপন শুরু করেছিলেন। কর্নাটকে হিন্দুত্ববাদী দক্ষিণপন্থীদের কাছে ‘টিপু ধর্মান্ধ, অত্যাচারী শাসক’ ছিলেন। যদিও, সিদ্দারামাইয়া সরকার পর পর দু’বছর টিপু সুলতানের জন্মবার্ষিকী পালন করেছে। টিপুকে স্বাধীনতা সংগ্রামী হিসেবেই দেখানো হয় সিদ্ধারামাইয়ার আমলে। সেসময় বিজেপি এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রাজ্য জুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু করে। আন্দোলন হিংসাত্মক মোড়ও নেয় এবং সংঘর্ষে ৬০ বছর বয়সী এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছিল বলে অভিযোগ ওঠে।
বিজেপি, হিন্দুত্ববাদী শক্তি এবং কোদাভা সম্প্রদায়ের একাংশ বিরোধিতা করলেও কংগ্রেস সরকার ২০১৮ সাল পর্যন্ত সরকারের একটি সরকারী কর্মসূচি হিসাবে টিপু জয়ন্তী উদযাপন করে। ২০১৯ সালে কর্ণাটকে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বি.এস. ইয়েদিউরপ্পা টিপু জয়ন্তী উদযাপন নিষিদ্ধ করেছিলেন। বিজেপি সরকার পাঠ্যপুস্তক থেকে টিপু সুলতানের কথিত মহিমা অপসারণ করে। রিভিশন কমিটি “টাইগার অফ মাইসোর” উপাধিটি সরিয়ে দেয়, যা টিপু সুলতানের আরেক নাম বলে পরিচিত।
বিধানসভা নির্বাচনের আগে টিপু সুলতানকে নিয়ে টানাপোড়েন শুরু হয় কর্ণাটকে। বিজেপি-র দাবি, ইংরেজ বা মারাঠা সেনা নয়, টিপুকে আসলে হত্যা করেন দুই ভোক্কালিগা নেতা। তাদের নাম ছিল উরি গৌড়া এবং নানে গৌড়া। কংগ্রেসের অভিযোগ, আসলে টিপু সুলতান বনাম বিনায়ক সাভারকর ধারণা তৈরি করে নির্বাচনী সুর বেঁধে দিতে চেয়েছিল বিজেপি। মেরুকরণ ঘটিয়ে ভোটবাক্সে সুফল পেতে চেয়েছিল। যদিও, এই তত্ত্ব নিয়ে মতানৈক্য রয়েছে ইতিহাসবিদদের মধ্যে কিন্তু, কর্নাটক বিজেপি প্রচলিত ধারণাকেই প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ।কর্নাটকের ভোক্কালিগারা এ যাবৎ কংগ্রেস এবং এইচডি কুমারস্বামীর জনতা দল সেক্যুলারকেই সমর্থন করে এসেছে। এই দুই দলেরই বক্তব্য, উরি গৌড়া এবং নানে গৌড়া আসলে কাল্পনিক চরিত্র। বাস্তবে ওই নামের কোনও নেতা ছিলেন না।