টিডিএন বাংলা ডেস্কঃ রাজ্যের পূজা মণ্ডপ গুলিকে দেখেই বোঝা যায় বাঙালীর শিল্পরস। শিল্পীর নৈপুণ্যতায় সেজে ওঠে পূজা মণ্ডপ। মণ্ডপ গুলির দিকে তাকালেই আমরা বুঝতে পারি শিল্পীদের ভাবনা। কলকাতার পূজা কমিটির মধ্যে প্রতিযোগিতা চলে কীভাবে তারা তাদের পূজা মণ্ডপ দর্শকদের কাছে আকর্ষণীয় করে তুলে ধরবে। প্রতিবছর চলতে থাকে নিরব চাপা বিপ্লব। এবারও তার ব্যাতিক্রম ঘটেনি। কোথাও বুর্জ খলিফা আবার কথাও দিল্লির কৃষকআন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে পূজা মণ্ডপ। কিন্তু এই পূজা মণ্ডপ নিয়েই শুরু হয়েছে রাজ্য জুড়ে হইছই।
কেন্দ্রের নতুন কৃষি আইনের বিরুদ্ধে কৃষকদের প্রতিবাদকে সহানুভূতি দেখিয়ে প্যান্ডেল সাজানোর জন্য স্লিপার ব্যবহার করে “ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত” দেওয়ার অভিযোগে কলকাতার একজন আইনজীবী শহরের দম দম এলাকায় একটি দুর্গা পূজা কমিটির আয়োজকদের আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন।
রাজ্যের বিরোধী দল নেতা শুভেন্দু অধিকারী সহ ভারতীয় জনতা পার্টির সদস্যদের প্যান্ডেল থেকে চপ্পল সরিয়ে নেওয়ার দাবি জানানোর পর এই নোটিশ পাঠানো হয়েছে। যদিও দমদম ভারত চক্র দুর্গা পূজা কমিটির সদস্যরা বলেছেন “কৃষকদের বিক্ষোভের প্রতীক হিসেবে চপ্পলের স্তূপ একটি শিল্প স্থাপনা হিসেবে রাখা হয়েছে। তারা এটাও উল্লেখ করেছেন যে প্রকৃত পক্ষে প্যান্ডেল থেকে কিছু দূরত্বে স্থাপন করা হয়েছে। খবরে প্রকাশ আয়োজকদের পাঠানো আইনি নোটিশে আইনজীবী পৃথ্বীবিজয় দাস নিজেকে একজন “সনাতনী হিন্দু” হিসেবে বর্ণনা করেছেন, যিনি “দুর্গাপূজার প্যান্ডেলে পাদুকা ব্যবহারের বিষয়টি মেনে নিতে পারছেন না”। যদি স্লিপার না সরানো হয় তাহলে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার হবে বলে তিনি আয়োজকদের সতর্ক করে দিয়েছেন । নোটিশে তিনি বলেন, “এটি আমার ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেছে। ইচ্ছাকৃতভাবে সাধারণ মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার জন্য এটি করা হয়েছে।” অবশ্য আয়োজক কমিটির সচিব প্রতীক চৌধুরী বলেন, “গত বছরের সেপ্টেম্বরে পাস হওয়া তিনটি কৃষি আইনের বিরুদ্ধে কৃষকদের আন্দোলনকে তুলে ধরার লক্ষ্যে একটি বৃহত্তর থিমের অংশ হিসেবে এই শিল্প স্থাপন করা হয়েছে।” আয়োজকরা জানিয়েছেন যে তাদের থিমটিতে পূর্বের কৃষক আন্দোলনের উল্লেখ রয়েছে এবং উত্তরপ্রদেশের লখিমপুর খেরি জেলায় সাম্প্রতিক সহিংসতাও রয়েছে। প্রসঙ্গত, অভিযোগ উঠেছে কৃষি আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ চলাকালীন চার কৃষকসহ আটজনের উপর বিজেপি কেন্দ্রিয় মন্ত্রীর ছেলে গাড়ি চালিয়ে তাদের নিহত করেন। শনিবার বিজেপি বিধায়ক সুভেন্দু অধিকারী পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে প্যান্ডেল থেকে জুতা সরিয়ে নিতে “আয়োজকদের বাধ্য করতে” অনুরোধ করেন। তিনি টুইট বার্তায় বলেন, “দমদম পার্কে একটি দুর্গাপূজার প্যান্ডেল জুতা দিয়ে সাজানো হয়েছে। শৈল্পিক স্বাধীনতা এর নামে মা দুর্গার অপমান করার এই জঘন্য কাজ সহ্য করা হবে না। ”
A Durga Puja pandal in Dumdum Park has been decorated with shoes.
This heinous act of insulting Maa Durga in the name of "Artistic liberty" won't be tolerated.
I urge the Chief & Home Secretary @egiye_bangla to intervene & compel the organizers to remove the shoes before Shashti. pic.twitter.com/h3uQPbNIpS— Suvendu Adhikari • শুভেন্দু অধিকারী (@SuvenduWB) October 9, 2021
এছাড়া ত্রিপুরার প্রাক্তন গভর্নর তথাগত রায়ও বলেছেন যে প্যান্ডেলের কাছে জুতা হিন্দু সম্প্রদায়ের অনুভূতিতে আঘাত করেছে। অবশ্য পুজো কমিটি স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে, “মা দুর্গাকে অপমান করার জন্য নয় বরং কৃষক আন্দোলনকে সমর্থন করার জন্যই এই থিম তৈরী করা হয়েছে। তাছাড়া মন্ডপ থেকে একটু দূরে এটি স্থাপন করা হয়েছে। তাই মা দুর্গার অপমানের কোন প্রশ্নই ওঠে না।” পাশাপাশি তারা এটাও বলেছেন, আমরা আইনি নোটিশ পেয়েছি তার জবাবও দেওয়া হবে। এ ব্যাপারে আইনজীবীদের সঙ্গে কথা হচ্ছে।