দেশ

হিউম্যান ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন সহ দেশের একাধিক সংস্থার দপ্তরে এনআইএ-র অভিযান

টিডিএন বাংলা, দিল্লি: সন্ত্রাসবাদী তহবিল মামলায় ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এনআইএ) দিল্লি সংখ্যালঘু কমিশনের প্রাক্তন প্রধান জাফরুল-ইসলাম খানের সম্পত্তি সহ ছ’টি নন প্রফিট ও ট্রাস্ট এবং ন’টি সংস্থায় অভিযান চালিয়েছে। যে ছ’টি এনজিওতে বৃহষ্পতিবার এনআইএ অভিযান চালিয়েছে সেগুলি হল ফালাহে আম ট্রাস্ট, চ্যারিটি অ্যালায়েন্স, হিউম্যান ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন, জে কে ইয়েতিম (অনাথ) ফাউন্ডেশন, স্যালভেশান মুভমেন্ট এবং জম্মু ও কাশ্মীরের ভয়েস অফ ভিকটিমস।এর মধ্যে দুটি এনজিও চ্যারিটি অ্যালায়েন্স এবং হিউম্যান ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন দিল্লি ভিত্তিক, বাকিগুলি জম্মু ও কাশ্মীরের শ্রীনগরে অবস্থিত। জম্মু ও কাশ্মীরে বিচ্ছিন্নতাবাদী কাজকর্ম চালানোর জন্য কিছু বিদেশিদের ভারতে ও বিদেশে অর্থ সাহায্য করার সন্দেহে শ্রীনগরে ১০ টি জায়গায় এবং বেঙ্গালুরুতে একটি জায়গায় গতকাল থেকে অভিযান শুরু করেছে এনআইএ, যা আজও অব্যাহত রয়েছে।
গতকাল এনআইএ কর্মকর্তারা সিভিল সোসাইটির জম্মু কাশ্মীরের কোলিশনের সমন্বয়ক খুররাম পারভেজের বাড়ি ও অফিসে অভিযান চালিয়েছে। এর পাশাপাশি তাঁর সহযোগী পারভেজ আহমদ বুখারী, পারভেজ আহমদ মত্তা এবং স্বাতী শেশাদ্রির বাড়ি ও অফিসে অভিযান চালায় এনআইএ। এর সাথেই নিখোঁজ ব্যক্তিদের অ্যাসোসিয়েশন অফ প্যারেন্টস অফ পিপেনস, এনজিও অ্যাথ্রাউট এবং গ্রেটার কৈলাশ ট্রাস্টের চেয়ারপারসন পারভেনা অহঙ্গারে অভিযান চালানো হয়েছে। এনআইএ-র এই অভিযান প্রসঙ্গে পিপলস ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রধান মেহবুবা মুফতী বলেছেন,”শ্রীনগরে মানবাধিকারকর্মী খুররম পারভেজ এবং গ্রেটার কাশ্মীর অফিসে এনআইএর অভিযান জিওআইয়ের মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও মতবিরোধের বিরুদ্ধে জঘন্য ক্র্যাকডাউনের আরেকটি উদাহরণ। দুঃখের বিষয়, এনআইএ বিজেপিদের পোষা এজেন্সি হয়ে দাঁড়িয়েছে যারা সঠিক রাস্তায় চলতে অস্বীকার করেছে।” এনআইএর তরফ থেকে একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে এই তথাকথিত অলাভজনক সমস্যা অর্থাৎ এনজিওগুলি তাদের কিছু অঘোষিত দাতাদের কাছ থেকে অর্থ পাচ্ছে, যা তারা সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ডের তহবিলের জন্য ব্যবহার করছে। এদিকে হিউম্যান ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন (এইচডাব্লুএফ) এর সাথে ভারতীয় মুসলিমদের বৃহত্তম সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন জামায়াতে ইসলামী হিন্দের নাম যুক্ত করার বিষয় নিয়ে গণমাধ্যম গুলির বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে জেআইএইচ। বৃহস্পতিবার এনআইএ নয়াদিল্লির ওখলার জামিয়া নগর আবুল ফজল এনক্লেভ, হিউম্যান ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের অফিসে অভিযান চালানোর পরে বেশ কয়েকটি গণমাধ্যম জামাতকে এইচডাব্লুএফের সাথে যুক্ত করে খবর পরিবেশন করেছে বলে অভিযোগ। এই বিষয়ে তীব্র আপত্তি জানানো হয়েছে যে জামাতে ইসলামী হিন্দের তরফ থেকে।
একটি সংবাদ বিবৃতিতে জামায়াতের মিডিয়া সমন্বয়কারী সৈয়দ তানভীর আহমেদ বলেন, অনেক নিউজ চ্যানেল, বিশেষত রিপাবলিক টিভি বলেছে যে হিউম্যান ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন জামায়াতে ইসলামী হিন্দের একটি অংশ। যদিও বাস্তবে এইচডব্লুএফ পৃথক আইনী সত্তা এবং এইচডাব্লুএফএফের সাথে জামায়াতের কোনও আইনী যোগাযোগ নেই। এ বিষয়ে সংবাদমাধ্যমকে সতর্কবার্তা দিয়ে সৈয়দ তানভীর আহমেদ বলেন, জামায়াতে ইসলামী হিন্দের ভাবমূর্তি কলুষিত করবেন না। তিনি আরো বলেন, সংবাদমাধ্যমগুলির মাধ্যমে জামায়াতের নাম কলুষিত করার এই ইচ্ছাকৃত প্রচেষ্টা গুরুতর উদ্বেগের বিষয় এবং প্রয়োজনে এই বিষয়ে আমরা উপযুক্ত আইনী পদক্ষেপ নেব। অপরদিকে, হিউম্যান ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের (এইচডাব্লুএফ) সাধারণ সম্পাদক আরিফ আলী একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি জারি করে বলেছেন, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে সাতটার সময় জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ) এর ১৫ জনেরও বেশি আধিকারিক নয়াদিল্লির আবুল ফজল এনক্লেভের এইচডাব্লুএফ-এর কার্যালয়ে অভিযান চালিয়েছে। যে সমস্ত জিনিস বাজেয়াপট করা হয়েছে সে বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে আরিফ আলি বলেন, এনআইএর আধিকারিকেরা ফাউন্ডেশনের অ্যাকাউন্ট বিভাগের পাশাপাশি প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং জনসংযোগ বিভাগের কিছু ফাইল, নথি এবং ল্যাপটপ বা কম্পিউটার বাজেয়াপ্ত করেছে।
আরিফ আলীর মন্তব্য অনুযায়ী, ফাউন্ডেশনের কোষাধ্যক্ষ মোহাম্মদ জাফর এবং ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নওফাল পিকেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, হিউম্যান ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন মূলত যে বিষয়গুলি নিয়ে কাজ করে সেগুলি হল, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান, জলের উৎস যেমন টিউবওয়েল স্থাপন, কূপ খনন, ক্ষুদ্র ঋণ, ত্রাণ এবং পুনর্বাসনে সহায়তা। যা তাঁরা দীর্ঘ ১২ বছর ধরে গোটা দেশজুড়ে করছেন। তিনি আরও বলেন যে, ফাউন্ডেশন তার সমস্ত কাজকর্ম আইনী পরিকাঠামো মেনে এবং দেশের সংবিধানের ধারা মেনে করছে। হিউম্যান ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন একটি সংস্থা যার অধীনে দেশের বেশ কয়েকটি নিবন্ধিত এনজিও কাজ করছে। তিনি আরো বলেন, ফাউন্ডেশনের মূল লক্ষ্যস্থল হল দেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের দারিদ্র্যপীড়িত অঞ্চল যেখানে বিপুল সংখ্যক মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করেন। আরিফ আলীর বক্তব্য অনুযায়ী হিউম্যান ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন বিভিন্ন স্বনির্ভর গোষ্ঠী ও জীবিকা নির্বাহ প্রকল্পের মাধ্যমেও নারীদের ক্ষমতায়নের জন্য কাজ করছে। এই সংস্থা সফলভাবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অনেক হাসপাতাল, স্কুল এবং ডিসপেনসারি পরিচালনা করছে। তিনি আরো বলেন, ফাউন্ডেশনের পরিষেবাগুলি অনেক উর্ধ্বতন সরকারী কর্মকর্তা এবং বিভাগের থেকে এর আগে প্রশংসা কুড়িয়েছে এবং অনেক রাজনৈতিক নেতারা ফাউন্ডেশনের উন্নয়নমূলক কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেও উপস্থিত হয়েছেন। আরিফ আলি বলেন, হিউম্যান ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম সম্পূর্ণ স্বচ্ছতার সাথে করা হয় এবং এর সমস্ত রেকর্ড যথাযথভাবে নিরীক্ষণ করা হয়। পাশাপাশি সমস্ত প্রয়োজনীয় তথ্য এবং রেকর্ড বার্ষিক আয়কর বিভাগ ও দাতব্য কমিশনারকে জমা দেওয়া হয়। তিনি বলেন, ফাউন্ডেশন এনআইএ এবং সমস্ত সরকারী সংস্থাকে তদন্তে সহায়তা করতে প্রস্তুত।

Related Articles

Back to top button
error: