HighlightNewsদেশ

“তরুণ নেতাটি এখন যথেষ্ট দায়িত্বশীল এবং পরিণত”; চব্বিশ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গিয়ে ফের ঘাসফুলের সমর্থনেই লড়াইয়ের বার্তা দিলেন শতাব্দি রায়

নিজস্ব সংবাদদাতা,টিডিএন বাংলা: বিধানসভা ভোটের আগে একের পর এক দলবদলের পালা শুরু হয়েছে বঙ্গ রাজনীতিতে। এই পরিস্থিতিতে একদিন আগে শতাব্দী রায়ের ফ্যান ক্লাবের ফেসবুক পেজে তৃণমূল সাংসদের একটি লম্বা পোস্ট সামনে আসে। যেখানে তিনি বলেছিলেন, বীরভূমের এলাকার মানুষের সাথে তাঁর নিয়মিত নিবিড় যোগাযোগ রয়েছে। যদিও ইদানিং তাকে বেশ কিছু কর্মসূচিতে দেখা যাচ্ছে না বলে প্রশ্ন উঠছে। আর এই প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়েই খানিকটা অভিযোগের সুরে শতাব্দি রায় জানিয়েছিলেন, তাঁর মনে হয়, কেউ কেউ চান না তিনি বীরভূমের মানুষের কাছে যান। বহু কর্মসূচির খবর তাঁকে দেওয়া হয় না। এরপর ঐ পোষ্টের শেষে তিনি জানিয়েছিলেন ১৬ জানুয়ারি, শনিবার দুপুর দুটোর সময় এ বিষয়ে তার সিদ্ধান্তের কথা জানাবেন। শতাব্দী রায়ের এহেন ফেসবুক পোস্টের পরে তাঁর শিবির পরিবর্তনের জল্পনা নিয়ে সরগরম হয়ে ওঠে রাজ্য রাজনীতি। এও শোনা যায় যে, তিনি শীঘ্রই দিল্লিতে গিয়ে দেখা করবেন বিজেপির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে। যদিও সমস্ত জল্পনা বাতিল করে শেষ পর্যন্ত ঘাসফুলের অন্যতম সিপাহী হয়ে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে লড়াইয়ের স্পষ্ট বার্তা দিলেন সাংসদ অভিনেত্রী শতাব্দী রায়।

আজ শনিবার নিজের কথা মত একটি ফেসবুক পোস্ট করে তিনি নিজের সেই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন। গতকাল সন্ধ্যায় তৃণমূল সাংসদ অভিষেক ব্যানার্জীর সাথে কথোপকথন করেন তিনি। অভিষেক ব্যানার্জির সঙ্গে বৈঠকের প্রসঙ্গ উত্থাপন করে ফেসবুক পোস্টে শতাব্দি রায় লিখেছেন,”বীরভূমের নাগরিকদের প্রতি-আজ একটি পোস্ট করব বলেছিলাম। এই লেখার মাধ্যমে আমার বক্তব্য জানাচ্ছি। আমাকে কয়েকজন প্রশ্ন করছিলেন কেন এলাকার বহু কর্মসূচিতে আমাকে দেখা যাচ্ছে না। অথচ আমি তো চাই এলাকার মানুষের পাশে থাকতে। কিছু সমস্যা হচ্ছে। কিছু যন্ত্রণা অনুভব করছিলাম। চেষ্টা করছি সব বাধা টপকে এলাকায় সবসময় থাকার। বিষয়টি ফেসবুকের মাধ্যমে জানিয়েছিলাম আপনাদের। এই সূত্রেই কিছু বহুমুখী ঘটনা ঘটছিল। শেষ পর্যন্ত তৃণমূল পরিবারের প্রিয় নেতা সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আমার সবিস্তারে আলোচনা হয়েছে। আমি সমস্যার জায়গাগুলি জানিয়েছি। তিনিও শুনেছেন এবং আলোচনা হয়েছে। এই আলোচনা ইতিবাচক। সমস্যার সমাধান হবে বলে আমি আশাবাদী।”

এরপরে তৃণমূলের অন্যান্য কর্মী এবং নেতাদের উদ্দেশ্যে তাদের ক্ষোভ বা বক্তব্য বা সমস্যাদলের মধ্যেই মিটিয়ে নিয়ে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে একজোট হয়ে লড়াই এর বার্তা দিয়ে তৃণমূল সাংসদ আরো লেখেন,”সামনে নির্বাচন। যাঁরা তৃণমূলের কর্মী বা নেতা, আমার মতই তাঁদের কিছু ক্ষোভ বা বক্তব্য থাকতেই পারে। আমরা সেগুলি দলের মধ্যেই মেটাবো। ভোটে জয়ের পর পর্যালোচনা করব। এখন সবাই হাতে হাত মিলিয়ে লড়াই করার সময়। আসুন সবাই মমতাদির নেতৃত্বে তৃতীয় তৃণমূল সরকার গঠনের লক্ষ্যে বাংলার স্বার্থে কাজ করি। আমি যখন তৃণমূলে এসেছিলাম তখন সিঙ্গুর আন্দোলন চলছে। দল ক্ষমতায় নেই। কঠিন সন্ধিক্ষণ। শুধু দলকে ভালোবেসে, মমতাদিকে ভালোবেসে আমি এসেছিলাম। আজ আবার যখন সবাই বঙ্গরাজনীতির সন্ধিক্ষণ বলছেন, তখন আমার দলের মঞ্চ থেকেই লড়াই করার কর্তব্য থেকে পিছিয়ে যাব না।”

শুধু তাই নয়, সাম্প্রতিককালে দলের তরুণ নেতা তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাইপো ও তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে বিরোধী পক্ষের বিভিন্ন তির্যক মন্তব্যের পাল্টা ভুয়সী প্রশংসা করে বীরভূমের সাংসদ শতাব্দী রায় লিখেছেন,”আমি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে ধন্যবাদ দিচ্ছি। যেভাবে তিনি সমস্যা শুনেছেন, আলোচনা করেছেন, পরামর্শ দিয়েছেন, তাতে আমি নিশ্চিত তরুণ নেতাটি এখন যথেষ্ট দায়িত্বশীল ও পরিণত। নতুন প্রজন্মের এমন নেতার নেতৃত্ব দলকে শক্তিশালী করবে।”

পরিশেষে দলের প্রতিটি নেতা-কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশ্যে নিজেদের মনোমালিন্যের কথা ভুলে দলের একনিষ্ঠ সৈনিক হিসেবেবিরোধী দলগুলির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের আহ্বান জানিয়ে শতাব্দি রায় লিখেছেন,”তৃণমূল কংগ্রেস আবার জিততে চলেছে। আমি দলের সৈনিক হিসেবে আমার কর্তব্য পালন করে যাব। সেই সঙ্গেই আরও বেশি করে নিবিড়ভাবে থাকব আমার বীরভূমের মানুষের পাশে। ভালো থাকবেন। পাশে থাকবেন।সর্বস্তরের তৃণমূল পরিবারের সদস্যদের আবার বলছি, যদি কারুর কোনো ক্ষোভ থাকে, এতদিন যখন সেসব নিয়ে পথ চলেছি, এখন ভোটের মুখে প্রতিপক্ষের সুবিধে করে না দিয়ে, আসুন, বাংলার স্বার্থে আমরা গোটা তৃণমূল পরিবার এক হয়ে লড়াই করি।”

 

 

Related Articles

Back to top button
error: