HighlightNewsদেশ

শীর্ষ আদালতে হলফনামা দায়ের করে সাংবাদিক সিদ্দিক কাপ্পানের মুক্তির দাবিতে করা আবেদনের তীব্র বিরোধিতা করল উত্তরপ্রদেশ সরকার

টিডিএন বাংলা ডেস্ক: শীর্ষ আদালতে হলফনামা দয়া করে কেরালার সাংবাদিক সিদ্দিক কাপ্পানের মুক্তির দাবিতে করা আবেদনের তীব্র বিরোধিতা করেছে উত্তরপ্রদেশ সরকার। উত্তর প্রদেশ সরকারের দাবি ৫ অক্টোবর মথুরা পুলিশ হাথরাস যাওয়ার পথে একটি সুইফট ডিজায়ার গাড়িতে থাকা একজনকে খুব সন্দেহ অবস্থায় প্রচুর পরিমাণে পোস্টার এবং অন্যান্য প্রদাহজনক প্রচার সামগ্রী সঙ্গে গ্রেফতার করে। এই চারজন হলেন সাংবাদিক সিদ্দিক কাপ্পান, আতিক উর রেহমান, আলম ও মাসউদ।

সাংবাদিক সিদ্দিক কাপ্পানের মুক্তির দাবিতে কেরালার ওয়ার্কিং জার্নালিস্ট ইউনিয়ন নামে একটি সংস্থা সুপ্রিম কোর্টে একটি আবেদন করেছে। আবেদনকারীদের পক্ষ থেকে বরিশাল আইনজীবী কপিল সিবাল আদালতকে জানিয়েছেন মথুরা কারাগারে বন্দি সাংবাদিক সিদ্দিক কাপ্পানকে অবৈধভাবে আটক করা হয়েছে এবং তাকে কোনো আইনজীবীর সাথেও দেখা করতে দেওয়া হচ্ছে না। এ কারণে তিনি তাঁর জামিনের জন্য আবেদন করতে পারছেন না। শীর্ষ আদালতের কাছে সাংবাদিক সিদ্দিক কা পানকে মুক্তির আদেশ দেওয়ার জন্য আবেদন জানিয়েছেন কপিল সিবাল।

এই আবেদনের ভিত্তিতে কোর্টের দেওয়া নোটিশের জবাবে একটি হলফনামা দয়া করে উত্তর প্রদেশ সরকারের পক্ষ থেকে এই সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। রাজ্য সরকার জানিয়েছে, ৫ ই অক্টোবর দিল্লি থেকে একটি সুইফ্ট ডিজায়ার গাড়িতে হাথ্রাস যাচ্ছিল চারজনকে খুব সন্দেহজনক পরিস্থিতিতে মথুরা পুলিশ আটক করেছিল। তাদের কাছ থেকে প্রচুর পরিমাণে পোস্টার এবং অন্যান্য প্রদাহজনক প্রচার সামগ্রী পাওয়া গেছে। ধৃতদের আদালতে হাজির করা হয়েছিল। এর পরে তাঁদের বিচারিক হেফাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। সুতরাং, অবৈধভাবে আটক করে রাখার যে অভিযোগ করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

উত্তরপ্রদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ওই হলফনামায় আরও বলা হয়েছে, সিদ্দিক কাপ্পান আসলে বিতর্কিত সংস্থা পপুলার ফ্রন্ট অফ ইন্ডিয়ার অফিস সেক্রেটারি। তিনি সাংবাদিকতার পরিচয়টিকে নিজের ছদ্মবেশ হিসেবে ব্যবহার করেছেন।কেরালার যে সংবাদপত্র, তেজাস-এর পরিচয় পত্রে সাংবাদিক হিসাবে তাঁকে দেখানো হয়েছে, সেটি ২০১৮ সালেই বন্ধ হয়ে গেছে। তার সাথে গ্রেপ্তার করা অন্য তিনজন হলেন পিএফআইয়ের ছাত্র সংগঠন ক্যাম্পাস ফ্রন্ট অফ ইন্ডিয়ার সক্রিয় সদস্য। এ পর্যন্ত হওয়া তদন্তের রিপোর্ট অনুযায়ী এই মামলায় গভীর ষড়যন্ত্রের প্রমাণ পাওয়া গেছে। গোটা অঞ্চলে জাতিগত সহিংসতা ছড়ানোর ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল। এই কারণেই চারজন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে সহিংসতা, রাষ্ট্রদ্রোহের ধারার সাথেই ইউএপিএ আইনের আওতায় মামলা দায়ের করা হয়।

এরপর সাংবাদিক সিদ্দিক কাপ্পানের সঙ্গে তার পরিবার বা আইনজীবীর সঙ্গে সাক্ষাতের অনুমতি না দেওয়ার অভিযোগকেও মিথ্যে বলে দাবি করেন উত্তরপ্রদেশ সরকারের পক্ষ থেকে নিযুক্ত আইনজীবী তুষার মেহতা। উত্তর প্রদেশ সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সিদ্দিক কা পানকে গ্রেফতার করার সঙ্গে সঙ্গেই তাঁর পরিবারকে ফোন করে পুরো বিষয়টি জানানো হয়। এমনকি সিদ্দিক কাপ্পান নিজে তার পরিবারের সাথে ফোনে তিনবার কথোপকথনও করেছেন কিন্তু এখনো পর্যন্ত তাঁর পরিবারের তরফ থেকে কেউ তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করতে আসেননি। তার সাথেই গ্রেফতার হওয়া অপর তিন অভিযুক্ত ইতিমধ্যেই নিজেদের আইনজীবীদের মাধ্যমে জামিনের আবেদন করেছেন এবং তা আদালত খারিজ করেছে।এই পরিস্থিতিতে অভিযুক্তদের সঙ্গে তাদের আইনজীবীদের দেখা করতে দেওয়া হচ্ছে না এই অভিযোগ সর্বৈব মিথ্যা বলে দাবি করেছেন উত্তর প্রদেশ সরকারের পক্ষ থেকে নিযুক্ত আইনজীবী তুষার মেহেতা।

এ প্রসঙ্গে শীর্ষ আদালতে তুষার নেতা আরো বলেন,যখন অভিযুক্তকে আইনজীবীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে কোনো রকম বাধা দেওয়া হচ্ছেনা তাহলে তিনি নিজেই উপযুক্ত আদালতে নিজের জামিনের জন্য আবেদন করতে পারেন। তুষার মেয়ে তার এই মন্তব্যের পর প্রধান বিচারপতি এস এ বোবদের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ কপিল সিবালকে জিজ্ঞাসা করেন,”অভিযুক্ত যখন নিজেই আবেদনপত্র দায়ের করতে সক্ষম, তখন আপনি কেন আবেদনপত্র দায়ের করেছেন?”

এর জবাবে বরিষ্ঠ আইনজীবী কপিল সিবাল আদালতকে জানিয়েছেন উত্তরপ্রদেশ সরকারের পক্ষ থেকে দাখিল করা এই জবাব সম্পূর্ণ ভুল। তিনি আদালতকে জানান এখনো পর্যন্ত, সিদ্দিক কাপ্পানকে কোনো আইনজীবীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে দেওয়া হয়নি। এর জবাবে উত্তরপ্রদেশ সরকারের পক্ষ থেকে আইনজীবী তুষার মেহেতা আদালতকে জানান, আজই কোনও আইনজীবী মথুরা জেলে তাঁর সাথে দেখা করতে পারেন। আবেদনে স্বাক্ষর নিতে পারেন। এর আগেও এ এ বিষয়ে কোনও বাধা ছিল না, এখন বাধাও নেই।

শীর্ষ আদালতে উত্তরপ্রদেশ সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া এই বিবৃতির রেকর্ড করা হয়েছে এবং এক সপ্তাহের জন্য এই মামলার শুনানি স্থগিত করার আদেশ দেওয়া হয়েছে। আগামী সপ্তাহে আদালত যদি সিদ্দিক কাপ্পানের আইনি অধিকার লঙ্ঘিত না হওয়ার বিষয়টি নিয়ে সন্তুষ্ট হয় এবং সাংবাদিক সিদ্দিক কাপ্পানকে কোনো আইনজীবীর মাধ্যমে নিজে জামিনের জন্য আবেদন করা থেকে বিরত না করা হয় তাহলে কেরালা ওয়ার্কিং জার্নালিস্ট ইউনিয়নের তরফ থেকে সিদ্দিক কাপানের মুক্তির দাবিতে করা আবেদন নিষ্পত্তি করা হতে পারে।

Related Articles

Back to top button
error: