HighlightNewsআন্তর্জাতিক

আজকের দিনে বিশ্বের অন্যতম আলোচিত ব্যক্তি তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান! কেন তিনি এত বিখ্যাত

টিডিএন বাংলা ডেস্ক: তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। অনেকের কাছে তিনি ভালোবাসার পাত্র, অনেকের কাছে চক্ষুশূল। অনেকে আবার তাঁকে তুলনা করেন তুরস্কের সেকালের সুলতানদের সঙ্গে। এমন তুলনা হবেই–না বা কেন। অসামান্য ব্যক্তিত্ব আর প্রভাব সৃষ্টির শৈলী দিয়ে ২০ বছর ধরে তুরস্কের রাজনীতিতে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন তিনি।

এরদোয়ান তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন ২০০৩ সালে। ২০১৪ সাল পর্যন্ত এ দায়িত্ব পালন করেন। সে বছরই দেশটির প্রেসিডেন্টের গদিতে বসেন। এরপর থেকে টানা রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এর মধ্য দিয়ে তুরস্কে বিগত কয়েক প্রজন্মের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নেতা হয়ে উঠেছেন এরদোয়ান।

এরদোয়ানের চরিত্রের আরও কয়েকটি দিক আছে। যেমন তিনি একজন ফুটবলার ছিলেন, ধর্মকর্ম পালনে একনিষ্ঠ, বক্তৃতা দিতেও পটু। চলুন ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখে নেওয়া যাক তুরস্কের প্রেসিডেন্টের বিভিন্ন পরিচয়। এরদোয়ানের বাবা ছিলেন একজন নাবিক। কঠোর মানুষ। বাবার কথা মেনে অনিচ্ছা সত্ত্বেও ফুটবল খেলা ছেড়েছিলেন তিনি। তবে এই খেলার প্রতি তাঁর ভালোবাসা কমেনি।

নির্মাতা

তুরস্কে সেতু, মহাসড়ক, বিমানবন্দর, মসজিদ—কী নির্মাণ করেননি এরদোয়ান! শুরুতেই বলা যায় তিনটি সেতুর কথা। তাঁর ভাষায়, এগুলো ‘মাথা খারাপ করে দেওয়ার মতো প্রকল্প’। এ প্রকল্পে বসফরাস প্রণালির ওপর একটি, মারমারা সাগরের ওপর একটি ও দারদানেলেস প্রণালির ওপর একটি সেতু রয়েছে।

৩টি সেতুই রেকর্ড করেছে। যেমন করেছে ইস্তাম্বুলের কামলিকা মসজিদ। ছয় মিনারের এই মসজিদ তুরস্কের সবচেয়ে বড় মসজিদ। একসঙ্গে ৩০ হাজার মুসল্লির নামাজ পড়ার সুযোগ রয়েছে সেখানে। তবে এসবের মধ্যে সবচেয়ে তাক লাগানোর মতো ইস্তাম্বুল খাল। বর্তমানে বসফরাস প্রণালির পশ্চিমে এই খালের নির্মাণকাজ চলছে।

এখানেই শেষ নয়। রয়েছে উচ্চগতির ট্রেন, ইস্তাম্বুলের তৃতীয় বিমানবন্দর ও নানা বিদ্যুৎকেন্দ্র। বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর একটি পারমাণবিক। আর নির্মাণের পর ইস্তাম্বুলের তৃতীয় বিমানবন্দরটি হবে বিশ্বের সবচেয়ে বড়। জাতীয় কোনো নির্বাচনে কখনো পরাজিত হননি এরদোয়ান। এটা তাঁর কাছে গর্বের বিষয়। গর্ব করতে পারেন তাঁর বক্তৃতা দেওয়ার প্রতিভা নিয়েও।

ফুটবল খেলোয়াড়

এরদোয়ানের উচ্চতা ছয় ফুটের বেশি। তরুণ বয়সে ফুটবলে বেশ আগ্রহ ছিল তাঁর। নামও কামিয়েছিলেন। ডাক পেয়েছিলেন নামীদামি সব পেশাদার ফুটবল ক্লাবের হয়ে খেলার। তবে বাদ সাধেন তাঁর বাবা। জানিয়ে দেন তাঁকে ধর্ম নিয়ে পড়াশোনা করতে হবে।

এরদোয়ানের বাবা ছিলেন একজন নাবিক। কঠোর মানুষ। বাবার কথা মেনে অনিচ্ছা সত্ত্বেও ফুটবল খেলা ছেড়েছিলেন তিনি। তবে খেলার প্রতি তাঁর ভালোবাসা কমেনি। ফুটবল খেলোয়াড়দের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগও রেখেছেন। ২০১৪ সালে এরদোয়ানের ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ একজন ব্যবসায়ী তুরস্কের বাসাকসেহির ফুটবল ক্লাব কিনে নেন। দ্রুতই ক্লাবটি বেশ শক্তিশালী হয়ে ওঠে। ২০২০ সালে এসে তুরস্কের লিগ ফুটবলে জয় পায় বাসাকসেহির।

ধর্মপ্রাণ মুসলমান

প্রেসিডেন্ট না হয়ে এরদোয়ান যদি মসজিদের ইমাম হতেন, তাতে হয়তো আপত্তি জানাতেন না তাঁর বাবা। কামাল আতাতুর্কের গড়া অসাম্প্রদায়িক তুরস্কে একটি সরকারি ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করেছেন এরদোয়ান। সেখানে পবিত্র কোরআন থেকে শিক্ষা নিয়েছেন তিনি।

এরদোয়ানের রাজনৈতিক দল জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (একেপি) এবং তাঁর ভোটারদের ইসলাম ধর্ম গুরুত্ব পাচ্ছে। ধর্ম মেনে চলার পক্ষে কথা বলছেন এরদোয়ান। নেমেছেন পারিবারিক মূল্যবোধ রক্ষায়। অপরদিকে মদ্যপান ও ধূমপানের বিরোধিতা করছেন তিনি। এ ছাড়া স্কুল ও সরকারি চাকরিতে নারীদের মাথায় স্কার্ফ পরায় সমর্থন দিচ্ছে একেপি। ১৯২৩ সালে কামাল আতাতুর্ক যখন অসাম্প্রদায়িক তুরস্ক প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, তখন নারীদের এ অধিকার ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছিল।

প্রতিভাবান বক্তা

জাতীয় কোনো নির্বাচনে কখনো পরাজিত হননি এরদোয়ান। এটা তাঁর কাছে গর্বের বিষয়। গর্ব করতে পারেন তাঁর বক্তৃতা দেওয়ার প্রতিভা নিয়েও। মঞ্চে উঠে যেন নতুন জীবন পান এরদোয়ান। নির্বাচন সামনে রেখে প্রতিদিন শহরে শহরে ছুটছেন এরদোয়ান। বিশাল সব জনসমাবেশে মোহনীয় বক্তৃতা দিচ্ছেন। চাকরিজীবীদের বেতন বাড়ানোর কথা বলছেন। শিশুদের চুমু দিচ্ছেন। গলা মেলাচ্ছেন বৃদ্ধ নারীদের সঙ্গে। শিশুদের খুচরা অর্থ দিতেও ভোলেননি। তুরস্কের ধর্মীয় উৎসবে শিশুদের অর্থ উপহার দেওয়া একটি রীতি।

সফল কূটনীতিক

ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের মধ্যে তুরস্কের কৌশলগত অবস্থানে ভারসাম্য ধরে রেখেছেন এরদোয়ান। কূটনৈতিক সুবিধা উপভোগের জন্য কৃষ্ণসাগরের দক্ষিণ উপকূল ও ভূমধ্যসাগরের উত্তর উপকূল ভালোভাবেই সামলে রেখেছেন তিনি।

ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা শুরুর পরপরই এরদোয়ান যুদ্ধ বন্ধে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকায় নেমেছিলেন। কারণ, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে হাতে গোনা যে কয়েকজন বিশ্বনেতার ঘনিষ্ঠতা রয়েছে, তাঁদের মধ্যে একজন তিনি। আবার রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়তে ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তাও দিয়েছেন। ইউক্রেনের শস্য রপ্তানি চুক্তি তৈরিতে তাঁর ভূমিকা বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছে।

অপরদিকে সিরিয়ায় হস্তক্ষেপ করে পশ্চিমাদের বিরাগভাজন হয়েছেন এরদোয়ান। একপর্যায়ে তিনি এমন পরিস্থিতি তৈরি করেছিলেন যে মনে হচ্ছিল ইরাক থেকে গ্রিস—সব প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়েছে তুরস্ক। এ ছাড়া ইসরায়েল–মিসর সম্পর্ক ভেঙেছেন এরদোয়ান। লিবিয়া যুদ্ধে নাক গলিয়েছেন। আর ২০২০ সালে নাগোরনো–কারাবাখ নিয়ে যুদ্ধে আর্মেনিয়াকে পরাজিত করতে আজারবাইজানের পাশে দাঁড়িয়েছেন তিনি।

এদিকে, আগে থেকেই অর্থনৈতিক সংকটে ছিল তুরস্ক। গত ফেব্রুয়ারিতে ভয়াবহ ভূমিকম্পে এ সংকট আরও গভীর হয়েছে। দেশের অনেক মানুষের মধ্যে তৈরি হয়েছে অসন্তোষ। এ নিয়ে চাপের মুখে রয়েছেন এরদোয়ান। পরিস্থিতি সামলাতে কাজও করছেন। চেষ্টা করছেন দেশে বিনিয়োগ আনার। সার্বিকভাবে তিনি কতটুকু সফল হলেন, এর পরিষ্কার হিসাব পাওয়া যাবে আজ রোববারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে। সূত্র- প্রথম আলো

Related Articles

Back to top button
error: