নুরুদ্দিন শাহ
আমেরিকা ভিত্তিক হিন্দু ও মানবাধিকার সংগঠনগুলিসহ ভারত ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের হিন্দু সংগঠন ও নেতৃত্ব স্থানীয় ব্যক্তিগন একটি যৌথ বিবৃতিতে ভারতে অনুষ্ঠিত মুসলিম বিদ্বেষের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন। বিভিন্ন হিন্দু সংগঠন ও নেতৃত্বস্থানীয় ব্যক্তি একটি যৌথ বিবৃতিতে বলেছেন, “সময় অনেক আগেই পার হয়ে গেছে” আর দেরি নয়, বিশ্বব্যাপী হিন্দু সমাজের নীরবতা ভেঙে এগিয়ে আসতে হবে। ভারতে মুসলিম এবং অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর যেভাবে হিংসা বিদ্বেষ ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে এবং ব্যাপক গণহত্যার লক্ষ্যে যেভাবে হিন্দুত্বের নামে এক শ্রেণির উগ্রবাদী অগ্রসর হচ্ছে তা দেখে আর চুপ থাকার সময় নেই।
দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে প্রকাশিত একটি বিবৃতিতে তারা দাবি করেছেন, যে হিন্দুত্বের নামে ভারতে মুসলিম বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে। বলা হয়েছে, একশ্রেণীর মানুষ হিন্দুত্বের নামে প্রকৃত হিন্দু ধর্মের ঐতিহ্য থেকে সরে গিয়ে তাদের রাজনৈতিক স্বার্থেই হিন্দু ধর্মকে ব্যবহার করছে। তারা অন্য ধর্ম বিশ্বাসের প্রতি অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে। ভারতে বসবাসরত অন্য ধর্ম সম্প্রদায়কে তারা নাগরিক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করতে চায়।
বলা হয়েছে, গেরুয়া বসনধারী সাধু, সাধ্বী এবং স্বামীগণের অনেকেই হরিদ্বার ধর্ম সংসদে প্রকাশ্যে ভারতীয় মুসলিমদের গণহত্যার ডাক দিয়েছে। এরপরেও প্রকৃত হিন্দুত্ববাদীরা নীরব থাকতে পারেনা।
এই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ভারতের কর্ণাটকে মুসলিম মহিলাদের হিজাবের নামে শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। এটা আমাদের ধর্মীয় ঐতিহ্যের পরিপন্থী। এই বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, যখন পাকিস্তান বাংলাদেশ সংখ্যালঘুদের প্রতি কোন অবিচার হয় তার প্রতিক্রিয়ায় ভারতের সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার করাটা হিন্দু ধর্মের আদর্শ অনুযায়ী মানানসই নয়। এই বিবৃতিতে দাবি করা হয়েছে ধর্মীয় উগ্রতা প্রতিরোধ একমাত্র তখনই করা যায় যদি আমরা পরস্পর পরস্পরের জীবন ও মর্যাদা রক্ষা করি। এই বিবৃতিতে আবেদন করা হয়েছে মুসলিম বিদ্বেষী কথাবাত্রা যাতে না বলা হয়, মুসলিম প্রতিবেশীদের সঙ্গে যাতে সুসম্পর্ক গড়ে তোলা সম্ভব হয়। বলা হয়েছে, তাদের ধর্ম স্থানগুলি সকলের জন্য, হিন্দু ধর্ম সকল মানুষের ধর্মীয় স্বাধীনতাকে স্বীকার করে।
মুসলিম ভাইদের প্রতি সংহতি প্রকাশ একজন হিন্দু হিসাবে আমরা বিশ্বাস করি সমস্ত সৃষ্টির মধ্যে ভগবান বিরাজ করছে। এই বিশ্বাসের মধ্য দিয়ে আমরা সকল প্রাণীর প্রতি সম্মান ও মর্যাদাকে স্বীকৃতি দিই। সকলের প্রতি অহিংসা ও করুণার নীতি গ্রহণ করে থাকি।
আমরা দুঃখের সঙ্গে এই পত্র লিখছি যে আমরা গভীরভাবে লক্ষ্য করছি ভারতে মুসলিম ভাইদের প্রতি হিংসা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। তাও আবার ধর্মের নামে। হিন্দু ধর্ম থেকে বিচ্যুত কিছু হিন্দু নেতা হিন্দুত্বের নামে ধর্মকে রাজনীতির অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে।
আমরা যখন দেখি কিছু ছবি ও ভিডিও যে গেরুয়া বসন ধারী সাধু, সাধ্বী, স্বামীগন ভারতীয় মুসলিমদের বিরুদ্ধে গণহত্যার আহ্বান জানাচ্ছে তখন আমরা তাকে উপেক্ষা করতে পারিনা। 2021 সালের ডিসেম্বরে হরিদ্বারে আমরা এইরূপ ধর্ম সংসদ হতে দেখেছি। আমরা দেখেছি মুসলিম নারীদেরকে অপশনে তোলা হচ্ছে কলেজ ছাত্রদের তৈরি করা অ্যাপস এর মাধ্যমে এবং হিজাব পরিহিতা মুসলিম ছাত্রীদেরকে তাদের শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে কর্ণাটক নামক রাজ্যে।
অনেক সময় পার হয়ে গেছে, বিশ্বের সমস্ত হিন্দু মানুষদেরকে ঐক্যবদ্ধভাবে এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে হবে। হয়তো অনেকে প্রশ্ন করতে পারেন কেন আমরা ভারতীয় মুসলিমদের পক্ষে কথা বলছি? পৃথিবীর অন্য কোন দেশে কি হিন্দুরা আক্রান্ত হয়নি? আমাদের উত্তর খুবই স্পষ্ট। একমাত্র ধর্মীয় হিংসার এই চক্রাকার প্রক্রিয়া আমরা তখনই বন্ধ করতে পারবো যখন দক্ষিণ এশিয়ায় আমরা পরস্পর পরস্পরের সম্মান ও মর্যাদা রক্ষা করতে শিখব। পাকিস্তান বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতে যখন সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর হিংসার ঘটনা ঘটে তার প্রতিক্রিয়ায় ভারতীয় মুসলিমদের প্রতি হিংসার ঘটনা ঘটানো কোন উত্তর হতে পারে না।
আমরা সকলের প্রতি আবেদন জানিয়ে বলতে চাই মুসলিম বিদ্বেষী কথাবার্তা বলা থেকে বিরত থাকুন।
মুসলিম প্রতিবেশী, মুসলিম নেতৃত্ব, এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন করার চেষ্টা করুন। আমাদের মন্দির এবং বাড়িগুলি সকলের জন্য উন্মুক্ত করে দিন কোন ধর্মীয় বাছ বিচার ছাড়াই।
আমাদের ধর্মীয় শিক্ষা আমাদেরকে সকলের ধর্মের স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দিতে শেখায়। সকলের প্রতি সামাজিক সুবিচার আমাদের ধর্মের বৈশিষ্ট্য। বৈষম্য ভেদাভেদ ও ঘৃণা আমাদের ধর্মের সঙ্গে সামঞ্জস্যশীল নয়।