HighlightNewsদেশ

অগ্নিপথ প্রকল্পের বিরুদ্ধে উত্তাল ৮ রাজ্য, উত্তরপ্রদেশ-বিহার, তেলেঙ্গানায় ট্রেনে আগুন; সেকেন্দ্রাবাদে নিহত ১

টিডিএন বাংলা ডেস্ক: সেনাবাহিনীতে নিয়োগের জন্য কেন্দ্র সরকারের নয়া প্রকল্প “অগ্নিপথ”-এ বয়সসীমা বাড়ানোর পরও বিক্ষোভ থামার নামই নেই। উত্তরপ্রদেশ ও বিহারে ট্রেনে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে বিক্ষুব্ধ জনতা। একাধিক জায়গায় রেললাইন ও রাস্তা অবরুদ্ধ করা হয়েছে। এদিন সকাল ৫টা থেকে উত্তরপ্রদেশের বালিয়ায় বিক্ষোভ শুরু হয়। ভেঙে ফেলা হয়েছে একাধিক গাড়ির জানালার কাঁচ। এই ঘটনায় একজন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ফিরোজাবাদে আগ্রা-লখনউ এক্সপ্রেসওয়েতে চারটি বাসে ভাঙচুর চালায় বিক্ষুব্ধ জনতা। অবরোধ করা হয় রাস্তা। হরিয়ানার নার্নাউলেও বিক্ষুব্ধ যুবকরা রাস্তা অবরোধ করে। তেলেঙ্গানার সেকেন্দ্রাবাদ রেলওয়ে স্টেশনেও বিভিন্ন জায়গায় আগুন লাগানো হয়েছে। একই সাথে চলেছে ভাঙচুর। এই বিক্ষোভ চলাকালীন একজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে।

অন্যদিকে, রাজস্থানের ভরতপুর জংশন রেলস্টেশনে এক পুলিশ সদস্যকে বেধড়ক মারধর করে বিক্ষোভকারীরা। রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে ওই পুলিশকর্মীকে। বিক্ষোভের কারণে প্রায় ২০০টি ট্রেন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সারা দেশে বাতিল করা হয়েছে ৩৫টি ট্রেন, এছাড়া আরো ১৩টি ট্রেন কিছু সময়ের জন্য বাতিল করা হয়েছে। বিহারের ১৯টি জেলায় ব্যাপক বিক্ষোভ চলছে। বিক্ষোভকারীরা সমষ্টিপুরে দুটি যাত্রীবাহী ট্রেন, লক্ষীসরাইয়ে দুটি, আরা ও সুপলে একটি করে ট্রেনে আগুন লাগিয়ে দেয়। পাশাপাশি, বক্সার ও নালন্দা সহ একাধিক জেলায় রেলপথে আগুন লাগানো হয়েছে। এই ঘটনার পর আরাহর সড়কে বিপুল যানজট সৃষ্টি হয়েছে। শুধু তাই নয়, বেত্তিয়ায় ডেপুটি সিএম রেণু দেবীর সরকারি বাসভবনেও পাথর ছুঁড়ে হামলা করে বিক্ষোভকারীরা।

বৈশালীর হাজিপুর রেলস্টেশনেও ভাঙচুর চালায় উত্তেজিত ছাত্ররা। সমস্তিপুরে, বিক্ষোভকারীরা জম্মু তাওয়াই-গুয়াহাটি এক্সপ্রেস, বিহার যোগাযোগ ক্রান্তি জ্বালিয়ে দেয়। হাজীপুর-বরাউনি রেল সেকশনের মহিউদ্দিননগর স্টেশনেও আগুন লাগানো হয়। সকাল ৬টা থেকে রেললাইনের ওপর বসে রয়েছেন আন্দোলনকারীরা। রেলওয়ে সব জায়গায় ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। বাতিল করা হয়েছে একাধিক ট্রেন। উত্তর প্রদেশের বালিয়ায়, অগ্নিপথ প্রকল্পের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু হয় ভোর পাঁচটা থেকে। বালিয়া ওয়াশিংপিটে পার্ক করা ট্রেনে আগুন লাগিয়ে দেয় যুবকরা। শতাধিক যুবক প্রথমে রেলস্টেশনে তোলপাড় সৃষ্টি করে, পরে অনেক গাড়ির জানালা ভেঙে দেয়। পুলিশ এক দুষ্কৃতীকে আটক করেছে। বৃহস্পতিবার উত্তরপ্রদেশের ১১টি জেলায় ভয়াবহ বিক্ষোভ হয়েছে। আগ্রা, আলিগড়ে বাসে ভাঙচুর চালায় যুবকরা। বুলন্দশহরেও বিক্ষোভ করতে দেখা যায় যুবকদের। পরিস্থিতি এতটাই নিয়ন্ত্রণে আনতে লাঠিচার্জ করতে বাধ্য হয় পুলিশ। মিরাট, দেওরিয়া, সীতাপুরের পাশাপাশি উন্নাওয়ের শুক্লাগঞ্জেও বিক্ষোভ করছে আন্দোলনকারী যুবকরা।

ফিরোজাবাদে, “অগ্নিপথ” প্রকল্পের বিরোধিতায় সকাল সাতটা থেকে রাস্তায় নেমেছিল উত্তেজিত যুবকরা। আগ্রা-লখনউ এক্সপ্রেসওয়েতে ৪টি বাস ভাঙচুর ও জ্যাম করা হয়েছে। ঘটনাস্থলে পৌঁছে দাঙ্গাবাজদের দৌড়ে কোনোরকমে জ্যাম খুলে দেয় পুলিশ। ভরতপুরেও “অগ্নিপথ” প্রকল্পের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিক্ষুব্ধ যুবকরা। প্রথমে যুবকরা শহরের এক জায়গায় জড়ো হওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের তাড়িয়ে দেয়। এরপর ধীরে ধীরে রেললাইনে জড়ো হতে থাকে যুবকরা। রেললাইন জ্যাম হয়ে যায়। বিপুল সংখ্যক যুবক রেললাইনের ওপর বসে কেন্দ্র সরকারের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকে। পুলিশ তাদের আটক করতে গেলে যুবকরা পাল্টা পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর ছোঁড়ে। এই ঘটনায় আহত হয়েছেন একাধিক পুলিশ সদস্য। একজন পুলিশ সদস্যের মাথা ফেটে গিয়েছে। পরে যুবকদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে পুলিশ।

মধ্যপ্রদেশের ইন্দোর রেলস্টেশনেও “অগ্নিপথ” প্রকল্পের বিরোধিতায় তুমুল বিক্ষোভ করছেন যুবকরা। শুক্রবার সকালে এখানকার রেলস্টেশনে সেনাবাহিনীতে নিয়োগের জন্য আসা যুবকরা তুমুল বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছয় পুলিশ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বলপ্রয়োগ করতে বাধ্য হয় পুলিশ। ঘটনাস্থলে আশেপাশের থানার বাহিনীও মোতায়েন করা হয়েছে। এর পরে ছাত্ররা জড়ো হয়ে লক্ষ্মীবাই নগর স্টেশনে পৌঁছায়। সেখানে শিক্ষার্থীরা অবরোধ করলে পুলিশের গাড়ি পাঠানো হয়। পুনে থেকে ইন্দোরগামী ট্রেনও আটকে দেয় ছাত্ররা। ইন্দোর থেকে উজ্জয়নগামী মেমু সহ দুটি ট্রেন বাতিল করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ভারী বাহিনী মোতায়েন করা হয়।

শুক্রবার সকাল থেকে হরিয়ানায় ফের “অগ্নিপথ” প্রকল্পের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। শুক্রবার সকালে, যুবকরা নার্নাউল শহরের বাসস্ট্যান্ডে প্রচণ্ড বিক্ষোভ করে। অভিযোগ, কেন্দ্র সরকারের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে দিতে ওই এলাকার একাধিক দোকানে লুটপাট চালানো হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে লাঠিচার্জ করে পুলিশ। ইতিমধ্যেই মহাবীর চক ও বাসস্ট্যান্ড থেকে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করা হয়েছে। এই ঘটনায় প্রায় ২০ জনের বেশি বিক্ষোভকারীকে আটক করেছে পুলিশ। ঘটনাস্থলে পৌঁছেছেন পুলিশের শীর্ষ আধিকারিকরাও। জিন্দের নারওয়ানায় দিল্লি-ফিরোজপুর রেলপথ অবরোধ করেছে যুবকরা। জিন্দে বিক্ষোভ চলছে, অন্যদিকে রাতিয়া, ফতেহাবাদে, যুবকরা সঞ্জয় চকে বিক্ষোভ করছে।

“অগ্নিপথ” প্রকল্পের বিরুদ্ধে হরিয়ানার পালওয়ালে আন্দোলনকারী যুবকদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিয়েছে পুলিশ। ক্যাম্প ও সিটি থানা পুলিশ ১৪২ জনের নাম উল্লেখ সহ শতাধিক যুবকের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা নথিভুক্ত করে অভিযান শুরু করেছে পুলিশ। অভিযোগ, গতকাল জাতীয় সড়ক অবরোধ করে, দেশী পিস্তল ব্যবহার করে গুলি ও লাঠি দিয়ে পুলিশ বাহিনীর ওপর আক্রমণ করে বিক্ষুব্ধ যুবকরা। একইসাথে ছোঁড়া হয় পাথর। এর ফলে আহত হয়েছেন বহু পুলিশ সদস্য।

ঝাড়খণ্ডের পালামু জেলায় রেলওয়ে ট্র্যাকে পুশআপ করে প্রতিবাদ জানিয়েছেন যুবকরা। শুক্রবার ডাল্টনগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনে প্রায় ৪৫ মিনিট ধরে হট্টগোল চলে। হাতে তেরঙ্গা নিয়ে ট্র্যাকে বসে অগ্নিপথ প্রকল্প প্রত্যাহারের দাবি জানালেন যুবকরা। আন্দোলনের আগুনের রেশ পৌঁছেছে দক্ষিণ ভারতেও। বিক্ষোভকারীরা তেলেঙ্গানার সেকেন্দ্রাবাদ রেলওয়ে স্টেশনে ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয়।

দিল্লির আইটিও মেট্রো স্টেশনের বাইরে আম আদমি পার্টির ছাত্ররাও বিক্ষোভ করছেন কেন্দ্রের ওই নয়া প্রকল্পের বিরুদ্ধে। আম আদমি পার্টির ছাত্র সংগঠন ছাত্র-যুব সংগ্রাম সমিতির নেতৃত্বে দিল্লির আইটিও মেট্রো স্টেশনে একটি বিক্ষোভ প্রদর্শিত হয়। ছাত্ররা জানান, যারা মহাত্মা গান্ধীর নীতি মেনে চলে এটা তাদের দেশ। এখানে প্রত্যেকেরই শান্তিপূর্ণভাবে মত প্রকাশের অধিকার রয়েছে। অগ্নিপথ প্রকল্প তরুণদের বিরুদ্ধে। কিন্তু, এর বিরুদ্ধে হিংসাত্মক অভিব্যক্তি করাও অন্যায়। বিক্ষোভের জেরে আইটিও মেট্রো স্টেশনের সমস্ত গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের আটক করে পুলিশ।

এদিকে গোটা দেশে চলতে থাকা আন্দোলন-বিক্ষোভের মাঝেই প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং আন্দোলনরত ছাত্রদের হট্টগোল না করার আবেদন জানিয়ে বলেন, দু বছর সেনাবাহিনীতে যোগদানের সুযোগ দেওয়া যায়নি। এতে স্থবির হয়ে পড়েছে নিয়োগ প্রক্রিয়া। এই বিবেচনায় সরকার অগ্নিবীর নিয়োগের বয়সসীমা দু’বছর বাড়িয়েছে। তরুণদের প্রতি আহ্বান করা হচ্ছে, প্রতিবাদ না করে, নিয়োগের প্রস্তুতি নিন। সেনাপ্রধান জেনারেল মনোজ পান্ডেও যুবকদের ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে অগ্নিবীর হওয়ার আবেদন জানিয়েছেন।

Related Articles

Back to top button
error: