টিডিএন বাংলা ডেস্ক : উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বারাসাতে যশোর রোডের কাছে মতুয়া মেলায় যোগ দিতে যাওয়া পুণ্যার্থীদের ওপর হামলার অভিযোগ ওঠে। অভিযোগ, ঠাকুরনগরে ঠাকুরবাড়িতে মেলায় যোগ দিতে যাচ্ছিলেন মতুয়ারা। পথেই পুণ্যার্থীদের বাস আটকায় প্রায় ৩০ জন দুষ্কৃতী। তারপর দুষ্কৃতীরা ওই বাসে হামলা চালায়। ভাঙচুর করে বাস, মারধর করে পুণ্যার্থীদেরও। এই ঘটনায় আহত হন অনেকেই। স্থানীয়রাই আহতদের উদ্ধার করে সোনারপুরের একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে ভর্তি করে। তাঁদের মধ্যে সুমন হালদার নামে এক পুণ্যার্থীর আঘাত গুরুতর বলে জানা গেছে। ঠাকুরবাড়ির মেলায় যোগ দিতে যাওয়া মতুয়াদের উপরে এই হামলার ঘটনায় উত্তপ্ত রাজ্য রাজনীতি। এই হামলার ঘটনায় রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি।
মতুয়ার বিজেপি নেতা শান্তনু ঠাকুর এই হামলার জন্য শাসক দলকেই দায়ি করেছেন। তিনি জানিয়েছেন রাজ্য প্রশাসনের উপর তাঁদের কোনো আস্থা নেই। পাশাপাশি তিনি দাবি করেন আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করতে হবে। অন্যথায় তারা আন্দোলনে নামবেন বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। ক্ষুব্ধ বনগাঁর সাংসদ শান্তনু ঠাকুরের ভাষায়, “যে এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে, সেটা অত্যন্ত অসুরক্ষিত এলাকা। বারবার ওই ধরনের ঘটনা ঘটেছে এলাকায়। প্রশাসনকেও জানানো হয়েছে। প্রশাসনকে বলব, সব অভিযুক্তকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার করুক। তা না হলে আমরা সংগঠন থেকে ব্যবস্থা নেব কী করতে হয়। এর জন্য সম্পূর্ণভাবে দায়ী থাকবেন আপনারা।”
যদিও এই হামলার ঘটনাকে বিজেপির পরিকল্পনা বলে পাল্টা অভিযোগ করেছেন তৃণমূল নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার। তিনি বলেন, “প্রথম থেকেই বলছি বিজেপি ষড়যন্ত্র করছে। যারা ২০২১ এর ভোটে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়েছে। মতুয়াদের জন্য সবথেকে বেশি করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মতুয়াদের পাশে সবসময় থেকেছেন। শুভেচ্ছাবাণী পাঠিয়েছেন। এই ঘটনা বিজেপির পরিকল্পিত। এই বাসের ওপর হামলা ষড়যন্ত্র। মতুয়াদের সঙ্গে শাসকদলের বিরোধ বাধাতে চাইছে বিজেপি। দোষীদের শাস্তি দেওয়া হোক।”
অন্যদিকে, মতুয়া পুণ্যার্থীদের উপর দুষ্কৃতী হামলাকে ষড়যন্ত্র বলে দাবি করলেন রাজ্যের পুর ও নগরেন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি, বড়মা এবং মতুয়াদের প্রতি যথেষ্ট শ্রদ্ধাশীল। মুখ্যমন্ত্রী নিজে মতুয়া মন্দিরে যান। এটি একটি অত্যন্ত নিন্দনীয় ঘটনা। আমার ধারণা এর পিছনে কোনও বড় ষড়যন্ত্র জড়িয়ে রয়েছে। আমি পুলিশকে বলব গোটা ঘটনার পেছনে কারা জড়িত রয়েছে তা খুঁজে বার করতে।’
শুক্রবার মতুয়া পুণ্যার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে উত্তর ২৪ পরগনার বিভিন্ন স্টেশনে প্রতীকী অবরোধ হয়। হাবড়া স্টেশনে রেল অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান মতুয়া সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা। ট্রেন আটকে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন তাঁরা। তবে কিছুক্ষনের মধ্যেই হাবড়া থানার পুলিশ ও রেল পুলিশ গিয়ে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলেন। পুলিশ দোষীদের বিরুদ্ধে দ্রুত পদক্ষেপের আশ্বাস দিলে অবরোধ তুলে নেয় বিক্ষোভকারীরা। এদিকে পুলিশ সূত্রে খবর, ঘটনার পরপরই এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ দেখে, আক্রান্তদের সঙ্গে কথা বলে হামলাকারীদের চিহ্নিত করার প্রচেষ্টা শুরু করে পুলিশ। বারাসাত থানার পুলিশ অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি শুরু করেছে। এই ঘটনায় বারাসত থানার পুলিশ এখনও পর্যন্ত প্রায় ৪ জনকে গ্রেফতার করেছে। ধৃতদের বাড়ি বারাসতের কাজীপাড়া এলাকায়।