রাজ্য

জম্মু-কাশ্মীরে শিক্ষার্থীদের সূর্য নমস্কারের নির্দেশ, সমালোচনা বিরোধিদের

টিডিএন বাংলা ডেস্কঃ সুস্থতাকে শিখণ্ডি করে ফের সাম্প্রদায়িক বিভাজনের খেলায় নামল বিজেপি। তার জন্য বেছে নেওয়া হল জম্মু-কাশ্মীরকে। যেখানে বেশিরভাব বসবাসকারীই মুসলিম। “জীবনশক্তির জন্য সূর্য নমস্কার” কেন্দ্রের এই নির্দেশিকায় তোলপাড় কাশ্মীর। কোনও না কোনও ভাবে বিজেপিকে প্রায় সর্বত্রই সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করতে দেখা গেছে। কোনও রাজনৈতিক সমাবেশ হোক কিংবা কোনও সাধারণ সভা সর্বত্রই বিভাজনের রাজনীতি করতেই অভ্যস্থ গেরুয়া শিবির। এবারেও ব্যতিক্রম হল না।

ধর্মের নামে, সুস্থতার পাঠ পরানোর নামে এবার মকর সংক্রান্তির দিন জম্মু-কাশ্মীরের সকলকে সূর্য নমস্কার করতে হবে বলে নির্দেশিকা জারি করে কেন্দ্র সরকার। এদিকে মকর সংক্রান্তি উপলক্ষে জম্মু ও কাশ্মীরের উচ্চ শিক্ষা দফতরের তরফে এইরকমই এক নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে, মকর সংক্রান্তি উপলক্ষে কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের সূর্য নমস্কার করতে হবে। শামিল হতে হবে শিক্ষকদেরও। এদিকে কাশ্মীরে যেখানে অধিকাংশই মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ বাস করেন, সেখানে কেন এই নির্দেশিকা! বহু মুসলিম সম্প্রদায়ের ছাত্র-ছাত্রী এবং শিক্ষকরা জানিয়েছেন, সূর্য নমস্কার করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। এটা তাঁদের বিশ্বাসের পরিপন্থী।

জম্মু ও কাশ্মীর উচ্চ শিক্ষা দফতরের কলেজের ডিরেক্টর নির্দেশিকায় বলেছেন, ‘১৪ জানুয়ারি ২০২২ এর মকর সংক্রান্তির পুণ্য তিথি উদযাপন করতে ভারত সরকার চেয়েছেন আজাদির অমৃত মহোৎসব উদযাপনের অন্তর্গত ভার্চুয়াল সূর্য নমস্কার করা হোক’। এই প্রোগ্রামের নাম দেওয়া হয়েছে “জীবনশক্তির জন্য সূর্য নমস্কার”। নির্দেশিকায় উল্লেখ করা হয়েছে, “অনুগ্রহ করে নিশ্চিত করবেন যাতে সবাই সাগ্রহে এই প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করেন।” এই ধরনের নির্দেশিকা এই প্রথম দেওয়া হল। খুব স্বাভাবিকভাবে কেন্দ্রের সমালোচনায় সরব হয়েছেন রাজ্যের একাধিক নেতা-নেত্রী থেকে ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষক সমাজ।

সরব হয়েছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি। ট্যুইট করে তিনি জানিয়েছেন, এটি সরকারের ‘পিআর বিভ্রান্তি’ এবং ‘সাম্প্রদায়িক মানসিকতার’ প্রতিফলন। ভারত সরকারের বিভ্রান্তিকর পিআর এর লক্ষ্য কাশ্মীরিদের হেয় করা এবং সম্মিলিতভাবে অপমান করা। ধর্মীয় বিশ্বাসকে আঘাত করে তাঁদের ইচ্ছের বিরুদ্ধে ছাত্র ও কর্মীদের সূর্য নমস্কার করতে বাধ্য করা তাঁদের সাম্প্রদায়িক মানসিকতার প্রমাণ দেয়’। সোচ্চার হয়েছেন, জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ও ন্যাশনাল কনফারেন্সের নেতা ওমর আব্দুল্লাহ। এক ট্যুইট বার্তায় বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে সরব হয়ে তিনি বলেছেন, ‘কেন মুসলিম ছাত্রদের মকর সংক্রান্তি উদযাপনের জন্য যোগব্যায়াম সহ কিছু করতে বাধ্য করা হবে? মকর সংক্রান্তি একটি উৎসব এবং এটি উদযাপন করা বা না করা অবশ্যই একটি ব্যক্তিগত পছন্দ। অমুসলিম ছাত্রদের ঈদ উদযাপন করার জন্য এই একই ধরনের আদেশ জারি হলে বিজেপি কি খুশি হবে’?

উমেশ তালাশি নামে এক ন্যাশনাল কনফারেন্সের যুব নেতা বলেছেন, যদি কোনও মুসলিম সম্প্রদায়ের মুখ্যমন্ত্রী সবাইকে রমজানের উপবাস রাখতে হবে বলে নির্দেশিকা জারি করেন, তাহলে সকলের কি প্রতিক্রিয়া হবে?

উল্লেখ্য, পৌষ সংক্রান্তি বা মকর সংক্রান্তি বাঙালি সংস্কৃতিতে একটি বিশেষ উৎসবের দিন। বাংলা পৌষ মাসের শেষের দিন এই উৎসব পালন করা হয়। এই দিন বাঙালিরা বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজন করে থাকে। ভারতীয় জ্যোতিষ শাস্ত্র অনুযায়ী ‘সংক্রান্তি’ একটি সংস্কৃত শব্দ, এর দ্বারা সূর্যের এক রাশি থেকে অন্য রাশিতে প্রবেশ করাকে বোঝানো হয়ে থাকে। ১২টি রাশি অনুযায়ী এরকম সর্বমোট ১২টি সংক্রান্তি রয়েছে।             সূত্র- পুবের কলম পত্রিকা

Related Articles

Back to top button
error: