লখিমপুর খেরি কেসে আশিস মিশ্রের জামিন বাতিল করল সুপ্রিম কোর্ট

টিডিএন বাংলা ডেস্ক: গতবছর উত্তরপ্রদেশে কৃষকদের হত্যার দায়ে অভিযুক্ত কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অজয় মিশ্র টেনির ছেলে আশিস মিশ্রের জামিন বাতিল করল সুপ্রিম কোর্ট। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই তাঁকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছে শীর্ষ আদালত। উত্তরপ্রদেশ নির্বাচনের প্রচার চলাকালীন ১০ ফেব্রুয়ারি আশীষ মিশ্রের জামিনের আবেদন মঞ্জুর করে এলাহাবাদ হাইকোর্ট। ছেলে জামিনে মুক্ত হওয়ার পরে নিজের নির্বাচনী প্রচার শুরু করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও উত্তর প্রদেশের শক্তিশালী বিজেপি নেতা অজয় মিশ্র।
এরপর উচ্চ আদালতের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয় উত্তরপ্রদেশের লখিমপুর খেরিতে নিহত কৃষকদের পরিবার। কৃষক পরিবারের ওই আবেদন গ্রহণ করে এদিন শীর্ষ আদালত জানিয়েছে হাইকোর্টের রায় “অপ্রাসঙ্গিক পর্যবেক্ষণ” এবং “প্রাসঙ্গিক বিবেচনা উপেক্ষা করা”-র ওপর ভিত্তি করে দেওয়া হয়েছিল। এদিন রায় ঘোষণা করার সময় বিচারপতি সূর্যকান্ত তীক্ষ্ণ ভাষায় বলেন,”এই ধরনের একটি ফৌজদারি বিচার প্রক্রিয়ায় ভুক্তভোগীর অবারিত অংশগ্রহণমূলক অধিকার রয়েছে।”
শীর্ষ আদালতের বিচারপতি আরো বলেন,”আমরা মনে করি যে ভুক্তভোগীদের কার্যকর শুনানির সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। ভুক্তভোগীদের শুনানির জন্য অস্বীকৃতি এবং উচ্চ আদালত যে তাড়াহুড়ো দেখিয়েছে তা জামিনের আদেশ বাতিল করার যোগ্যতা রাখে।”
প্রসঙ্গত, আশিস মিশ্রর বিরুদ্ধে লখিমপুর খেরিতে তিনটি বিতর্কিত কৃষি আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ চলাকালীন ৪ কৃষক এবং একজন সাংবাদিকের ওপর গাড়ি চালানোর অভিযোগ রয়েছে। ৩ অক্টোবর এই ঘটনা ঘটার বেশ কয়েকদিন পরেও উত্তরপ্রদেশ পুলিশ এবং প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় ক্ষোভে ফেটে পড়েন সাধারণ মানুষ। এরপরেই বাধ্য হয়ে গ্রেফতার করা হয় আশিষ মিশ্রকে।
এদিন সুপ্রিমকোর্টে কৃষকদের পরিবারের তরফ থেকে জমা দেওয়া আবেদন পত্রে বলা হয়, আশিস মিশ্রর জামিন বাতিল হওয়া উচিত কারণ তিনি সাক্ষীদের প্রভাবিত করতে পারেন। এর আগে মার্চ মাসে একজন সাক্ষীর উপরে আক্রমণ করা হয় এবং সাম্প্রতিককালে উত্তরপ্রদেশ নির্বাচনে বিজেপি’র জয়ের কথা উল্লেখ করে হামলাকারীরা ওই সাক্ষীকে হুমকি দিয়েছিল বলেও অভিযোগ করা হয়েছে।
অন্যদিকে, উত্তরপ্রদেশ সরকারের তরফ থেকে এই ঘটনাটিকে একটি ‘গুরুতর অপরাধ’ বলে অভিহিত করা হলেও আশীষ মিশ্রের জামিন ঝুঁকিপূর্ণ নয় বলেই দাবি করা হয়েছে। রাজ্যের তরফ থেকে নিযুক্ত আইনজীবী মহেশ জেঠমালানি এদিন শীর্ষ আদালতে জানিয়েছেন, “অপরাধটি গুরুতর। অপরাধ ইচ্ছাকৃত অভিপ্রায়ে ছিল কিনা তা, শুধুমাত্র বিচার পর্যায়ে পরীক্ষা করা যেতে পারে। অপরাধের উদ্দেশ্য একটি সংক্ষিপ্ত বিষয়, শুধুমাত্র বিচার পর্যায়ে আলোচনা করা যেতে পারে।”একইসঙ্গে উত্তরপ্রদেশ সরকারের তরফ থেকে নিযুক্ত আইনজীবী এদিন আদালতে জানিয়েছেন, সাক্ষীদের নিরাপত্তাব্যবস্থা দেওয়া হয়েছে তাই কোনভাবেই তাদের প্রভাবিত করা সম্ভব নয়। শুধু তাই নয়, মহেশ জেঠমালানি এদিন আরো জানান, আশীষ মিশ্র তাঁর অপরাধের পুনরাবৃত্তি করেননি। যদি তিনি অপরাধের পুনরাবৃত্তি করে থাকতেন তাহলে তাকে জামিন দেওয়া উচিত নয়।
উল্লেখ্য, ৩ অক্টোবর লখিমপুর খেরি কান্ডে মোট আটজন মারা গিয়েছিলেন। আশীষ মিশ্রের গাড়িতে পাঁচজন পিষ্ট হয়ে মারা যাওয়ার পরে যে সহিংসতা শুরু হয় তাতে বিজেপি কর্মী সহ আরও তিনজনের মৃত্যু হয়।