HighlightNewsদেশ

“চাঞ্চল্য সৃষ্টি করবেন না”, হিজাব মামলায় জরুরিভিত্তিক শুনানির আবেদন প্রত্যাখ্যান করল সুপ্রিম কোর্ট

টিডিএন বাংলা ডেস্ক: হিজাব ইস্যুতে কর্ণাটক হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে জরুরিভিত্তিক শুনানির আবেদন প্রত্যাখ্যান করল সুপ্রিম কোর্ট। মামলাকারিদের তরফ থেকে আইনজীবী দেবদত্ত কামাত ছাত্রছাত্রীদের ২৪ শে মার্চ পরীক্ষা শুরু হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরলে প্রধান বিচারপতি এদিন জানিয়েছেন, “বিষয়টিকে চাঞ্চল্যকর করে তুলবেন না”।

মুসলিম ছাত্রী ঐশাত শিফার তরফ থেকে আইনজীবী দেবদত্ত কামাত এদিন আদালতে এই বিষয়টিকে জরুরি তালিকাভুক্ত করতে চেয়েছিলেন। তিনি উল্লেখ করেন পরীক্ষার্থীরা হিজাব পড়ে স্কুলে গেলে তাদের পরীক্ষা দিতে দেওয়া হচ্ছে না। তিনি এও উল্লেখ করেন যে, ২৪ মার্চ থেকে পরীক্ষা শুরু হচ্ছে এবং কর্তৃপক্ষ হিজাব পরে প্রবেশের অনুমতি না দেওয়ায় শিক্ষার্থীদের এক বছর নষ্ট হবে।এর জবাবে প্রধান বিচারপতি এদিন জানান,”পরীক্ষার সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই। বিষয়টিকে চাঞ্চল্যকর করে তুলবেন না।” একইসঙ্গে এই বিষয়ে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতার হস্তক্ষেপ গ্রহণ করতে অস্বীকার করেন প্রধান বিচারপতি।

প্রসঙ্গত, ১৬ মার্চ সুপ্রিম কোর্ট হোলির পরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিজাব নিষিদ্ধের বিষয়ে কর্ণাটক হাইকোর্টের আদেশ কে চ্যালেঞ্জ করে আবেদন গুলি তালিকাভুক্ত করতে সম্মত হয়েছিল। ১৫ মার্চ কর্ণাটক হাইকোর্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভেতরে হিজাবের ওপর রাজ্য সরকারের নিষেধাজ্ঞা বহাল রেখে জানিয়েছিল যে, এটি “ইসলামিক বিশ্বাসের অপরিহার্য ধর্মীয় অনুশীলন নয়।” হিজাবের ইস্যুকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার এবং এ নিয়ে আলোড়ন তৈরি করা হচ্ছে বলে উচ্চ আদালত জানিয়েছিল,”কিছু অদেখা হাত সামাজিক অস্থিরতা এবং বৈষম্য তৈরী করতে কাজ করছে।”

এর আগে বুধবার দেশের শীর্ষ আদালত জানিয়ে দেয় হোলির ছুটির পরে মামলার শুনানি হতে পারে তার আগে নয়। কারণ আদালতের কাছে আরো অন্য জরুরি মামলা আছে। এদিকে কর্ণাটক হাইকোর্টের হিজাব সংক্রান্ত রায়ের পর অনেক মুসলিম ছাত্রী কলেজে ক্লাস করতে পারছেন না। এমনকি সামনে পরীক্ষাতেও তাঁরা কীভাবে বসবেন তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। গতকালই “দ্য কুইন্ট” পত্রিকাকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে উদুপির এক ছাত্রী জানিয়েছিলেন, হিজাব পরার অনুমতি দেওয়া না হলে বাধ্য হয়ে তাঁকে কলেজ থেকে টিসি নিতে হবে। উদুপির একটি মুসলিম সংগঠনের হিসেব অনুযায়ী এখনো পর্যন্ত চার হাজারের বেশি ছাত্র-ছাত্রী পোশাক-আশাক নিয়ে তৈরি হওয়া বিতর্কের জেরে পড়াশোনা ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। যদিও সরকারি হিসাব অনুযায়ী গোটা কর্নাটকে মাত্র ৪০০ জন ছাত্র-ছাত্রী হিজাব বিতর্ককে কেন্দ্র করে কলেজে আসা বন্ধ রেখেছেন।
মঙ্গলবার ভারতীয় সংবিধানের ২৫ নম্বর ধারার কথা উল্লেখ করে কর্ণাটক উচ্চ আদালতের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ জানায়, হিজাব পরা ইসলাম ধর্ম বিশ্বাসে বাধ্যতামূলক ধর্মীয় অনুশীলন নয়। এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন আন্দোলনকারী ছাত্রীরা। বুধবার এই মামলাটির জরুরী ভিত্তিতে শুনানির জন্য সুপ্রিমকোর্টে অনুরোধ জানান প্রবীণ আইনজীবী সঞ্জয় হেগড়ে। এই মামলাটি কেন জরুরী ভিত্তিতে শোনা দরকার সেই প্রসঙ্গে মুসলিম ছাত্রীদের সমস্যার কথা উল্লেখ করে সঞ্জয় এদিন আদালতে বলেন,”মামলাটি আগে শোনা জরুরী, কারণ হাজার-হাজার ছাত্রী এই রায়ের জন্য অপেক্ষা করে রয়েছেন। যাতে তাঁরা কলেজে যেতে পারেন।”প্রবীণ আইনজীবীর এই সওয়ালের জবাবে শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতি এনভি রমন জানান,”আরো অনেকেই জরুরী ভিত্তিতে মামলা শোনার কথা বলেছেন আমরা এই মামলাটি হোলির ছুটির পরে শুনব।”
এদিন শীর্ষ আদালতে আইনজীবী সঞ্জয় হেগড়ে মামলাকারীদের পক্ষ থেকে যে পিটিশন দায়ের করেছিলেন সেখানে বলা হয়েছিল হাইকোর্ট মুসলিম এবং অমুসলিম ছাত্রীদের মধ্যে অকারণ বিভেদ তৈরি করছে যা, দেশের ধর্মনিরপেক্ষ ভাবনার বিরোধী। যে মৌলিক ভাবনা গুলির উপর ভিত্তি করে দেশের সংবিধান তৈরি হয়েছে তারও বিরোধী। একইসঙ্গে সুপ্রিম কোর্টে মামলাটি আগে শোনার প্রয়োজনীয়তা কেন রয়েছে সে প্রসঙ্গে উল্লেখ করা হয়, কলেজে ইতিমধ্যেই প্রিপারেটরি পরীক্ষা শুরু হয়ে গিয়েছে হিজাব বিতর্কের সমাধান না হওয়ায় মুসলিম ছাত্রীরা ক্লাস করতে পারছেন না এবং পরীক্ষাও দিতে পারছেন না।

Related Articles

Back to top button
error: