চাকরির প্রশিক্ষণ দিয়ে বেকারদের আশার আলো দেখাচ্ছেন তেহট্টের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট জীবনকৃষ্ণ বিশ্বাস

নিজস্ব প্রতিনিধি, টিডিএন বাংলা, নদীয়া: নদিয়ার সীমান্তবর্তী এলাকা তেহট্ট মহকুমা। নেই রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা। এখানকার দুঃস্থ মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের বহু টাকা ব্যয় করে সম্ভব হয়না কলকাতায় গিয়ে চাকরির কোচিং নেওয়া। পিছিয়েপড়া এই এলাকার ছাত্রছাত্রীদের চাকরির স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে এসেছে নদিয়ার তেহট্ট মহকুমা প্রশাসন। আইএএস, ডব্লিউবিসিএস সহ অন্যান্য প্রতিযোগীতামূলক পরীক্ষার জন্য বিনামূল্যে কোচিংয়ের ব্যবস্থা করেছেন তেহট্টের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট জীবনকৃষ্ণ বিশ্বাস। করোনা পরিস্থিতির মাঝেই গত বছর নভেম্বরে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে অফিসে যোগ দেন তিনি। তারপরেই প্রত্যন্ত এই এলাকার বেকারদের পরীক্ষায় পাঠ দেওয়ার ভাবনা নেন। আর একাজে তাঁর পাশে থেকে উৎসাহ দিচ্ছেন মহকুমা শাসক মৌমিতা সাহা।

চলতি বছরের জানুয়ারি মাস থেকেই কোচিং এ শুরু হয় ভর্তি। ২৫৬ জন ছাত্রছাত্রীকে নিয়ে ‘দিশারী’ নামে হোয়াটসআপ গ্রূপ বানিয়ে এতদিন অনলাইনেই চলছিল ক্লাস। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতেই মহকুমা শাসকের দফতরের সভাকক্ষে রবিবার থেকে কোভিড বিধি মেনে তিনি শুরু করেছেন অফলাইন কোচিং। আর প্রথম দিনেই স্যারের মোটিভেশনাল বক্তব্যে নতুন করে জীবনের দিশা পাচ্ছেন প্রত্যন্ত গ্রামের যুবক-যুবতীরা। এতদিন অনলাইনে ক্লাস হত। আর এখন স্যারকে ক্লাসে দেখছেন সামনে থেকে। আর তাতেই নিজেদের মনোবল ফিরে পেয়েছেন তেহট্টের প্রিয়াঙ্কা নাথ, নজরুল সেখ, সায়নি বিশ্বাস, সায়নি বিশ্বাস, মহিষবাথানের সুস্মিতা মন্ডল, নাজিরপুরের মন্দ্বীপ বিশ্বাসরা। তবে শুধুই তাত্ত্বিক উপদেশ দিয়ে নয়, বাস্তবিক অর্থেই জীবনে আশার আলো দেখাচ্ছেন জীবনবাবু

ক্লাসের অভিজ্ঞতা থেকে সত্রাজিত পাল, মেবেবুব রেজাদের বক্তব্য, ‘বর্তমান বেকারত্বের বাজারে আমাদের আর কিছু হবে না ভেবে কি সময় হতাশায় ভুগতাম। স্যারের ক্লাস আমাদের সেই ধারণা পাল্টে দিয়েছে।’ তেহট্টের শুভজিত দে’র কথায়, শুরু থেকে স্যারের কাছে প্রশিক্ষণ নিয়ে মনে হচ্ছে, আমিও কিছু করতে পারি।’ বিষয়ভিত্তিক পড়ুয়াদের ঘাটতি মেটাতে উপস্থিত থাকছেন বিশেষজ্ঞ শিক্ষকরাও।

এখানেই থেমে নেই জীবনবাবুর উদ্যোগ। প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন মানেই যে সবাই চাকরি পাবেন এমন নয়। তাদের কথা ভেবে কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে তাদের বিভিন্ন ঋণ পাইয়ে দিয়ে ব্যবসারও পরামর্শ দিচ্ছেন তিনি।

মহকুমার দায়িত্ত্ব সামলে কিভাবে তিনি একাজ করছেন তিনি?বিনাপারিশ্রমিকে অবসাদগ্রস্থ বেকার যুবক-যুবতীদের আত্মবিশ্বাস ফেরানোর দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে রবিবারের ছুটির দিনটাকেই ছাত্রছাত্রীদের জন্য বরাদ্দ রেখেছেন তিনি। সকাল ১১টা থেকে বিকাল ৩টে পর্যন্ত টানা ক্লাসে ব্যস্ত থাকেন তিনি। তবে শুধুই তাত্ত্বিক উপদেশ দিয়ে নয়, বাস্তবিক অর্থেই জীবনে আশার আলো দেখাচ্ছেন জীবনবাবু।

তিনি বলেন, “সীমান্তবর্তী তেহট্ট মহকুমার প্রত্যন্ত এলাকার ছেলেমেয়েরা গ্রাজুয়েশন পাশ করার পরে পরবর্তী কর্মজীবন সম্পর্কে যাতে দিশাহারা হয়ে না পড়ে, সেই লক্ষ্যেই তাঁদের বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য মানসিক ভাবে প্রস্তুত করতেই মহকুমা স্তরে এই প্রশিক্ষণের আয়োজন। ছাত্রছাত্রীদের সাড়াও পাচ্ছি ব্যাপক।” আগামীতে ব্লকে ব্লকে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালুর ভাবনা রয়েছে। আর একাজে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

২০১৩ সালে প্রথম বীরভূমের লাভপুরে বিডিও হিসেবে যোগদেন জীবন কৃষ্ণ বিশ্বাস। সেখান থেকেই তিনি উপলব্ধি করেন ছাত্রছাত্রীদের জন্য কিছু করার। যারা অনেক টাকা খরচ করে চাকরির পরীক্ষার কোচিং নিতে পারে না। সেখানে বিডিও থাকাকালীন দীর্ঘদিন ধরে তিনি এভাবেই প্রশিক্ষণ দিয়ে এসেছেন এলাকার দুঃস্থদের। তাদের মধ্যে অনেকেই এখন বিভিন্ন প্রতিযোগিমূলক পরীক্ষায় সাফল্যের সাথে কৃতকার্য হয়ে বিভিন্ন সরকারি পদে কর্মরত।

জীবনকৃষ্ণবাবুর বাড়ি উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁয়। দুই সন্তান স্ত্রী নিয়ে এসডিও-র কোয়ার্টারেই থাকেন তিনি। লাভপুরের বিডিও-র দায়িত্ত্ব সামলে পরে বিষ্ণুপুরের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট হোন। বাঁকুড়ার ডিস্ট্রিক্ট নোডাল অফিসারের দায়িত্ত্বও সামলেছেন তিনি। গত এক বছর থেকে জীবনবাবু তেহট্টের উপ-শাসক ও উপ-সমাহর্তা হিসেবে কর্মরত। কাব্যচর্চা, নাট্য অভিনয়, শর্টফিল্ম পরিচালনার পাশাপাশি বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজের সঙ্গেও যুক্ত তিনি। জীবনকৃষ্ণ বাবুর এই অভাবনীয় উদ্যোগে খুশি এলাকার শিক্ষানুরাগী অভিভাবকরাও।