টিডিএন বাংলা ডেস্ক: ওড়িশার বালাসোরে ২ জুন সন্ধ্যায় ট্রেন দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৮৮, আহত হয়েছেন ৯০০ জনেরও বেশি। এই দুর্ঘটনায় জড়িত দুটি ট্রেনেই কবচ সুবিধা বা স্বয়ংক্রিয় ব্রেকিং সিস্টেম ছিল না। বিশেষজ্ঞদের মতে, কবচ ব্যবস্থা থাকলে বালাসোর দুর্ঘটনা রোধ করা যেত।
এক বছর আগে, ৪ মে, সেকেন্দ্রাবাদ জোনে রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব রেল দুর্ঘটনা প্রতিরোধে ইঞ্জিনগুলিতে সুরক্ষা ঢাল দেওয়ার ঘোষণা করেছিলেন কিন্তু, তারপর থেকে ভারতীয় রেল কবচ সুবিধা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। ভারতীয় রেল চলতি আর্থিক বছরে সারা দেশে ৫ হাজার কিলোমিটার রুটে এই সিস্টেম ইনস্টল করতে চায়।
তবে, সারা দেশের ১৯টি রেলওয়ে জোনের মধ্যে সেকেন্দ্রাবাদ জোন ছাড়া আর কোনো জোনে কবচ বসানোর প্রক্রিয়া শুরু করা যায়নি। দেশে বর্তমানে মোট ১৩,২১৫টি বৈদ্যুতিক লোকোমোটিভ রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ৬৫টি লোকো ইঞ্জিনে কবচ সিস্টেম ইনস্টল করা হয়েছে।
এই ডিভাইসটি ইঞ্জিনের পাশাপাশি ট্র্যাকেও ইনস্টল করা হয়। এলাকায় দুটি ট্রেন বা লোকোমোটিভ আসার সাথে সাথে এই সিস্টেম চালু হয় এবং ইঞ্জিন ব্রেক করা শুরু করে। যার ফলে বিপদ হওয়ার আগেই ট্রেন থেমে যায়। রেলওয়ে বোর্ডের দাবি, এই সংকেতের কারণেই দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
দক্ষিণ মধ্য রেলওয়ের চলমান প্রকল্পগুলিতে, ১,০৯৮ কিলোমিটার রুট এবং ৬৫টি লোকোমোটিভে এই কবচ ডিভাইস ব্যবহার করা হয়েছে। এটি দক্ষিণ মধ্য রেলওয়ের প্রায় ১২০০ কিলোমিটার রুটে বিদর-পার্লি, বৈজনাথ-পারভানি এবং মনমাদ-পারভানি-নান্দেড-সেকেন্দ্রাবাদ-গাদওয়াল-ধোন-গুন্টকাল সেকশনে কাজ করছে।
এই ট্রেন দুর্ঘটনা প্রসঙ্গে, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, আমার মতে, রেলের সমন্বয়হীনতার কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে। আমি যখন রেলমন্ত্রী ছিলাম, তখন আমরা ট্রেনের জন্য অ্যান্টি-কলিশন ডিভাইস তৈরির কাজ শুরু করেছিলাম। আমি যতদূর জানি, করোমন্ডল এক্সপ্রেসে এই ডিভাইসটি ছিল না। এই শতাব্দীর সবচেয়ে বড় ট্রেন দুর্ঘটনা, এর পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত হওয়া উচিত।
অন্যদিকে, ওড়িশায় ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনার পর, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বালাসোরে পৌঁছে উদ্ধার অভিযানের খবর নেন। এরপর তিনি হাসপাতালে পৌঁছে আহতদের অবস্থা জানতে চান। এই সময় প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, ‘এটি একটি খুব বেদনাদায়ক এবং বিরক্তিকর দুর্ঘটনা, আমার কাছে এই ব্যথা প্রকাশ করার ভাষা নেই, ঈশ্বর সবাইকে শক্তি দিন, যাতে তারা দুঃখের সময় কাটিয়ে উঠতে পারে।”
তিনি আরও বলেন, “এ ঘটনায় যারা দোষী প্রমাণিত হবে তাদের রেহাই দেওয়া হবে না এবং কঠোরতম শাস্তি দেওয়া হবে”। এর আগে, ঘটনাস্থল থেকে মোবাইল ফোনে কথা বলতেও দেখা গেছে প্রধানমন্ত্রী মোদিকে। বলা হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী মোদি সরাসরি ফোনে ক্যাবিনেট সেক্রেটারি ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মনসুখ মান্ডাভিয়ার সঙ্গে কথা বলে জনগণের সু-চিকিৎসার ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেন।
এদিকে, এই দুর্ঘটনার সময় ঘটনাস্থলে পৌঁছে স্থানীয় লোকজনের বিরুদ্ধে চুরি ও মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনতাইয়ের অভিযোগও উঠেছে। আবার অন্যদিকে, মানবতার এক নতুন নিদর্শনও দেখা গেছে। দুর্ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তেই বালাসোর হাসপাতালে ভিড় জমাতে শুরু করেন রক্তদাতারা। সকাল পর্যন্ত প্রায় পাঁচশ ইউনিট রক্ত জমা পড়ে।