HighlightNewsদেশ

জাহাঙ্গীরপুরিতে আপাতত স্থগিত থাকবে দখল বিরোধী অভিযান, সুপ্রিম নির্দেশ

টিডিএন বাংলা ডেস্ক: জাহাঙ্গীরপুরিতে উত্তর-দিল্লি মিউনিসিপাল কর্পোরেশনের দখল বিরোধী অভিযান আপাতত স্থগিত রাখার নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট। এই মামলার শুনানি হবে দু’সপ্তাহ পরে। অর্থাৎ আগামী দু’সপ্তাহ দিল্লির জাহাঙ্গীরপুরিতে দখল বিরোধী অভিযান করতে পারবে না উত্তর-দিল্লি পুরসভা। এদিন সুপ্রিমকোর্ট আরো জানিয়েছে, অবৈধ নির্মাণ বুলডোজারের সাহায্যেই ভেঙে ফেলা হয় এবং গোটা দেশে এধরনের পদক্ষেপের ওপর স্থগিতাদেশ জারি করা সম্ভব নয়। সুপ্রিম কোর্টের আদেশের পর এটা স্পষ্ট যে আপাতত দু সপ্তাহ জাহাঙ্গীরপুরিতে বুলডোজার চালিয়ে দখল বিরোধী অভিযান না চললেও দেশের অন্যান্য অংশে যেমন উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ সহ গোটা দেশে অবৈধ নির্মাণ ভাঙার প্রক্রিয়ায় কোনরকম প্রভাব পড়বে না। তবে, গতকাল সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া স্থগিতাদেশের পরেও আরো দু’ঘন্টা ধরে যে দখল বিরোধী অভিযান চলছে সে প্রসঙ্গে এদিন আদালত জানিয়েছে, আদেশ দেওয়া সত্ত্বেও দখল বিরোধী অভিযান অব্যাহত ছিল, যেখানে মেয়রকে এ বিষয়ে জানানো হয়েছিল। আমরা এই বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করছি। এই বিষয়ে পরে কথা হবে।

এদিন আদালতে জাহাঙ্গীরপুরি মামলায় বুলডোজারের বিরুদ্ধে দায়ের করা আবেদনের পক্ষে যুক্তি দিয়ে আইনজীবী দুষ্যন্ত দাভে বলেন, সকাল ন’টা থেকে কাজ শুরু করে দেওয়া হয়েছিল এটা জেনেও যে আমরা এই মামলাটি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে যাব। স্থিতাবস্থা বজায় রাখার নির্দেশ সত্ত্বেও কার্যপ্রণালী অব্যাহত ছিল। আপনারা ঘর ভেঙে দিয়েছেন? আপনাদের এর জন্য দায়ী করা উচিত? ওরা সবাই গরিব মানুষ ছিল। দক্ষিণ দিল্লির যে কোনো কলোনিতে আপনি যান, তাদেরও গলফ লিংক রয়েছে। সেখানেও প্রায় প্রতিটি ঘর অবৈধ। আপনারা সেগুলি ভাঙতে চান না।

আইনজীবী দুষ্যন্ত দাভে আরো বলেন, আপনারা মানুষদের বিনা নোটিশে হঠাতে পারেন না। এটা জঙ্গলের আইন আর আমরা এর বিরুদ্ধে। যদি আপনারা অবৈধ নির্মাণের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে চান তাহলে আপনারা সৈনিক ফার্মে যান, গলফ লিংকে যান। আপনারা ওদের ছুঁতে চান না আর গরিবদের নিশানা করছেন। বিজেপির অধ্যক্ষ একটি চিঠি লিখে দিলেন মেয়রকে আর বিনা নোটিশে প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেল। আবেদনকারীদের পক্ষে যুক্তি দিয়ে এদিন বরিষ্ঠ আইনজীবী কপিল সিবল বলেন, আপনারা অবৈধ দখলদারিকে কোনো একটি নির্দিষ্ট কমিউনিটির সঙ্গে জুড়তে পারেন না। এটা কোন একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের মধ্যে সীমিত নয়। আপনারা শুধুমাত্র এটা বলে ঘর ভেঙে দিতে পারেন না যে এটা বেআইনি দখলদারি। এভাবে নয়, বুলডোজারের সাহায্যে নয়। আমরা এর ওপরে স্থগিতাদেশ চাই।
এর জবাবে বিচারপতি নাগেশ্বর রাও বলেন, অবৈধ নির্মাণ বুলডোজারের মাধ্যমে ভাঙ্গা হয়। আমরা গোটা দেশে বেআইনি দখলদারির বিরুদ্ধে হওয়া পদক্ষেপের বিরুদ্ধে স্থগিতাদেশ দিতে পারিনা।

এদিন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহেতা বলেন, কেউ আসেনি কারণ তাদের নোটিশ দেওয়া হয়েছিল‌। হঠাৎ করে অর্গানাইজেশন আসতে শুরু করে। আমি আপনাকে এর উদাহরণ দিতে পারি যেখানে নোটিশের প্রয়োজন পড়ে না এবং এখানে তো অবৈধ নির্মাণ সরানোর জন্য নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। জাহাঙ্গীরপুরির ব্যবসায়ীরা গতবছর হাইকোর্ট গিয়েছিলেন এবং হাইকোর্ট বেআইনি দখলদারি হঠানোর নির্দেশ দিয়েছিল। নোটিশ সেকশনে বিল্ডিং মেটিরিয়াল অন্তর্ভুক্ত নয়। কমিশনার নিজের বিবেক অনুসারে ঠেলাগাড়ি, চেয়ার ইত্যাদি বিনা নোটিশে সরাতে পারেন। এর জবাবে বিচারপতি নাগেশ্বর রাও বলেন, গতকালের দখল বিরোধী অভিযান কি শুধু চেয়ার, টেবিল এবং ঠেলাগাড়ি সরানোর জন্য ছিল? একইসঙ্গে বিচারপতি বি আর গাভাই বলেন, এইসব সরানোর জন্য আপনাদের একটি বুলডোজার দরকার ছিল? দুই বিচারপতির বেঞ্চ আরো বলে, আমাদের নির্দেশ সত্ত্বেও জাহাঙ্গীরপুরিতে দখলের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত ছিল, যেখানে উত্তর-দিল্লি মিউনিসিপাল কর্পোরেশনের মেয়রকেও এবিষয়ে জানানো হয়েছিল। আমরা এই বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করছি। এই বিষয়ে পরে কথা হবে। দুই বিচারপতির বেঞ্চ এদিন আরো জানায়, এ বিষয়ে সমস্ত পক্ষকে নোটিশ পাঠানো হবে।

এর পরিপ্রেক্ষিতে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহেতা বলেন, আপনারা যদি সবাইকে গুরুত্ব দেন, তাহলে প্রত্যেকে নিজের সুবিধার জন্য এই বিষয়ে ঝাঁপিয়ে পড়বে। এর জবাবে দুই বিচারপতির ওই বেঞ্চ জানায়, আমরা জানি কোথায় থামতে হবে। এরপর সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহেতা বলেন, এই আদালতের কয়েকজন আইনজীবীও পিটিশন দায়ের করেছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি নাগেশ্বর রাও আবেদনকারীদের জিজ্ঞাসা করেন, এই বিষয়ে এত পিটিশন কেন? একজনের আবেদনই যথেষ্ট। এর জবাবে আইনজীবী দুষ্যন্ত দাভে বলেন, মানুষের মধ্যে ভয় রয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে শীর্ষ আদালত জানায়, আমাদের জন্য একজনের আবেদনই যথেষ্ট। আগামী দু’সপ্তাহ জাহাঙ্গীরপুরিতে কোনো দখল উচ্ছেদের ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। আমাদের পুরনো আদেশ বজায় থাকবে।

Related Articles

Back to top button
error: