HighlightNewsদেশ

গুজরাট দাঙ্গায় বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের প্রমাণ মেলেনি শীর্ষ কোর্টে বলল সিট

টিডিএন বাংলা ডেস্ক : ২০০২ সালের গুজরাত দাঙ্গা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে নিজেদের তদন্তের স্বপক্ষে ‘যুক্তি’ পেশ করল বিশেষ তদন্তকারী সংস্থা বা ‘সিট’। গুজরাত দাঙ্গার মামলা এখন সুপ্রিম কোর্টের বিচারাধীন। বৃহস্পতিবার এই মামলার শুনানির সময় শীর্ষ আদালতকে সিট বলেছে, ২০০২ সালের গুজরাত দাঙ্গার পিছনে যে বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তোলা হয়েছে তা ‘বাস্তবের থেকে অনেক বেশি’ করে দেখানো হয়েছে। অর্থাৎ, পরোক্ষভাবে সিট বুঝিয়ে দিতে চাইল গুজরাত দাঙ্গার পিছনে বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের যে অভিযোগ তোলা হয়েছে তার বিশেষ ভিত্তি নেই। একইসঙ্গে সিট দাবি করেছে, “রাজ্য সরকারের একেবারে উপরতলা থেকে নীচে পর্যন্ত অনেক ব্যক্তির বিরুদ্ধেই তারা তদন্ত করেছে। কিন্তু, বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের কোনও প্রমাণ তারা পায়নি।” সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি এ এম খান উইলকরের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চের সামনে এই মন্তব্য করেন সিটের আইনজীবী মুকুল রোহতোগি।

উল্লেখ্য, ২০০২ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি আহমদাবাদের গুলবার্গ সোসাইটিতে সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় নিহত কংগ্রেস সাংসদ এহসান জাফরির স্ত্রী জাকিয়া জাফরির করা মামলায় এই মন্তব্য করেছে সিট। গুজরাত দাঙ্গায় তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সহ মোট ৬৪ জনকে ‘ক্লিনচিট’ দিয়েছিল সিট। তার বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন জাকিয়া জাফরি। ‘রাজ্যের মদদে দাঙ্গা’র যে শব্দবন্ধ ব্যবহার করা হচ্ছে তা নিয়েও এদিন আদালতে ব্যাখ্যা দিয়েছেন রোহতোগি। রোহতোগির প্রশ্ন, “রাজ্য মদদপুষ্ট দাঙ্গা বলে কি বোঝানোর চেষ্টা হচ্ছে? এর অর্থ কি এটাই যে— প্রশাসন ও রাজনৈতিক দলের লোকরাই এই দাঙ্গায় মদদ দিয়েছে? সিট মুখ্যমন্ত্রী থেকে শুরু করে তৎকালীন রাজ্য মন্ত্রিসভার অনেক হেভিওয়েট সদস্য থেকে করে নীচে পর্যন্ত, পুলিশ-প্রশাসনেরও একেবারে উপরমহল থেকে শুরু করে নীচুতলা পর্যন্ত জেরা ও তদন্ত করেছে। এমনটা নয় যে, মুখ্যমন্ত্রী বা কোনও হেভিওয়েটকে তাঁরা জেরা করেননি। সমস্ত দিকগুলি খতিয়ে দেখা হয়েছে। তারপর রিপোর্ট তৈরি করে তা নিম্ন আদালতে পেশ করা হয়।”

হিংসার সময় সেনা নামানোয় অযথা বিলম্ব করা হয়েছিল বলে যে অভিযোগ উঠেছে তাও উড়িয়ে দিয়েছেন রোহতোগি। তিনি বলেন, “একই দিনে সেনা তলব করা হয়েছিল এবং মোতায়েন করা হয়েছিল। যা পুলিশ বা রাজ্য সরকার, রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে ‘বৃহত্তর ষড়যন্ত্র’র অভিযোগকে নস্যাৎ করেছে।” অন্যদিকে, জাকিয়া জাফরির আইনজীবী তথা প্রবীণ কংগ্রেস নেতা কপিল সিব্বল আদালতে পালটা বলেন, “দেশের আইন অনুমতি দিয়েছে যদি নতুন কোনও তথ্য প্রমাণ সামনে আসে সেটা দেখতে হবে। তাই বলে তদন্ত প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছে এটা বলা যায় না।” একইসঙ্গে তিনি জানান, “২০০২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারির ঘটনার মিটিংয়ের বিষয় নিয়ে তিনি জানতে চাইছেন না, শুধুমাত্র যে ঘটনাগুলি সামনে এসেছে এবং যে ঘটনাগুলি সিট দেখেনি তার তদন্ত হোক।”

উল্লেখ্য, এর আগের শুনানির সময় জাকিয়া জাফরির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছিলেন তাঁরা। তাঁর সাংসদ স্বামী এবং ৬৮ জন গুলবার্গ সোসাইটিতে সেদিন নিহত হয়েছিলেন। সেইদিন পুলিশ প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা, বিদ্বেষ ভাষণ এবং দাঙ্গাবাজদের আদিম-অপ্রতিরোধ্য হিংসার ছবি দেখা গিয়েছিল। ২০১২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি সিট ক্লোজার রিপোর্ট জমা দেয় এবং নরেন্দ্র মোদি সহ ৬৩ জনকে ‘ক্লিনচিট’ দেয় এবং সিট জানায় তাদের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগের প্রমাণ নেই। সেই মামলার পুনরায় তদন্তের দাবিতে শুনানি চলছে সুপ্রিম কোর্টে।

Related Articles

Back to top button
error: