স্কুলছুটদের বিদ্যালয়ে ফেরাতে পড়ুয়াদের দুয়ারে প্রধান শিক্ষক জানে আলম

নিজস্ব প্রতিনিধি, টিডিএন বাংলা, ফরাক্কা: দীর্ঘ ২০মাস পর ১৬নভেম্বর রাজ্যের স্কুলে নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণীর পঠন-পাঠন চালু হলেও অনেক স্কুলে পড়ুয়াদের উপস্থিতির হার সন্তোষজনক না হওয়ায় উদ্বিগ্ন শিক্ষক মহল। সেই সব স্কুলছুটদের বিদ্যালয়ের আঙিনায় ফেরাতে উদ্যোগী হলেন ফরাক্কার নূর জাহানারা স্মৃতি হাই মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক জানে আলম।

‘কোন ভয় পাবেন না। আপনাদের বাচ্চাদের মাদ্রাসায় পাঠান। সরকারি নির্দেশ মেনে বিদ্যালয়গুলো সানিটাইজ করে কোভিড বিধি মেনে শিক্ষন প্রক্রিয়াটা চালু করেছি, সামনে বোর্ডের পরীক্ষা’ বাড়ি বাড়ি গিয়ে অভিভাবকদের এভাবেই কাতর আবেদন জানাচ্ছেন ওই মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক।

কোভিড পরিস্থিতির জন্য ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিশ্ব। শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং জীবনের সর্বস্তরে এর ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। বিশেষ করে শিক্ষার জগতে কোভিডের প্রভাব সবচেয়ে বেশি। এই ভয়ানক পরিস্থিতিতে শিক্ষাকে অন্ধকার থেকে বের করে আলোর দিশা দিতে সরকার সুষ্ঠু পরিকল্পনা নিয়ে নবম-দ্বাদশ শ্রেণীর জন্য পঠন পাঠন শুরু করেছে। শিক্ষার সেই ক্ষত ও ক্ষতিটা কত বৃহৎ, স্কুল খোলার দিন তিনেকের মধ্যেই সেটা মর্মে মর্মে অনুভব করছেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা।

সমস্যা মূলত গ্রামাঞ্চলেই বেশি। দীর্ঘ বিশ মাস ধরে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রায় অচল হয়ে পড়েছিল। কোথাও কোথাও অনলাইন ক্লাস দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করা হলেও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে সরাসরি সাক্ষাৎ না হওয়ায় উভয় পক্ষই অসন্তুষ্ট ছিল।

বেশিরভাগ শিক্ষকদের ধারণা ছিল যে গ্রামে অনলাইন ক্লাস তেমন ভালো নয়, তাই স্কুল শুরু হওয়ার সাথে সাথেই ছাত্র-ছাত্রীরা দলে দলে উপস্থিত হবে। কিন্তু বাস্তবে অনেক বিদ্যালয়ে উপস্থিতির হার যথেষ্ট কমই ছিল।

নূর জাহানারা স্মৃতি হাই মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক জানে আলম বলেন, ” দীর্ঘ দিন পর পঠন পাঠান চালু হলো। সামনে বোর্ড পরীক্ষা। শিক্ষার্থীরা এমনিতেই পড়াশোনায় ব্যাপক ঘাটতি বহন করেছে। আমার মাদ্রাসায় পড়ুয়া উপস্থিতির হার দেখে মাথায় হাত। এ অবস্থায় আমরা একসঙ্গে দুটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে পারি। প্রথমত শিক্ষার্থীদের স্কুলে আসার অভ্যাসে ফিরতে হবে। এবং দ্বিতীয়ত তাদের শিক্ষার ঘাটতি অবিলম্বে পূরণ করতে হবে।

কিন্তু কেন তারা স্কুল আসছে না, বটতলা, মুস্কিনগর, শিবতলা, মহেশপুর, এনায়েত নগর, মরেজপুর মহাদেব নগর এই সব গ্রাম গুলি আজ ঘুরে নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানাচ্ছেন প্রধানশিক্ষক, ইতিমধ্যে বেশ কিছু ছাত্র-ছাত্রীর বিয়ে হয়ে গিয়েছে। বেশ কিছু পড়ুয়া কাজে যুক্ত হয়ে গেছে। দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকায় অনেক ছাত্রছাত্রী টিউশনের উপরে বেশি মাত্রায় নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। কিছু অভিভাবক অনিহাও প্রকাশ করেছেন।

তিনি আরো বলেন, পরীক্ষা ব্যবস্থা একেবারে গুরুত্বহীন নয় এবং স্কুল আসা জরুরি এই কথা বোঝানোর পাশাপাশি পড়ুয়া ও অভিভাবকদের কাউন্সেলিং দরকার। সেই জন্যই অভিভাবক এবং শিক্ষা অনুরাগী ব্যক্তিদের কাছে আবেদন জানাতে দুয়ার দুয়ারে ঘুরছি।