রাজ্য

ত্রাণ নিয়ে বিধ্বস্ত বাংলার মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে ভাষা ও চেতনা সমিতি

নিজস্ব প্রতিনিধি, টিডিএন বাংলা, সুন্দরবন: ইয়াস ঘূর্ণিঝড় ও কোটালের জলে বিধ্বস্ত বাংলার মানুষের পাশে ভাষা ও চেতনা সমিতি অতীতের মতোই পাশে দাঁড়িয়েছে। প্রথম দফায় সুন্দরবনের দুই দুর্গম এলাকা কুমীরমারী ও বড়ো মোল্লাখালি এবং নিজেরা বাঁধরক্ষাকারী রাণীপুরে পাঠানো হয়েছে লক্ষাধিক টাকার ত্রাণসামগ্রী। গঙ্গাসাগর জিপ্লটের চারটি গ্রামে ত্রাণ যাবে বলেও জানা গেছে।

দুটি যৌথ রান্নাঘর চালানো শুরু হচ্ছে সুন্দরবনের দুর্গম বড় মোল্লাখালি ও রাণীপুরে।
রাণীপুরে গ্রামবাসীদের সহযোগিতায় বাঁধ রক্ষা করা হয়েছে। সুন্দরবনের আরেকটি দুর্গম অঞ্চল কুমীরমারীতে ত্রাণ পাঠানো হয়েছে। পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতায় সোমবার সকাল থেকে তা বিলি করা শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে।

সমিতির পক্ষে জানানো হয়েছে, বড়ো মোল্লাখালিতে যৌথ রান্নাঘর শুরু হয়েছে ২৭ মে থেকে।
সর্দার পাড়া ও গাজীপাড়ার মানুষদের নিয়ে। জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে একসঙ্গে রান্না ও খাওয়ার কাজ চলছে। একত্র ভোজন লক্ষ্য। এখানে চাল ডাল সরষে তেল আলু পেঁয়াজ নুন লঙ্কা হলুদ আদা রসুন পাঠানো হয়েছে। ১০০ টি পরিবার এখানে খাচ্ছেন। আপাতত ১০ দিনের খাবার সামগ্রী পাঠানো হয়েছে। পাঠানো হয়েছে অক্সিমিটার।
সুন্দরবনের দুর্গম এলাকা কুমীরমারীতে দেওয়া হয়েছে চাল ডাল আলু নুন পেঁয়াজ দেশলাই
এবং অক্সিমিটার‌।
সুন্দরবনের রাণীপুরে স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে তিন দিন ধরে।
সেখানে চাল ডাল আলু পেঁয়াজ নুন দেশলাই মুখোশ দেওয়া হয়েছে। এখানে আজ থেকে শুরু হচ্ছে যৌথ রান্নাঘর। রাণীপুরের বাঁধে ম্যানগ্রোভ গাছ লাগানো হবে জানা গেছে।
ভাষা ও চেতনা সমিতির এই ত্রাণে দানশীল আলমগীর ফকির সাহেব সহায়তা করেছেন। অক্সিমিটার পাঠানো গেছে মালবিকা চক্রবর্তী ও আরিফা নাহিদের সহায়তায়।

ভাষা ও চেতনা সমিতির পক্ষে ইমানুল হক জানিয়েছেন, সোমবার গঙ্গাসাগর ও মৌসুনী দ্বীপেও গিয়েছে। সেখানেও চলছে যৌথ রান্নাঘর। সেই রান্নাঘর চালানোয় ভূমিকা নেওয়ার জন্য মানুষের কাছে আবেদন জানিয়েছেন। এরপর নামখানা ও হিঙ্গলগঞ্জে ত্রাণ পাঠানো হবে। এছাড়া মানিকতলা খালপাড়ে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে যে পাঠশালা চালায় ভাষা ও চেতনা সমিতি তার ২৩৫ জন শিশু ও কিশোরীর ২৩১ টি পরিবারকে সাপ্তাহিক রেশন দেওয়া হবে বুধবার।

প্রসঙ্গত, গত ২২ বছর ধরে দেশে বিদেশে ত্রাণের কাজ করেছে ভাষা ও চেতনা সমিতি। ১৯৯৯ এ ওড়িশা ত্রাণ, ২০০০এ মুর্শিদাবাদ, বাগদায় বন্যাত্রাণ, ২০০১এ উল্টোডাঙ্গায় অগ্নিদগ্ধ বসতিতে পোশাক দান, ২০০২এ টালিগঞ্জে এলাকায় যৌথ রান্নাঘর, ২০০২এ গুজরাট গণহত্যার পর গুজরাটে ত্রাণ নিয়ে যাওয়া,
২০০৯ আয়লা বিধ্বস্ত সুন্দরবনে ২৩ টি গ্রামে খাবার পোশাক, বইখাতা, স্যানিটারি ন্যাপকিন বিলি, বাগবাগানে ২৩ দিন রান্নাঘর চালিয়েছে ভাষা ও চেতনা সমিতি।

২০১৫ সালে নেপালে ভূমিকম্প বিধ্বস্ত এলাকায় গিয়ে ত্রাণ দেওয়া হয়েছে। কাশ্মীরে বন্যায় পাঠানো হয়েছে ত্রাণ। ২০১৭এ বন্যাত্রাণে হুগলি, হাওড়া, মালদহ, রায়গঞ্জ, ইটাহারের ৩০ টির বেশি এলাকায় ত্রাণসামগ্রী, পোশাক, বইখাতা, রঙিন পেন্সিল, ধূপ, স্যানিটারি ন্যাপকিন দেওয়া হয়েছে। ২০১৮ কেরালায় ত্রাণ সামগ্রী পাঠানো হয় ২০২০ সালে আমফান ও করোনা ত্রাণ।

কলকাতা, হাসনাবাদ, হিঙ্গলগঞ্জ, রাঙাবেলিয়া এলাকায় ১২ হাজারের বেশি মানুষকে ত্রাণবিলি করা হয়। ছয়টি যৌথ রান্নাঘর চালানো হয় হাসনাবাদে। ২০২০ সেপ্টেম্বরে অগ্নিদগ্ধ নারকেল ডাঙ্গা খালপাড়ে ১৪ দিন যৌথ রান্নাঘর চালানো হয়। সবাইকে দেওয়া হয় নতুন পোশাক, মাদুর, নতুন তুলোর বিছানা, মশারি। ২০২১ অগ্নিদগ্ধ বাগবাজারে শিশু কিশোর কিশোরীদের শীতের পোশাক, বইখাতা ও ফল এবং বিরিয়ানি দেওয়া হয়।

Related Articles

Back to top button
error: